০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আমিত্তি কী

-


ঢাকার দুটো পুরনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির সুনাম এখনো আছে। তার একটি হলো আমৃতি বা আমিত্তি। বৃহত্তর ঢাকা জেলায় একসময় বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে আমিত্তি তৈরি করা হতো। সম্ভবত অমৃত নামটারই অপভ্রংশ হয়েছে আমিত্তি। প্রাচীনকালে সব খাবারের শেষে অমৃত পরিবেশনের কথা জানা যায় চর্যাপদ থেকে। সে যুগে অমৃত ছিল একরকম দুর্লভ খাবার। যেকোনো লোভনীয় খাবারকে এখনো অমৃতর সাথে তুলনা করা হয়। এ থেকে অনুমান করা যায়, প্রাচীন ঢাকার মিষ্টির মধ্যে আমিত্তি ছিল এ দেশের একটি অন্যতম জনপ্রিয় ও লোভনীয় মিষ্টি সামগ্রী। আমিত্তি দেখতে অনেকটা জিলাপির মতো হলেও জিলাপির সাথে এর কিছুটা তফাৎ আছে। জিলাপি তৈরি করা হয় ময়দা থেকে, আর আমিত্তি তৈরি করা হয় ময়দার সাথে মাষকলাই ডাল মিশিয়ে। মাষকলাইয়ের ডাল প্রথমে খোসা ছাড়িয়ে গুঁড়ো করা হয়। তারপর তা ময়দার সাথে মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে মাখনের মতো গোলা করা হয়। তারপর সেই গোলা ছিদ্রযুক্ত একটা পাত্রে ভরা হয়। কুশলী হাতের কায়দায় সেই পাত্র ঘুরিয়ে ছিদ্র দিয়ে গরম তেলের ওপর প্যাঁচ মেরে গোলাকার রিংয়ের মতো করে ভাজা হয়। ভাজার জন্য জিলাপির মতো একটা বিশেষ ধরনের লোহার কড়াই লাগে। গোলা একটা রিং বা বলয়ের মতো পড়লেও সেই রিংয়ের ওপর বা পাশ দিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ছোট ছোট রিং তৈরি করা হয়। ভাজার পর তাই আমিত্তি দেখতে অনেকটা ফুলের মতোই দেখায়। ভেজে মচমচে হয়ে উঠলে তা চিনির সিরায় ভিজিয়ে তুলে ফেলা হয়।
একসময় দেশের বিভিন্ন মেলায় ময়দার দোকানে আমিত্তির দেখা মিলত। অনেক জায়গায় আমিত্তিকে বিবেচনা করা হতো অভিজাত শ্রেণীর জিলাপি হিসেবে। মাষকলাই বাটা মেশানো থাকত বলে মিষ্টির স্বাদেও আমিত্তি থেকে এক ধরনের ঘ্রাণ আসত, খেতেও ভালো লাগত। ডাল মেশানোয় আমিত্তির মধ্যে একটু মোলায়েম ভাব আসে। দেশের যেসব অঞ্চলে মাষকলাই ডালের আবাদ বেশি হয়, সেসব জায়গায় এখনো আমিত্তি গৌরবের সাথে জনপ্রিয় মিষ্টি হিসেবেই টিকে আছে। জিলাপির মতো আমিত্তিও বেশি ব্যবহৃত হয় মিলাদে। গাজীপুরের আমিত্তি বেশ নামকরা।
ছবি : লেখক


আরো সংবাদ



premium cement

সকল