২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আম্মু

-

মা, ও মা, আম্মু কিংবা কারোর নিকট আম্মা। যে যে নামেই ডাকি না কেন, এই তো এক জাদুকরি সম্বোধন। প্রশান্তির শেষ ঠিকানা। এ নাম আমাদের কত আপন। চৈত্রের দাবদাহে পিপাসার্ত মুসাফির যখন পানির দেখা পায়, অনুমান করতে পারো, সে মুসাফির কতটা খুশি হয়? মা তো আমাদের সন্তানদের দুঃখ পিপাসা নিবারণের এক আসমানি তোহফা।
খুব ছোটবেলায়, যখন আমার শৈশব সময় চলছে, বলতে গেলে তোমরা যারা দেখে দেখে পড়তে পারো- তাদের চেয়ে আমি তখন বয়সে ছোট। পড়তে জানি না! বাসায় থাকা বইপত্রগুলো কেবলই ঘাটতাম। আমার পিঠাপিঠি আরো দুই ভাইবোন ছিল। পড়তে না জানা আমাদের ভাইবোনদের আম্মু গোল করে বেষ্টনী দিয়ে বই পড়ে শোনাতেন। কখনো মজার মজার গল্প, কখনো ভয়ে গা হিম হয়ে যাওয়া গল্প শোনাতেন আম্মু। এমন অনেক গল্প ছিল, যা আম্মু আমাদের বারবার পড়ে শোনাতেন। আম্মুর বারবার পড়ে শোনানো এমন একটি গল্পের কথা আমাদের এখনো হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। গল্পের নামটি ছিল- ‘ডাকাতরাও মানুষ’। গল্পের মূল চরিত্রের নাম, কালু ডাকাত। ভয়ঙ্কর নাম। একেবারে গা ছমছম করে উঠত সে সময়। এ গল্পটি বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক, যার নাম- ইমদাদুল হক মিলন, তিনি লিখেছেন। গল্পটি সে সময় আমাদের শিশুমনে কিছুটা ভয়ের সৃষ্টি হলেও আমরা এ গল্পটি আম্মুর কাছে বারবার শুনতে চাইতাম। আম্মু নতুন গল্প শোনানোর মতো করে বালিশে মাথা ঠেকিয়ে আমাদের কালু ডাকাতের গল্প আবার শোনাতেন। বারবার শোনাতেন। কোনোদিন তিনি না করেননি। আমি আমার আম্মুকে সবসময় দেখেছি, শাসনে অত্যন্ত কঠোর। ভুল করলে আমাদের বকতেন। শাস্তি দিতেন। কিন্তু তার মনের মণিকোঠায় আমাদের জন্য কী যে এক অপরিসীম ¯েœহ আর ভালোবাসা ছিল, তা এখন কিছুটা অনুমান হয়। আমরা হামেশাই কোনো একটি ভুল করলে আমাদের আম্মুরা হয়তো বকেন, কখনো শাস্তি দেন। আমরা তাদের ওপর বিরক্ত হই। আমরা মনে করি, মা আমার আজন্ম শত্রু! কিন্তু সত্যি কি জানো? আমাদের মায়েরা যদি আমাদের ভুল শোধরানোর পদক্ষেপ না নিয়ে কেবলই আমাদের ছেড়ে দিতেন স্বাধীনতার অতল দিগন্তে! তবে আমাদের পথ হারানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি। আমার কথাই বলি, আমাকে আম্মু যদি না বকতেন, কিংবা অপরাধ করলে শাস্তির মুখোমুখি না করতেন, তাহলে আমি অন্য অনেকের মতো হারিয়ে যেতাম কোনো অপরিচিত সরু পথে। যে পথের শুরু আছে, শেষ নেই। সেবার আব্বু মারা গেলে আমি সিদ্ধান্ত নেই, আমার পক্ষে পড়াশোনা আর হবে না! আমি পড়ব না। বাড়ি এসে আম্মুকে বলি, আম্মু আমি আর পড়ব না! আমার পড়াশোনা আর ভালো লাগছে না! আম্মু কালবিলম্ব না করে তার পায়ে থাকা শক্ত সেন্ডেল দিয়ে আমাকে আচ্ছারকম মারলেন। তারপর এমন এক কান্না করতে লাগলেন, আমি কল্পনাও করতে পারি না। সেদিন বিকেলে আমি নতুন এক সিদ্ধান্ত নেই, যত যাই হোক, পড়াশোনাটা করে যেতে হবে। কদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আম্মুর আঁচল থেকে চলে এলাম গ্রাম থেকে দূরে। গ্রামে থাকতে কিছু দিন পরপরই আমি আম্মুর কাছে ছুটে যেতাম। আম্মু নানা কারণে বকতেন। তবু এ পৃথিবীর সেরা আবাস তো মায়ের কোল, তা ছেড়ে আমি কোথায় যাব বলো? আমরা মায়ের সাথে কোনোদিন, কখনোই রাগ করে কথা বলব না। ঠিক আছে?


আরো সংবাদ



premium cement