২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভূতের ফুটবল

-

সন্ধ্যা ৬টা। চারপাশে গা ছমছম করা পরিবেশ। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। এখন বৃষ্টি নেই। তবে গুমোট পরিবেশ এখনো আছে। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। যেকোনো মুহূূর্তে আবার বৃষ্টি নামতে পারে। বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করছে রাস্তার দুইপাশে মাঠঘাট, খালবিল। ডোবায় নতুন পানিতে গলা ছেড়ে ব্যাঙ ডাকছেÑ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। রাস্তার দুইপাশে ডাকছে ঝিঁঝিঁ পোকা। দ্রুত সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফিরছিল সোহেল। খানাখন্দে ভরা এঁটেল রাস্তায় দ্রুত সাইকেল চালাতে গিয়ে পিছলে পড়ে গেল ও। নোংরা কাদাপানি লেগে নষ্ট হয়ে গেল স্কুলড্রেস। পায়ের নতুন কেডস। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেল তার। চারপাশে তাকাতেই নজর পড়ল বাঁশঝাড়ের পাশে মাঠের দিকে। বৃষ্টির পানিতে থৈ থৈ করা মাঠে একদল ছেলে ফুটবল খেলছে। বৃষ্টিভেজা মাঠে ফুটবল খেলার লোভটা সামলাতে পারল না সোহেল। রাস্তার ধারে সাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে দৌড় দিলো মাঠের দিকে। মাঠে পৌঁছতে না পৌঁছতেই আবার শুরু হলো বৃষ্টি। মুষলধারে। একেবারে ঝমঝমিয়ে। দুই হাত প্রসারিত করে আকাশের দিকে মুখ হাঁ করে তাকাল সে। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়তে লাগল মুখে। ঢোক ঢোক করে বৃষ্টির পানি গিলতে লাগল ও।
মাঠ থেকে চিৎকার করল একজন। এই সোহেল, এই, ফুটবল খেলবি নাকি?
হুঁ।
তাড়াতাড়ি আয়।
সোহেল দৌড়ে গেল মাঠে। গিয়েই ফুটবলে মারল জোরে এক লাথি। লাথি মেরেই কঁকিয়ে উঠল ও। উঁহ!
তার কাণ্ড দেখে খ্যাকখ্যাক করে হেসে উঠল সবাই।
কথা বলে উঠল বলটা। এত জোরে লাথি মারলি তো! মনে রাখিস ?
চমকে উঠল সোহেল। কথা বলছে বল! একটু ভালো করে বলটার দিকে খেয়াল করল ও। বলের চোখ, নাক, মুখ সবই আছে। দুই হাঁটুতে ভর দিয়ে আরো একটু ঝুঁকল ও। এবার দেখল বলে চুলও দেখা যাচ্ছে। পানিতে চুল ভাসছে। চমকাল ও। আরো ঝুঁকল। ভালো করে বলটার দিকে তাকাল। এ কী! এটা তো বল নয়, আস্ত একটা মানুষের মাথা। জ্যান্ত মানুষের মাথা! চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে তার দিকে। গোমরা মুখ।
বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল সোহেলের। বড্ড করে একটা ঢোক গিলল।
বলমাথাটা কথা বলল আবার। এত জোরে লাথি মারলি তো! মনে রাখিস।
চমকে উঠে সবার দিকে তাকাল সোহেল। খেলার নেশায় এতক্ষণ কারো দিকে তাকায়নি ও। তাকিয়েই ফিট হওয়ার মতো অবস্থা তার। গলার ওপর কারো মাথা নেই। সবার মাথা হাতে। নিজ নিজ হাতে আপন মাথা ধরে আছে সবাই!
ভূত নাকি? একটা ঢোক গিলে ভয়ে দৌড়ে পালাতে চাইল ও।
এগিয়ে এলো একজন। যার মাথায় লাথি মেরেছিল ও। বলল, আমার মাথায় লাথি মেরে কোথায় পালাচ্ছিস? তোর মাথায় এখনো তো লাথি মারিনি আমি।
চমকে উঠল সোহেল। গোঁ গোঁ করছে গলা। গোঙানি গলায় বলল, মা..মা...মানে?
একজন এসে পিঠ চাপড়ে দিলো। ভয় পেও না। বৃষ্টির দিনে আমরা এভাবে আমাদের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলি। মজা করি।
কে তোমরা? কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল সোহেল।
কন্ধকাটা ভূত।
মানে? কন্ধকাটা ভূত মানে কী?
কন্ধকাটা ভূত মানে যে ভূতের গলার ওপর মাথা নেই। গলাকাটা ভূত।
তোমাদের মাথা হাতে কেন?
আমাদেরকে গলা কেটে মেরে ফেলা হয়েছিল।
একজন বলল, আমরা সবাই সবার মাথা নিয়ে খেলা করি। তুমি যেও না। আমাদের সাথে খেলা করো। তোমার মাথা নিয়ে খেলা করব সবার শেষে।
মাঠ ছেড়ে পালাতে পারল না সোহেল। ভূতেরা তাকে যেতে দিলো না। তাদের সাথে মাথা নিয়ে ফুটবল খেলতে লাগল ও। বৃষ্টি পড়ছে। মুষলধারে। ঝমঝমিয়ে। একে একে সবার মাথা নিয়ে খেলা হয়ে গেল। এবার সোহেলের পালা। এগিয়ে এলো একজন। যার মাথায় প্রথমে জোরে লাথি মেরেছিল সে। এসেই তার মাথাটা ধরল। বলল, এবার তোর মাথাটা খোল দেখি, জোরে একটা কিক মারি।
ভয়ে চিৎকার করতে যাচ্ছিল সোহেল। অমনি ঘুম গেল ভেঙে। দেখল স্কুলের পিয়ন দীপংকরের হাত তার মাথায়। তার ঠোঁটে ঝুলছে হাসি। পিয়ন বলল, ঘুমিয়ে গিয়েছিলে বুঝি? ওঠ, বৃষ্টি থেমে গেছে। সন্ধ্যা নেমে আসছে। বাড়ি যাও।
আজ সকালে স্কুলে পৌঁছেই শুরু হয়েছিল ঝুমবৃষ্টি। থামার কোনো জো নেই। ক্লাস শেষ হলো। স্কুল ছুটি হলো। তবুও বৃষ্টি থামছে না। পড়ছে তো পড়ছেই। একটানা। ঝমঝমিয়ে। স্কুল ছুটির পর জানালার পাশে বসে বেঞ্চে মাথা ঠেকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল সোহেল। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে মনে নেই।
দুই হাতে চোখ কচলিয়ে চারপাশে তাকাল। কেউ নেই। সবাই বাড়ি চলে গেছে। ক্লাসরুম বন্ধ করার জন্য দীপংকর হাতে চাবি নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে।
চোখে মুখে পানি দিয়ে সাইকেল নিয়ে
রাস্তায় উঠল সোহেল। সন্ধ্যা নেমে আসছে। মেঘলা আকাশ। থমথমে। মাথার ওপর ভেজা ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। মনে হয় আশপাশে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে। আবারো বৃষ্টি নামতে পারে। সোহেল সাইকেলে চড়ে জোরে জোরে প্যাডেল মারতে লাগল। আবার বৃষ্টি নামার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে তাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement