২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পরিবেশ বির্পযয় ঘটাচ্ছি আমরাই

পরিবেশ বির্পযয় ঘটাচ্ছি আমরাই। - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণে পৃথিবীতে সর্বোচ্চে রয়েছে বলে গবেষণায় জানা যাচ্ছে। শুধু মানুষ কেন পৃথিবীর প্রতিটি জীব বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনই প্রধান উপাদান। সমুদ্র তলদেশেও মাছসহ সব জলজ প্রাণী অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না। জীব সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল প্রত্যেকটি জীব এবং (বায়ুমণ্ডলে) নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত প্রত্যেকটি পাখি তোমাদের মতোই এক একটি জাতি’ (সূরা আল-আনআম, আয়াত-৩৮) আল্লাহ আরো বলেন, ‘তৃণলতা ও বৃক্ষাদি (আমাকে) সিজদা করে’ (সূরা আর-রাহমান, আয়াত-৬) এতে বোঝা যায়, নিশ্চয় তাদের প্রাণ বা জীবনী শক্তি রয়েছে, নতুবা তারা আল্লাহকে সিজদা করে কিভাবে? অথচ এই ‘বায়ু’ আজ দূষিত হয়ে পড়েছে। পারমাণবিক বোমা ছাড়াই বিশুদ্ধ বায়ু আজ হুমকির মুখে, বহু মানুষ এখন জটিল জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যা মোকাবেলা করতে দেশের চিকিৎসক বা চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে অকাল মৃত্যু দিন দিনে বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে পঙ্গু খোড়াতো রয়েছেই।

মানুষ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে পৃথিবীর পরিমণ্ডলে বাস করে। এই পারিপার্শ্বিক অবস্থাই মানুষের পরিবেশ। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলতে আমাদের চার পাশের আকাশ, বাতাস, মাটি, পানি, গাছপালা এবং জীবজন্তু, পশুপাখিকে বোঝায়। পরিবেশের এই উপাদানগুলোই মানুষকে প্রভাবিত করে পরিবেষ্টিত রাখে। প্রতিটি মানুষের নিজের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ আছে, যাকে জীব-পরিবেশ বলা হয়। এই জীব-পরিবেশের সাথে পারিপার্শ্বিক ‘ভৌত পরিবেশের’ সুনিয়ন্ত্রিত মিথস্ক্রিয়ার ফলে পৃথিবীর পরিমণ্ডলে মানুষের প্রাণপ্রবাহ স্থায়ী হয়। আদিম মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতি (বা সমন্বয়) রেখে বাস করত, কিন্তু জীবনধারার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানুষের দ্বারা প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে। ফলে সৃষ্টি হয় ‘মানুষের তৈরি পরিবেশ’। এ ছাড়া মানুষ সামাজিক প্রাণী তাই ‘সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ’ ও মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই মানব-পরিবেশ বলতে প্রাকৃতিক, মনুষ্য সৃষ্ট এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশকেই বোঝায়।

প্রতিটি জীবের একটি স্বতন্ত্র পরিপার্শ্ব বা মাধ্যম রয়েছে, যার সঙ্গে জীব সম্পূর্ণভাবে অভিযোজিত এবং অবিরাম মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত। এই পরিপার্শ্বই হলো জীবের ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ’। প্রাকৃতিক পরিবেশের উদাহরণ হিসেবে স্থলভাগের, পানির, মরুভূমির এবং হিমালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রতিটি প্রাকৃতিক পরিবেশ অন্যের থেকে পৃথক, কারণ প্রতিটি পরিবেশের মৃত্তিকার গঠন, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং জীবগোষ্ঠীর প্রভাব স্বাতন্ত্র্য। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় ‘সজীব উপাদান’ এবং ‘অজীব উপাদান’।

প্রচলিত ব্যবস্থায় অর্থনীতির সঙ্গে প্রকৃতির দ্বন্দ্ব এবং বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন ধারণা এ সব দ্বন্দ্বের নিরসন এবং বিষয়গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিবিষ্ট। বর্তমান প্রজন্মকে এমনভাবে তাদের আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওদের আর্থ-সামাজিক প্রয়োজন যথাযথভাবে মেটাতে পারে। টেকসই উন্নয়ন ধারণাটি এখন শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পরিপূরণের জন্য বর্তমান প্রজন্মের ভোগ সীমিতকরণকেই বুঝায় না; বরং এটি এও নির্দেশ করে যে. সংখ্যালঘিষ্টের অ-টেকসই ভোগের কারণে বর্তমান প্রজন্মের অবশিষ্ট জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। অতএব টেকসই উন্নয়নের আর একটি মাত্রা হচ্ছে আন্তঃ ও অন্তঃ প্রজন্মগত সমতা।

উন্নয়নের নামে তিন ফসলি জমি অকাতরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা টেকসই উন্নয়নের পরিপন্থী। উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে জনগণের Necessity কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পদ্মা সেতু একটি জনবান্ধব প্রকল্প। কিন্তু আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে পূর্বাচলে ও রূপগঞ্জ উপজেলায় কায়েতপাড়া, রূপগঞ্জ, ভোলাবো, দাউদপুরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পুঁজিপতি ও আমলাদের বিলাশবহুল প্রাসাদ বা উন্নয়ন প্রকল্প বানানোর জন্য তিন ফসলি জমি বালু দ্বারা ভরাট করে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়েছে শুধু উচ্চ শ্রেণীর লোকদের মনোরঞ্জনের জন্য, যাদের মধ্যে অনেকেরই বিদেশে সাহেব পাড়া ও বেগম পাড়ায় বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বহুবার তিন ফসলি জমি বালু দিয়ে ভরাট করার জন্য নিষেধ করেছেন। সে নিষেধাজ্ঞায় ন্যূনতম কোনো গুরুত্ব পায়নি। এ মর্মে ভূমিদস্যুরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে মানছে না। গত ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিন ফসলি জমিতে উন্নয়ন প্রকল্প না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী অঅবারো নির্দেশ জারি করেছেন, ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পত্রিকান্তরে প্রকাশ পেয়েছে যা নিম্নরূপ :

‘দেশের তিন ফসলি জমিতে কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এই নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কাছ থেকে তিন ফসলি জমিতে উন্নয়ন ও স্থাপনা তৈরির কাজের জন্য আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। সোলার প্যানেল থেকে শুরু করে ভবন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, কোনো তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না এবং এগুলোতে প্রকল্প নেয়া যাবে না। এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।’

রাষ্ট্রগুলো তার প্রাকৃতিক সম্পদের সম্প্রসারণ ও ব্যবহার টেকসই পদ্ধতিতে করবে, এ সাধারণ নীতিটির আবির্ভাব হয়েছে তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিককালে। যদিও টেকসই উন্নয়ন নীতিটির মূল ধারণা বহু দিন ধরেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দলিলে স্বীকৃত হয়ে আসছিল, এমনকি টেকসই উন্নয়ন এ প্রপঞ্চটি ১৯৮০ সাল থেকেই বিভিন্ন চুক্তিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তথাপি পরিবেশ আইনের সুনির্দিষ্ট নীতি হিসেবে টেকসই উন্নয়নের সাধারণ নীতিটি প্রথম ১৯৯২ সালে আইনি কাঠামোয় আসে। টেকসই উন্নয়নের ধারণাটি ১৯৮৭ সালে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রান্টল্যান্ড রিপোর্টের মাধ্যমে প্রথম এসেছে বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদাকে কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না করে বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলে দু’টি ধারণা পাওয়া যায়। প্রথমটি হচ্ছে প্রয়োজনের ধারণা। এর অর্থ হচ্ছে, বিশেষ করে, বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অপরিহার্য প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। দ্বিতীয় ধারণাটি হচ্ছে প্রকৃতিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। রাষ্ট্র বা জনগোষ্ঠী উভয় কর্তৃক প্রকৃতির ব্যবহারই এ ধারণার অন্তর্ভুক্ত হতে হবে একটি টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে।

বায়ুদূষণসহ প্রকৃতির ওপর আঘাত হানাকে প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৭২ সালে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও ১৯৯২ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ঊবধৎঃয ঈড়হভবৎবহপব বা ধরিত্রী সম্মেলনে সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এবং এর বিধি-১৯৯৭ এবং ২০০০ সালের আইনকে পরিবর্তন করে পরিবেশ আদালত-২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও উল্লিখিত কারণসহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় সরকার ও রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। উল্লেখ্য, রাষ্ট্র ও সমাজের উচ্চ পর্যায়ের পুঁজিপতিরা সরকারের ছত্রছায়ায় পরিবেশকে ধ্বংস করছে। তাদের মোকাবেলা করতে ভুক্তভোগী জনগণ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে অসহায়।
এ আইনের বিধানাবলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পরিবেশ আদালত স্থাপিত হয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের জন্যই জনসাধারণের জন্য নয়। পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করার প্রাথমিক দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের এবং মামলা তদন্তও করবে পরিবেশ অধিদফতর। আইনে প্রত্যেক জেলায় পরিবেশ আদালত স্থাপনের বিধান থাকলেও কার্যত পরিবেশ অধিদফতরের অফিস রয়েছে কেবল ২২টি জেলায়। তাই দফতর ও লোকবলের অনুপস্থিতি এবং অপ্রতুলতা সব জেলায় পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠাকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। পরিবেশ আদালত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইন অনুসারে পরিবেশ আদালত বিচার কাজ পরিচালনা করবে। বিদ্যমান এসব আইনানুযায়ী অভিযোগকারীকেই অভিযোগ প্রমাণ করতে হয়, তাকেই অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষ্যপ্রমাণ আনতে হয় যা অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কর হয়ে পড়ে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রভাবশালী দূষণকারীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। কারিগরি বিষয়ে সাক্ষ্য সংগ্রহ করতে প্রশাসনিক সহযোগিতা দরকার। সহযোগিতার অভাবে সাক্ষ্য সংগ্রহ করা যায় না, তাই অভিযোগও প্রমাণ করা যায় না। এতসব সঙ্কটের মধ্যে সাধারণ মানুষ মামলা দায়েরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

এই আইনের ধারা ৪ অনুযায়ী, যুগ্ম-জেলা জজ পর্যায়ের একজন মাত্র কর্মকর্তা দিয়েই পরিবেশ আদালত গঠিত হবে। অথচ পরিবেশ একটি বিশেষ বিষয় যাতে পরিবেশগত প্রভাব, ক্ষতি ইত্যাদি নিরূপনে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা আবশ্যক। এই গুরুত্ব অনুভব করেই ভারতে প্রতিষ্ঠিত National Green Tribunal এ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার পাশাপাশি সমানসংখ্যক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নিয়ে Tribunal গঠন করার কথা বলা হয়েছে National Green Tribunal Act, 2010 এ।

তিনটি পরিবেশ আদালতের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৩ সাল থেকে ঢাকা বিভাগীয় পরিবেশ আদালত কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ আদালতে মামলা দায়ের বা নথিভুক্ত হয়েছে ৪৬৭টি, নিষ্পত্তি হয়েছে প্রায় ৩৫০টি; তন্মধ্যে ৭৩টি মামলা উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে বদলি করা হয়েছে আর চলমান আছে প্রায় ১১৭টি মামলা। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে (জুন পর্যন্ত) এ আদালতে মাত্র একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্য দিকে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ আদালত ২০০২ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ আদালতে মামলা দায়ের বা নথিভুক্ত হয়েছে প্রায় ৩৫৫টি; তন্মধ্যে প্রায় ২৫০টি মামলাই বিচারাধীন আছে। ২০০৫ সাল থেকে সিলেট যুগ্ম জেলা জজ আদালত পরিবেশ আদালত হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করে এবং ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ আদালতে মামলা দায়ের বা নথিভুক্ত হয়েছে ৪৬৭টি, তন্মধ্যে ৩০০টি মামলাই বিচারাধীন আছে। মামলার অপ্রতুলতার কারণে পরিবেশ আদালতগুলোতে এখন সাধারণ দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচারকার্য পরিচালিত হচ্ছে।

ঢাকায় অবস্থিত দেশের একমাত্র পরিবেশ আপিল আদালত ২০০৫ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে এবং ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ আদালতে বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৪৩টি আপিল দায়ের হয়েছে তন্মধ্যে ২০১৪ সালে কোনো আপিল দায়ের হয়নি এবং ২০১৫ সালে (জুন পর্যন্ত) মাত্র একটি আপিল দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশের পরিবেশ আদালতগুলোতে বছরে গড়ে ৮০টি করে মামলা দায়ের করা হয় যেখানে নিউইয়র্ক শহরের Environmental Control Board এ বছরে গড়ে মাত্র সাত লাখ মামলা দায়ের হয়! বিশ্ব পরিসংখ্যানে আমাদের পরিবেশ আদালতের মামলার হার সর্বনিম্ন।

The World Commission on Environment and Development Report G ejv n‡q‡Q, ÔPoverty itself pollutes the environment, creating environment stress in different way’ অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ হওয়ার মূল কারণ দরিদ্রতা, বিভিন্নভাবে তা পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। Brundtland Report (1987) এ বলা হয়েছে, ‘Inequality is the planets main environmental Problem’ অর্থাৎ ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য পরিবেশ ধ্বংসের বীজ বপন করে।

আন্তর্জাতিক চাপে এবং জাতিসঙ্ঘের নির্দেশনায় পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত আইন ও পরিবেশ আদালত-২০১০ আইনগুলো সরকার প্রণয়ন করেছে বটে, কিন্তু সেখানে বিচার প্রর্থী হওয়ার এখতিয়ার সরকারের হাতেই রয়েছে। পরিবেশ আদালতে জনগণ বাদি হয়ে মামলা করার সুযোগ নেই। অন্য দিকে ভুক্তভোগী জনগণ অসহায় এবং পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কে অসচেতনার ফলে জনগণ আইনের সুফল পাচ্ছে না। জনগণের মধ্যেও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষা সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টি করা আবশ্যক। পরিবেশ আদালতে বিচার প্রার্থী হওয়ার জন্য জনগণকে সরাসরি বাদি/দরখাস্তকারী হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। পরিবেশ অধিদফতর যেহেতু নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ সেহেতু অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার অনুমোদিত ব্যক্তির ওপর পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে বাদি হওয়ার একক ক্ষমতা থাকা একটি হাস্যকর বিষয়!

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement