২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাহাবায়ে কিরামের বীরত্ব

সাহাবায়ে কিরামের বীরত্ব - মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম - ফাইল ছবি

সাহাবায়ে কিরাম সবাই ছিলেন বীর। তাদের বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে কেবল দ্বীনের স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে নয়। তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়েকজন হলেন :

হজরত আবু বকর সিদ্দীক রা: : হজরত আবু বকর সিদ্দীক রা: মুসলমান হওয়ার পর হতে সব জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। তাবুক যুদ্ধে তিনি মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী ছিলেন। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একদল মুসলমান জাকাত দিতে অস্বীকার করলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। হজরত ওমর রা: বললেন আপনি তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন যারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে। হজরত আবু বকর সিদ্দীক রা: বলেন যারা নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করব। পরবর্তীতে হজরত ওমর রা: নিজের ভুল বুঝতে পেরেন।

হজরত ওমর ফারুক রা: : মহানবী সা: দোয়া করেছিলেন হে আল্লাহ! ওমর ইবন খাত্তাব এবং আবু জেহেলের মধ্যে আপনার কাছে যে অধিক পছন্দনীয় তাকে মুসলমান করে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। আল্লাহ তায়ালা ওমর ইবন খাত্তাবকে কবুল করেন। তিনি মুসলমান হওয়ার পর কুরাইশদের নিকট তা ব্যক্ত করলে তারা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনিও তাদেরকে প্রহার করেন এবং বলেন, আল্লাহর শপথ! যদি আমরা সংখ্যায় তিন শ’জনও হতাম, তাহলে মক্কায় হয় তোমরা থাকতে অথবা আমরা থাকতাম (ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড-পৃ: ৩৪৮)। তার তিন দিন আগে মুসলমান হন হামযা রা:। উভয়ই ছিলেন বীর।

হজরত ওমর ফারুক রা: রাসূলুল্লাহ সা:-এর নিকট গিয়ে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! আপনি কী সত্য নবী নন? রাসূল সা: বলেন, অবশ্যই সত্য নবী। ইসলাম কী সত্য দ্বীন নয়? রাসূল সা: বলেন, অবশ্যই সত্য দ্বীন তা হলো গোপনীয়তা কেন? আমরা প্রকাশ্যে তাওয়াফ করব, প্রকাশ্যে নামাজ পড়ব। অতঃপর মুসলমানগণ দু’কাতারে বিভক্ত হলেন, এক কাতারের সামনে হজরত ওমর রা:, অপর কাতারের সামনে হজরত হামযা রা:, আর মাঝখানে মহানবী সা: দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে তাওয়াফ করেন। প্রকাশ্যে আজান ও দ্বীন প্রচারে হজরত ওমর রা:-এর অগ্রণী ভূমিকার কারণে মহানবী সা: তাকে ফারুক উপাধি দান করেন।

হজরত আলী রা: : তার উপাধি হলো- হায়দার, আসাদুল্লাহ (আল্লাহর সিংহ), শের-ই যায়দান ইত্যাদি। তিনি বদর, উহুদ, খন্দক ইত্যাদি বহু যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। উহুদের যুদ্ধে তিনি ষোলোটি আঘাতপ্রাপ্ত হন। উহুদের মাঠে এমন বীরত্ব দেখিয়ে ছিলেন যে, হজরত জিবরাঈল আ:- তার বীরত্বের প্রশংসা করেছেন। হজরত আলী রা: কোনো কাফিরকে মহানবী সা:-এর কাছে আসতে দেননি। রাসূল সা: তাকে লক্ষ করে বলেন ‘অবশ্যই আলী আমার থেকে এবং আমি আলী থেকে।’ হজরত জিবরাঈল আ: এ কথা শুনে বলেন, আর আমি আপনাদের উভয় থেকে (কুররাতুল আইন)।

হজরত হামযা : ¯েœহের ভাতিজা মুহাম্মদ সা:-কে আবু জেহেল গালি দেয়ায় তিনি ধৈর্যহারা হন। পরে আল্লাহ তায়ালা দ্বীনের জন্য তাকে কবুল করেন। তার ইসলাম গ্রহণ ইসলামকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তিনি বদরের যুদ্ধে উতবাকে হত্যা করেন। উহুদের যুদ্ধে তিনি শহীদ হয়ে সাইয়্যেদুশ শোহাদা (শহীদদের সর্দার) উপাধি লাভ করেন।

হজরত খালেদ ইবন অলীদ : মুতার যুদ্ধে যায়েদ রা:, হজরত জাফর ইবন আবু তালেব রা: এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা রা: এর শাহাদাতের পর হজরত খালেদ ইবন অলীদ রা: সেনা প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই যুদ্ধে তার হাতে ৯টি তরবারি ভেঙে ছিল (সহিহ বুখারী ২য় খণ্ড পৃ: ৬১১)। তার নেতৃত্বে তিন হাজার সৈন্য দুই লাখ কাফিরের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি জীবনে কোনো যুদ্ধে পরাজয়বরণ করেননি। তিনি সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তরবারি) হিসেবে সুপরিচিত।

হজরত হানযালা রা: : তিনি নতুন বিয়ে করেছেন। নববধূর সাথে রাত যাপন করেন। হঠাৎ উহুদ যুদ্ধের ঘোষণা শুনতে পান। রাসূল প্রেম ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা তাঁর এত তীব্র ছিল যে, ফরজ গোসলের কথা ভুলে যান। নাপাক শরীরে যুদ্ধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে শাদ্দাদ ইবনে আওসের তরবারির আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন। এ বীর যোদ্ধাকে ফেরেশতারা জমজমের পানি দ্বারা গোসল করান।

হজরত আমর ইবন জুমুহ : তিনি ছিলেন খোঁড়া। ঠিকভাবে হাঁটতে পারতেন না। তাই রাসূল সা: তাকে প্রথমে উহুদ যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেননি। কিন্তু তিনি ছিলেন নাছোড় বান্দাহ, যুদ্ধে যাবেনই। পরে মহানবী সা: যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। অতঃপর তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাওয়ার সময় বলেন, আল্লাহর শপথ, আমি জান্নাত লাভের আশা করি। অতঃপর উহুদের যুদ্ধে তিনি ও তার এক পুত্র শাহাদাত বরণ করেন। তার স্ত্রী স্বীয় স্বামী ও পুত্রের লাশ উটের পিঠে করে মদিনায় আনতে চাইলেন কিন্তু উটটি হঠাৎ বসে পড়ে। বহু প্রচেষ্টার পরেও একে উঠানো সম্ভব হয়নি। পরে উহুদের মাঠেই তাদের সমাহিত করা হয় (সাহাবা চরিত্র)।

হজরত মুসআব ইবন উমাইর রা: : তিনি ছিলেন ধনী পরিবারের সন্তান। তিনি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে প্রতিপালিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী। মহানবী সা: তার শরীরের যথেষ্ট মিল ছিল। তাই তার শাহাদাতের পর কাফেররা মহানবী সা:-কে শহীদ করেছিল বলে প্রচার করেছিল। তিনি সদা মূল্যবান পোশাক পরতেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার পর তার জীবন কাটে সাধারণভাবে ও তালি দেয়া জামা কাপড়ে। উহুদ যুদ্ধে মুহাজিরদের পতাকা ছিল তার হাতে। যুদ্ধে তিনি শাহাদাতবরণ করেন। অতঃপর হজরত আলী রা: পতাকা ধারণ করেন। উহুদ যুদ্ধে তিনি অসাধরণ বীরত্ব সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি ইবনে কোম্মা ও অন্যদের আক্রমণ প্রতিরোধ করে মহানবী সা:-কে হেফাজত করেন। তাকে কাফন পরানোর জন্য যে কাপড় ছিল তা যথেষ্ট ছিল না। কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে পা ইজখির ঘাস দিয়ে ঢাকা হয়।

হজরত তালহা রা: : হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, হজরত আবু বকর সিদ্দীক রা: উহুদের যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেছেন, সে দিনের যুদ্ধের একক কৃতিত্ব ছিল তালহার। মহানবী সা:-কে রক্ষা করার দায়িত্ব তিনি সর্বাধিক পালন করেন। উহুদ যুদ্ধে তার দেহে ঊনচল্লিশটি আঘাত লেগেছিল। তার শাহাদাত আঙুলসহ দু’টি আঙুল নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল (ফতহুল বারী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৬১)।

হজরত ওহাব ইবন কাবুস রা: : তিনি ছিলেন একজন গ্রাম্য সাহাবি। তিনি ছাগল চরাতেন। একদিন ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে ছাগল নিয়ে মদিনা আসেন। সেখানে তিনি জানতে পান যে, রাসূল সা: উহুদে গমন করেছেন। অতঃপর তিনি রাসূল সা:-এর সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে দেখা করেন। ঠিক এ সময় একজন কাফের রাসূল সা:-কে আক্রমণ করতে অগ্রসর হলে রাসূল সা: বলেন- যে ব্যক্তি এদের তাড়িয়ে দিতে পারবে সে আমার সাথে জান্নাতে যেতে পারবে। অতঃপর হজরত ওহাব রা: তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কাফেরদের প্রতিহত করে তিনিও শহীদ হন (সাহাবা চরিত)।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’ সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলে কারাগারে ‘অন্যায়ের সাথে নয়া দিগন্তের সাংবাদিকরা কখনোই আপোষ করেন না’

সকল