০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পারস্পরিক দোষারোপে লিপ্ত হকি সংশ্লিষ্টরা

আম্পায়ারকে ঘিরে ধরাটা হকি লিগের নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে :সৌজন্য -

হকির নীল টার্ফের উত্তেজনা বেরিয়ে এসেছে বাইরেও। মাঠে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের হাতাহাতি হলেও এবার বাইরে কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মেরিনার্সের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে গত রোববার মোহামেডান ও মেরিনার্সের মধ্যকার খেলার সময় হকি ফেডারেশনের কার্যালয়ে অতর্কিত হামলার শিকার হন সাদা-কালোদের সহকারী ম্যানেজার সোহেল রানা। এ দিকে গত মঙ্গলবার মোহামেডান-ঊষার ম্যাচ নিয়ে উঠেছে পাতানোর গুঞ্জন। মোহামেডানকে সুবিধা দিতেই নাকি ঊষা পয়েন্ট ছেড়ে দিয়েছে। আর আম্পায়ারিং নিয়ে তো অভিযোগের শেষ নেই। পারস্পরিক দোষারোপ করছে আম্পায়ার-ক্লাব-খেলোয়াড়-ফেডারেশন।

হকি বর্জনের হুমকি মোহামেডানের!
গতকাল দুপুরে লিগ কমিটির কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছে মোহামেডান। চিঠির অভিযোগে জানা যায়, ওই দিন ফেডারেশনের সামনে মেরিনার্সের অফিসিয়াল ও হকি ফেডারেশনের সদস্য নাসিম রেজা মিজানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন বিনা উসকানিতে মোহামেডানের সহকারী হকি ম্যানেজার সোহেল রানার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তি না দিলে হকি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেবে।
সোহেল রানার লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে মোহামেডানের সভাপতি জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আবদুল মুবীনের সই করা চিঠিতে দেখা যায় মঙ্গলবার বেলা ১টা ১১ মিনিটে ফেডারেশনের রিসিভ কপি রয়েছে। অবশ্য লিগ কমিটির সম্পাদক খাজা তাহের লতিফ মুন্না চিঠি পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এখানেই থেমে থাকেনি। তিন হলুদ কার্ডে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছেন মোহামেডানের অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমি। ফলে আগামীকাল শুক্রবার আবাহনীর বিপক্ষে অঘোষিত ফাইনালে খেলতে পারবেন না তিনি। দু’টি বিষয়কে একই সূত্রে গাথা বলে মনে করছেন মোহামেডানের হকি কমিটির ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স, ‘মোহামেডানের সেরা খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমি। অথচ প্রিমিয়ার হকিতে আবাহনীর বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে পরিকল্পিতভাবে তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া গত রোববার ফেডারেশনের কার্যালয়ে মেরিনার্সের কর্মকর্তা অতর্কিত হামলা চালায় আমাদের সহকারী ম্যানেজার সোহেল রানার ওপর। দু’টি বিষয় একই সূত্রে গাথা। এ বিষয়ে আমরা লিগ কমিটির কাছে চিঠি দিয়েছি। জিমির সাসপেনশন প্রত্যাহার এবং সোহেল রানার ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে হকি সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম থেকে আমরা বিরত থাকব।’

পাতানো ম্যাচের গুঞ্জন
জমে উঠেছে হকি প্রিমিয়ার লিগ। আর এর নায়ক মেরিনার্স ইয়াংস ক্লাব। গ্রুপ পর্বে চারে থেকে লিগ শেষ করা মেরিনার্স সুপার লিগে আবাহনী, মোহামেডানকে ও ঊষাকে হারিয়ে শিরোপার দাবিদার হয়ে ওঠে। নিকটতম প্রতিদ্ব›ীদ্ব হয়ে ওঠে আবাহনী-মোহামেডান। মোহামেডানের কাছে ৬-৫ গোলে হেরে ছিটকে যায় ঊষা। তাতেই উঠে পাতানো ম্যাচের অভিযোগ। আবাহনী ও মেরিনার্সের দাবি মোহামেডানকে ছাড় দিয়েছে ঊষা। কয়েকটি কারণও উঠে আসে।
প্রথমত, মোহামেডানের ছয় গোলের চারটিতেই ছিল ঊষার গোলরক্ষক অসীমের একক কৃতিত্ব। ম্যাচের ভিডিওতে জাতীয় দলের গোলরক্ষকের ভূমিকার প্রমাণ মিলবে। দ্বিতীয়ত, ম্যাচ অফিসিয়ালদের তথ্যমতে, ম্যাচে চাপে থাকার সময়টিতে মোহামেডানের ম্যানেজার ঊষার ম্যানেজারের নাম ধরে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ওই... কি করতেছো, ফোন পাওনি। উত্তরে ঊষার ম্যানেজারকে বলতে শোনা যায়, দেখতেছি, একটু দাঁড়া। তৃতীয়ত, ম্যাচের শুরুর দুই মিনিটে দুই গোল হজমের পর গোলরক্ষকের ভূমিকা নিয়ে মাঠেই প্রশ্ন তোলেন ঊষার দেশী বিদেশী প্লেয়াররা। চতুর্থত, ম্যাচের শেষ ৪ মিনিটে যখন ২ গোল করে ঊষা কামব্যাক করে, মোহামেডান বেকায়দায়, ঠিক তখনই দিনের সেরা পারফর্মার ঊষার ভারতীয় খেলোয়াড়কে তুলে নেয়া হয় মাঠ থেকে।
ইত্যাদি কারণেই নাকি ম্যাচটি পাতানো স্পষ্ট হয়ে যায়। তবে ঊষার এক কর্মকর্তা জানান, হকি বেইজড ক্লাব ঊষা। তারা কখনো অন্যায়ের সাথে আপস করেনি, আর করবেও না। যেকোনো খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স প্রতিদিন একরকম থাকবে না, থাকেও না। ক্লাব কাপে আমরা মেরিনার্সের কাছে ৫-১ গোলে হেরেছিলাম। আবার লিগের গ্রুপপর্বে ৫-১ গোলে তাদের হারিয়েছি। শুধু কিপারের ওপর দোষ চাপালেই হবে না। দুই গোল হয়তো পরপর হজম করেছে তবে অনেকগুলো ভালো সেভও করেছে। বলতে পারেন দিনটি আমাদের ছিল না। তাই হেরেছি। এখানো পাতানো শব্দটি আসাই উচিত হয়নি। ঊষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই হয়তো এমনটি করছে।

আম্পায়ার যেন বিষের বাঁশি
তুচ্ছ কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা দৃষ্টিকটু ছিল। আম্পায়ারদের শক্ত হাতে পুরো সময়জুড়ে ম্যাচ পরিচালনা করতে বেশ বেগ পেতে হয়। তা ছাড়া দেশের সেরা আম্পয়াদের সিদ্ধান্ত ভিডিও রেফারেলে গিয়ে বদলে যাচ্ছে। একই ম্যাচে তিনবার বাংলাদেশের সেরা আম্পায়ারের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। তাতে ক্লাবগুলো খেলোয়াড়রা আরো বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পেয়েছে। অনেকেই মনে করছেন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাদের বাঁশি বাজানো উচিত।
আম্পায়ারদের দায়িত্ব সঠিকভাবে ম্যাচ পরিচালনা করা। সবসময় তারা চেষ্টাও করে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় এদিক-সেদিক হয়ে যায়। সেটা চাপে কিংবা অন্য কারণে। আম্পায়ার তো মানুষ। তবে অবাক হওয়ার বিষয় হলো রিভিউ দেয়ার পর অনেকেই যা সিদ্ধান্ত আসে তা মানতে চান না। সবাই শুধু নিজের পক্ষে সিদ্ধান্ত চান। আম্পায়ারদের সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিত্বে আরো দৃঢ় হবে বলে মনে করেন সাবেক বাংলাদেশের হকি আম্পায়ার জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লুর বড় ভাই আসলাম ওমর বেলিম। ‘আম্পায়ারদের যেকোনো সিদ্ধান্তে খেলোয়াড়রা সবাই মিলে জড়ো হচ্ছে, অনেক সময় ঘিরে ধরছে, আবার কর্মকর্তারাও যখন-তখন মাঠে ঢুকছে। এটা খুবই দৃষ্টিকটূ। মেনে নেয়া কঠিন। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে এমন হবে কেন? সব কিছু সুষ্ঠু হওয়া উচিত। ফেডারেশনের উচিত এই বিষয়গুলো আরও কঠোরভাবে মনিটরিং করা।’
কী করবে ফেডারেশন। মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ওমান থেকে আম্পায়ার এনে দিয়েছে। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ক্লাবগুলোর কথা, যে আম্পায়ার এনে দিয়েছে তাদের থেকে দেশী আম্পায়াররা অনেক ভালো। তারা মাত্র সবে ইন্টারন্যশনাল হয়েছে। আরো ভালো অভিজ্ঞ আম্পায়ার আনা উচিত ছিল। ঊষার এক ম্যাচে ভিডিও আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন লতিফ। নিয়ম যে পরিবর্তন হয়েছে তা তিনি জানতেনই না। কারণ বর্তমানে তিনি টাচে নেই। ফলে তার ডিসিশানে ঊষার গোল বাতিল হয়ে যায়। পরে নিয়ম জানলেও ঊষার যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে।
আম্পায়ারদের দাবি, প্রতিনিয়ত হকির নিয়ম পরিবর্তন হচ্ছে। ক্লাবগুলো পুরনো ধ্যান-ধারণায় রয়েছে। নতুন নিয়মের সাথে আপডেট নেই বলেই গেঞ্জাম হচ্ছে। সিদ্ধান্ত মানতে চাচ্ছে না। অযথা সময় কিল করছে, আম্পায়ারদের দোষারোপ করছে।

শিরোপার কাছাকাছি মেরিনার্স
গতকাল অ্যাজাক্সকে ৯-২ গোলে হারিয়েছে মেরিনার্স। এই জয়ে ১৪ খেলায় মেরিনারের সংগ্রহ ৩৪ পয়েন্ট। শীর্ষে থাকা মোহামেডানের চেয়ে ১ পয়েন্ট পিছিয়ে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মেরিনার্স। মোহামেডানের ৩৫, আবাহনীর ৩৪। একটি করে খেলা বাকি আছে সবার

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল