২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টাইগারদের ব্যাটিংয়ে অসহায়ত্ব

-

টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। আবুধাবিতে এ ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ উল্লাস করার মতো কোনো খোরাক জোগাড় করতে পারেনি। প্রতিপক্ষ আলাদা হলেও দৃশ্যপটে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেই একই ভুল, ইনিংসের সেই একই গতি-প্রকৃতি। সংবাদ সম্মেলনে ‘ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া’র কথা তোতা পাখির মতো আওড়ালেও বাস্তবে একই সূত্রে গাঁথা ব্যাট হাতে হতাশার চিত্রগুলো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে ১২৪ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস। জবাবে ইংল্যান্ড ১৪.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৮ উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে।
টাইগারদের শারীরিক কোনো ভাষা ছিল না। ব্যাট করার জন্যই যেন ব্যাট করেছেন। নিজেদের মধ্যে ছিল না সমন্বয়। প্রথম ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখার যে মনোবাসনা ছিল সেটির ধারে কাছেও যেতে পারেনি টিম বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সিনিয়র প্লেয়ারদের সবাই, হেড কোচ ডোমিঙ্গো, এমনকি নির্বাচকরাও বড় গলায় বলেছিলেন, ‘দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় আমাদের সাহস, আস্থা আর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। সে আত্মবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি।’ কিন্তু কোথায় সে আত্মবিশ্বাস। কোথায় সে আগ্রাসী চিন্তা। কোথায় সে জয়ের নেশা। কোথায় টাইগারদের হুঙ্কার। মিরপুরের স্লো উইকেটে খেলে বাস্তবে কী লাভ হয়েছে রিয়াদ-সাকিব-মুশফিকদের।
ইংল্যান্ডের নির্জীব ও মাঝারি মানের বোলিংয়ের বিপক্ষে এমন খাপছাড়া শ্রীহীন ব্যাটিং। এখানে ১৪৫-১৫০ রান হতে পারে ফাইটিং স্কোর। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি তাদের মধ্যে এ উপলব্ধি ছিল। যদি থাকতই তাহলে আরেকটু রয়ে সয়ে খেলতে চেষ্টা করতেন। তরুণদের রক্তগরম বলে কথা। তাই বলে যারা অভিজ্ঞ তারা কী করলেন। উনাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারলে ১৫০ রানের কাছাকাছি যেতে পারতেন।
সব মিলিয়ে ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ২৭ রানে তিনজন আউট। সেখান থেকে সামনে আগানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম ও রিয়াদের সামনে। নিজেদের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার সঙ্কটে বিপদে হাল ধরার নজির আছে তাদের। গতকালও সিঙ্গেল, ডাবলসে খেলে এগোচ্ছিলেন রিয়াদ আর মুশফিক। সাকিবের পর ভুল পথে হাঁটেন মুশফিকুর রহীম। যে স্কুপ শট নিয়ে তার এত সমালোচনা সেই শটেই বিপদ হলো তার। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে গেলেন। ৩০ বলে ২৯ রানে অপমৃত্যু হলো মুশফিকের।
১২.৪ ওভার। লিয়াম লিভিংস্টোনের লেগ স্পিন লেগে খেলে এক রানের জন্য দৌড় দেন রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। টাইমাল মিলস প্রথম দফায় বলটা ধরতে না পারায় আরেকটি রান নিয়ে দৌড় দেবেন কি দেবেন না তা ভাবতে কয়েক সেকেন্ড দ্বিধায় ভুগলেন। নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা অধিনায়ক ‘কল’ দিয়েছিলেন। আফিফ তাতে সাড়া দিয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বুঝলেন দৌড়টা ‘আত্মঘাতী’ হয়ে গেছে। ততক্ষণে মিলসের থ্রো স্ট্যাম্প ভাঙতে ভুল করেননি জস বাটলার।
সবচেয়ে দৃষ্টিকটু হয়েছে আউটের ধরনগুলো। লিটন দাস এমনিতেই রানের মধ্যে নেই। মঈন আলীর প্রথম ওভারে দু’টি দর্শনীয় চারে শুরু করা লিটন আত্মহত্যা করলেন। স্কয়ার লেগ এবং ডিপ মিডউইকেট সীমানায় দু’জন ফিল্ডার রেখে একটু ঝুলিয়ে বল ছেড়ে লিটনকে সুইপের লোভ দেখান মঈন। টোপটা গিলে লিটন (৯) ফিরলেন ক্যাচ দিয়ে। নাঈমের মাথায় কী খেলা করছিল কে জানে! মিড অন দিয়ে মঈনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট।
ইংল্যান্ডের ‘পার্ট টাইম’ লেগ স্পিনারকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন রিয়াদ (২৪ বলে ১৯)। যে মেহেদী হাসান ও নুরুল হাসানের শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার সামর্থ্য নিয়ে এত কথা হচ্ছে তারাও হতাশ করেছেন দ্রুত আউট হয়ে। তবে আসল ব্যাটিংয়ের গিটারটা বাজালেন স্পিনার নাসুম আহমেদ। ৯-এ নেমে ১৯তম ওভারে দুটো ছক্কা হাঁকান আদিল রশিদকে। সেটি বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম ছক্কা। টপ অর্ডার ব্যাটিং যা করতে পারেনি সেটাই করলেন নাসুম। ওই ওভারে উঠেছে ১৭ রান। তবু শেষটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। শেষ ওভারে ৫ রান নিয়ে শেষ দুই বলে ফিরেছেন নুরুল ও মোস্তাফিজুর রহমান।
টাইমাল মিলস, লিভিংস্টোন কিংবা মঈনের বোলিংয়ের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটিং চোখে বিঁধেছে বেশি। ৫২টি ডট বল। অর্থাৎ ৮.৪ ওভার! এমন হতশ্রী ব্যাটিংয়ে চোখের অশান্তি না হয়ে উপায় কী।


আরো সংবাদ



premium cement