১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


তীব্র তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, পুড়ছে ক্ষেতের ফসল

- ছবি - নয়া দিগন্ত

একটানা তীব্র তাপদাহের কারণে মির্জাগঞ্জের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। প্রতিদিন তাপমাত্রা যেন বেড়েই চলছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষেরা। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। তাপদাহের মাঝে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না।

তীব্র গরমে অতিষ্ঠ দিনমজুর, রিকশা-অটোচালক, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ ও কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। শ্রমিকরা কাজ না করতে পেরে ঘরে বসে আছে।

তারা জানান, এই কাঠফাটা গরমে কাজে নামতে পারছে না, কাজ পেলেও আগের মতো করতে পারে না। আবার ঘরের ভেতরেও শান্তি নেই, গরমের কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিয়ে অনেকেই অসুস্থ বোধ করছেন। এদিকে টানা খরার কবলে পুড়ে যাচ্ছে রবি মৌসুমের ক্ষেত-খামার-ফসল। পোল্ট্রি ব্যবসা-পশুপালনকারীর পড়েছেন আরো দুর্ভোগে। অতিরিক্ত গরমে মারা যাচ্ছে পোল্ট্রি মুরগি।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১০৩টি পল্ট্রি ফার্ম, গবাদি পশুর খামার (হাসঁ-মুরগী-গুরু-ছাগল-মহিষ) রয়েছে ৪৫টি।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার ডা. মো: আলাউদ্দীন মাসুদ বলেন, এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে কোন পশু মারা যাওয়ার খবর পওয়া যায়নি। তবে পোল্ট্রি ফার্মের তীব্র তাপদাহে কিছু প্রাণীর ক্ষতি হতে পারে।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো: মোসলে উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় মাছের সমস্যা হচ্ছে। তবে উপজেলা উত্তর রানীপুর গ্রামের এক চাষীর পুকুরের মাছ মরে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাকে খাল থেকে সেচ দিয়ে পুকুরে পানি বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তীব্র তাপদাহ ও খড়ার কারণে পুড়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসল।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রবি মৌসুমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মির্জাগঞ্জ উপজেলায় বোরো ধান চাষ হয়েছে ৩২০ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে উফশী বোরো ধান চাষ হয়েছে ২৮০ হেক্টর জমিতে ও হাইব্রিড বোরো ধান চাষ হয়েছে ৪০ হেক্টর জমিতে। চলমান তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ক্ষতির পরিমান ১.৬০ হেক্টর।

এছাড়াও এ বছর উপজেলায় মুগডাল চাষ হয়েছে ৫২০০ হেক্টর জমিতে। চলমান তাপদাহ, লেদা পোকার আক্রমণ ও অনাবৃষ্টির কারণে মুগের ফলন ১৫% হ্রাস পাবে।

এ বছর মরিচ চাষ হয়েছে ৩৮০ হেক্টর জমিতে। তাপদাহ, অনাবৃষ্টি, মাকড় ও শোষক পোকার আক্রমণ ও ভাইরাসজনিত কারণে মরিচের ফলন ৬০ শতাংশ হ্রাস পাবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ নাহিদ হাসান জানান, তীব্র তাপদাহে ক্ষেতের মুগের ফলন কমবে ৯৩৫ টন, মরিচের ফলন কমবে ৪৫৬ টন ও বোরোর ফলন কম হবে ১৫ টন। কৃষকদের বোরো ধানের জমিতে ২-৩ ইঞ্চি পানি ধরে রাখা, মুগের জমিতে, মরিচের জমিতে সেচ দেয়া ও পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় গত এক মাসে ৪৮৯ জন রোগী ডায়রিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৩৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে গতকালই ভর্তি হন ১৮ জন রোগী। শিশু-বৃদ্ধার সংখ্যাই বেশি। এ কারণেই জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। ডাক্তারের চেম্বারে ও হাসপাতালে দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর সিরিয়াল।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: তেন মং বলেন, তাপদাহের কারণে বাড়ছে হিট স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, খিচুনি ও ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই। যাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি। প্রচণ্ড গরমের এই সময় সবাইকে প্রচুর পরিমানে পানি খেতে হবে। আর যারা মাঠে কাজ করেন তাদের স্যালাইন, শরবত ও ডাবের পানি বেশি পরিমানে খেতে হবে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়া এবং বাইরের বিভিন্ন ধরনের খাবার না খাওয়ারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement