২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি পাখি একটি ফুল

-

বালিহাঁস

বালিহাঁস আমাদের দেশে অতি পরিচিত পাখি। আমাদের পরিচিত হাঁসদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হাঁস এটি। মাত্র ৩৩ সেমি লম্বা হয়। মূলত ধূসর বর্ণের এক পাখি। মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় তার ধূসরাভ শরীরে বেগুনি আর সবুজাভ আভাও আছে। মাথার ওপর অংশ কালো। মাথার ওপরের ওই অংশটা বাদ দিলে মুখ, গলা ও পেট সাদা। গলায় আছে পেঁচানো রিঙের মতো পালক। যেন চিকন কালো রিবন তার গলায় কেউ পরিয়ে দিয়েছে। এই চিহ্নটি দিয়েই তাকে আলাদা করে চেনা যায়। পুকুর, ডোবা, ধানক্ষেতসহ সব রকম জলাভূমিতে এরা বিচরণ করে। বেশ শান্তশিষ্ট পাখিগুলো দীর্ঘক্ষণ উড়তেও পারে। কিন্তু ওড়ার গতি খুব বেশি নয়। এদের ইংরেজি নাম পড়ঃঃড়হ ঃবধষ, বৈজ্ঞানিক নাম ঘবঃঃধঢ়ঁং পড়ৎড়সধহফবষরধহঁং.
মূলত দক্ষিণ এশিয়ার পাখি বালিহাঁস। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও এদের দেখা যায় আন্দামান দ্বীপাঞ্চলে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নদীর মোহনার ব-দ্বীপ অঞ্চলে একসময় ওরা ছিল খুব পরিচিত পাখি। পাখি শিকার, বন উজাড় এবং মানুষের বসবাসের জায়গা বেড়ে যাওয়ায় এখন হুমকির মুখে বালিহাঁস। অন্যান্য হাঁসে ও একই অবস্থা। বলা যেতে পারে বালিহাঁস আমাদের দেশের বিপন্ন পাখির একটি।
বালিহাঁস সাধারণর দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়ায়। খাবার সংগ্রহ করে। ৬ থেকে ১৬টির পর্যন্ত দল হয়ে থাকে। কখনো কখনো দল আরো বড় হয়। আগাছাপূর্ণ নিরিবিলি জলাশয় ওদের পছন্দ হলেও, মানুষজন দেখলেও খুব একটা ভয় পায় না।
বর্ষার শেষ দিক থেকে শুরু করে শরতের শেষ পর্যন্ত ওদের প্রজনন ঋতু। এ সময় এরা জলাশয়ের আশপাশের বড় গাছের কোটরে বাসা বানায়। ঘাস, পালক ও নানা আবর্জনা দিয়ে ডিমঘর তৈরি করে। সেই বাসায় ১০ থেকে ১৪টি ডিম পাড়ে। ১৬ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে সেই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। সামান্য বড় হলেই মা-হাঁস বাচ্চাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মাটিতে। পড়তে পড়তেই উড়াল দেয় ওরা।

কৃষ্ণচূড়া

কৃষ্ণচূড়াকে চেনেন না এমন লোক খোঁজে পাওয়া ভার। কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফুটলে গাছে গাছে লালে লাল হয়ে। এই লালের সমারোহ কৃষ্ণচূড়ারই মহিমা। কৃষ্ণচূড়াকে সাধারণত আমরা লাল রঙেই দেখতে অভ্যস্ত। তবে কৃষ্ণচূড়া তিনটি রঙের হয়Ñলাল, হলুদ ও সাদা। কম হলেও চোখে পড়ে হলদে রঙের কৃষ্ণচূড়া আর সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে হঠাৎ হঠাৎ। তিন রঙের কৃষ্ণচূড়ার গাছই উঁচু। অনেকটা জায়গাজুড়ে শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটায়। ফুল ফোটে প্রায় গ্রীষ্মে। এর বড় খ্যাতি হলো গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে যখন এই ফুল ফুটে তখন এর রূপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও থমকে তাকাতে বাধ্য হন।
পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কার কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। এদের ইংরেজি নাম জড়ুধষ ঢ়ড়রহপরধহধ, বৈজ্ঞানিক নাম উবষড়হরী ৎবমরধ।
কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় ৭-৮টি পাপড়িযুক্ত গাঢ় লাল। ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৩০টি উপপত্র বিশিষ্ট। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।


আরো সংবাদ



premium cement