বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত প্রচলিত ভুল ও কুসংস্কার
- মাওলানা মোঃ সিরাজুল ইসলাম কাসেমী
- ৩০ মে ২০২৩, ১৮:২৮, আপডেট: ৩০ মে ২০২৩, ১৮:৪২
বিবাহ-শাদীতে অনেক অনিয়ম বা ভুল প্রথা চালু রয়েছে ,যা ইসলামী শরীয়াহ সমর্থন করে না। বরং তা খুবই নিন্দনীয়। তাই এ সম্পর্কিত কতিপয় ভুল প্রথা ও কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১.বিবাহ-শাদীতে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বীনদারী, উত্তম গুণ এবং উন্নত চরিত্রকে প্রাধান্য না দিয়ে কেবল রূপ-সৌন্দর্য, ধন-দৌলত, শিক্ষা, চাকুরী ও বংশকে প্রাধান্য দেয়া।
২. পাত্র-পাত্রীকে কঠিন ও অবান্তর প্রশ্নবানে জর্জরিত করা।
৩.অধিক পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করে আদায় না করা।
৪. পাত্রী দেখার সময় বর ছাড়া অন্য পুরষদের দেখতে যাওয়া।
৫.তেমনি পাত্রকে বেগানা নারী ও মেয়ের বান্ধবী কর্তৃক দেখতে যায়।
৬. বিবাহ-শাদীতে গায়ে হলুদ দেয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা।
৭.যৌতুক নেওয়া-দেয়া। এটা একটা জঘন্যতম প্রথা, নিন্দনীয় ও হারাম কাজ।
৮. পিতা বর্তমান থাকার পরও অন্যকে উকিল বাপ বানানো।
৯.ছেলের হাতে স্বর্ণের আংটি বা গলায় স্বর্ণের চেইন দেয়া।
১০. পরনারী বা ভাবীদের দ্বারা বরকে বিয়ের গোসল দেয়া।
১১.শ্যালিকা কর্তৃক দুলা ভাইকে (বর) হাত ধুয়ে দেয়া।
১২.বরের সাথে শ্যালিকাদের এক প্লেটে খেতে বসা।
১৩.নির্দিষ্ট দিন তারিখ দেখে বিবাহের ক্ষন নির্ধারণ করা।
১৪.মহররম মাসে, আশুরার দিনে অথবা বর-কনের জন্ম বা পূর্ব পুরুষের মৃত্যুর তারিখে বিবাহ-শাদী করানো যাবে না মনে করা।
১৫.গেট সাঁজিয়ে সেখানে বরকে আটকে দেয়া।
১৬. বিবাহ-শাদী বেশী আড়ম্বরপূর্ণ করা।
১৭.বিবাহে বরের পক্ষ থেকে কনে পক্ষকে নির্দিষ্ট সংখক লোক খাওয়ানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা।
১৮. অভিভাবক এবং সাক্ষী ছাড়া কেবল আল্লাহ, চাঁদ,তারা কিংবা সূর্যকে স্বাক্ষী রেখে বিবাহ করা।
১৯. অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বর -কনের পরস্পরের সন্তুষ্টিতেই বিবাহ সম্পন্ন করা।
২০. বাল্যবিবাহ বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহ।
২১. জোরপূর্বক বিবাহ দেয়া।
২২.অপছন্দীয় পাত্রে বিবাহ দেয়া।
২৩. বর-কনের দেখা-সাক্ষ্যাত ছাড়াই বিবাহ দেয়া।
২৪.বিবাহে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে প্রসিদ্ধ কবর যিয়ারত করে তারপর রওয়ানা করা।
২৫. স্ত্রীর হক আদায়ে শারীরিক ভাবে অক্ষম এমন বয়স্ক লোক কর্তৃক অল্প বয়সী মেয়েকে বিবাহ করা।
২৬. রোগ বা অন্য কোন কারনে স্ত্রীর হক আদায়ে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও দুর্বলতা লুকিয়ে বিবাহ করা।
২৭. মাসিক চলাকালীন সময় বিবাহ শুদ্ধ হয় না মনে করা।
২৮. বিধবা মহিলাদের বিবাহ করাকে অপছন্দ করা।
২৯. মেহদী তোলা ও নেচে গেয়ে বিবাহ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের গীত পরিবেশন করা।
৩০.অশ্লীল নাচ-গান,ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের আয়োজন করা।
৩১. প্রচুর পরিমানে লাইটিং ও আলোকসজ্জা করা।
৩২. প্রথাগতভাবে অনেক লোকের বর যাত্রী হিসেবে যাওয়া।
৩৩. যাদের সাথে দেখা দেয়া জায়েজ নেই এমন লোক দ্বারা মেয়ের ইজিন নেয়া।
৩৪. বেগানা পুরুষদের কন্যার মুখ দেখা এবং দেখানো।
৩৫.মুরুব্বীদের পা সালাম বা কদমবুচি করে সালামী গ্রহণ করা। ৩৬.খাওয়া দাওয়া শেষে বরের হাত ধোয়ানো ও বখশিস দাবী করা। ৩৭.বিবাহ পড়ানোর আগে বা পরে বিভিন্ন জিনিস-পত্র প্রকাশ্য মজলিসে দেখানো।
৩৮. নববধুকে ধান,দুবলা, ঘাস, আগুন বা ধূপ জালিয়ে বরন করা।
৩৯. বিয়ের পরের দিন মেয়ের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ-গোস্ত, মিষ্টি,দই,দুধ ইত্যাদি পাঠানো জরুরি মনে করা।
৪০. ঈদের সময় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে চাল, আটা, ময়দা, পিঠা-নাস্তা, খাবার, মাছ-গোস্ত সেমাই ইত্যাদি পাঠানো।
৪১.মুরুব্বীদের কাপড়-চোপড় দেয়া।
৪২.তেমনি বিভিন্ন মৌসুমে, বিভিন্ন উপলক্ষে জামাইকে দাওয়াত দেয়া বা আনা-নেয়া করা বা মৌসুমী ফল-ফলাদী আদান-প্রদান জরুরী মনে করা।
৪৩. বর বা কনেকে কোলে করে গাড়ি বা পালকী থেকে নামিয়ে ঘরে তোলা।
৪৪. নতুন স্ত্রীকে দুলা ভাই বা বরের ছোট ভাই কোলে করে ঘরে আনা। ৪৫.তেমনি নতুন বরকে শ্যালিকা বা কনে বাড়ির মেয়েদের দ্বারা কোলে করে ঘরে তোলা।
৪৬.বাসর রাতের গোপনীয় কথা বার্তা ও কর্মকাণ্ড বন্ধু-বান্ধবের নিকট বর্ণনা করা ও তা নিয়ে মজা করা।
৪৭. বিবাহ অনুষ্ঠানের (বিনা প্রয়োজনে) ছবি ও ভিডিও ধারন করা। ৪৮. স্বরণীয় করে রাখার জন্য বিবাহের পুরা অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও করা এবং ছবি বাধাই করে রাখা।
৪৯. বিভিন্ন উপায়ে নতুন দুলাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা ও সেবিষয় নিয়ে নির্লজ্জ হাসি তামাশায় মেতে উঠা।
৫০.জুতা চুরির রসম এবং তার বিনিময়ে বর থেকে গিফট গ্রহন করা।
৫১. মালা বদল বা আংটি বদল করা।
৫২.নতুন জামাইয়ের শশুর বাড়িতে প্রথম দিন বাজার করাকে জরুরি মনে করা।
৫৩. নতুন স্ত্রীকে স্বামীর বাড়িতে প্রথম পর্যায়ে আড়াই দিন অবস্থান করতে হবে, এমনটা জরুরি মনে করা।
৫৪. নতুন বর ও কনেকে নিতে আসলে সকলকে জামা-কাপড় দেয়া জরুরী মনে করা।
৫৫.নতুন বউকে স্বামী, শশুর-শাশুড়ী ও মুরুব্বীদের পা ছুইঁয়ে সালাম করা।
৫৬. শশুড় বাড়ী প্রবেশের সময় নববধুকে পা ধোয়ানো, তাকে পাটার উপর দিয়ে ডেঙ্গিয়ে যেতে হবে মনে করা।
৫৭. বাসর ঘরে স্ত্রী নিকট দেন মোহর মাপ চেয়ে নিলেই চলে, মোহর আর দিতে হবে না-মনে করা।
৫৮. নতুন বউকে বাপের বাড়ি থেকে ধান-চাল এনে স্বামীর বাড়ির গোলায় রাখা। তাতে বরকত হয় মনে করা।
৫৯.বিবাহের সময় বর-কনেকে তিনবার করে ইজাব কবূল পাঠ করানো (একবার বললেই হবে)।
৬০.মসজিদে বিবাহ পড়ানো জরুরী মনে করা। (তবে করলে ভালো না করলে সমস্যা নেই)।
৬১. ঝগড়া-ফাসাদের সম্ভাবনা সত্তে¡ও খেজুর ছিটানোকে খুব জরুরী মনে করা। খেজুর না ছিটিয়ে হাতে হাতে দেয়া যেতে পারে।
৬২.বিবাহ পড়ানোর পড় বর কর্তৃক দাঁড়িয়ে সকলকে সালাম দেয়া ও মুসাফাহা করা জরুরী মনে করা।
৬৩.বিবাহের পূর্বে কথাবার্তার দিন বর বা কনের হাতে আংটি পরানো। ৬৪. পুরুষের বিজাতীয় পোষাক বা খুব দামী জামা-কাপড়,জুতা, টুপি,শেরওয়ানী জরুরী মনে করা।
৬৫.কনের জন্য বিজাতীয় বা বিভিন্ন মডেলের, ব্রান্ডের শাড়ী-কাপড় বা খুব দামী প্রসাধনীর শর্তারোপ করা।
৬৬.বর-কনেকে দুধ খাওয়ানো বা মিষ্টি মুখ করানোকে জরুরি মনে করা। ৬৭. বিয়ের উৎসব উপলক্ষে পটকা -আতশ বাজী ফোটানো।
৬৮.মা-খালা বা মামী-চাচীদের একে অপরকে রঙ দেয়া কিংবা কাঁদা মাটি একে অপরকে মাখিয়ে দেয়া।
৬৯. বিবারহর আসরে একটা স্টেজে বর-কনেকে একসাথে বসিয়ে সর্বশ্রেণীর মানুষ কর্তৃক তাদেরকে দেখা, ছবি উঠানো, সেলফী তুলা ও ভিডিও ধারন করা।
৭০. বিবাহ বার্ষিকী পালন করা বা এ দিনকে স্মরণীয় করে রাখা, কেক কাটা ইত্যাদি।
৭১. বরের আত্মীয়রা কনেকে কোলে তুলে বাসর ঘর পর্যন্ত পৌছে দেওয়া। ৭২.ওলিমা বা বউভাতের আয়োজন করে আমন্ত্রিত মেহমানদের থেকে টাকা নেয়া।
৭৩. ওলিমার অনুষ্ঠানে সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষকে দাওয়াত করা আর সাধারণ দ্বীনদার ও অভাবী বা গরিব-মিসকিনদের দাওয়াত থেকে বি ত করা।
৭৪. বিবাহের সময় কনে পক্ষ ছেলে পক্ষের নিকট ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত স্বর্ণ-রূপার শর্তারোপ করা ইত্যাদি।
তাই আসুন! শরীয়ত পরিপন্থী এহেন গ্রহিত কাজ পরিহার করে ইসলামী শরীয়াহ ও কুরআন সুন্নাহর বিধান মোতাবেক বিবাহ-শাদীর আয়োজন করে কুসংস্কারমুক্ত জীবন গড়ি এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মানে সচেষ্ট হই।
লেখক : ইসলামী গবেষক। মোবাইল : ০১৭১২৬২৯২৬৩
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা