০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ফেসবুক লাইভে এসে যুবকের আত্মহত্যা : স্ত্রীসহ গ্রেফতার ৪

- ছবি - নয়া দিগন্ত

ফেসবুক লেইভে এসে আত্মহত্যাকারী যুবক ইমরোজ হোসেন রনির (২৮) প্ররোচনা মামলায় স্ত্রী, শ্বশুর, শ্যালিকা ও ভায়রাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৩। ঘটনার একমাস ছয় দিনের মাথায় শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তবে এ ঘটনায় চাচা শ্বশুর মুকুলকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি।

পীরগাছা থানার ওসি সরেষ চন্দ্র জানান, গ্রেফতারকৃতরা হলেন রনির স্ত্রী সাথী বেগম, স্ত্রীর ছোট বোন বিথি বেগম, ভায়রা এমদাদুল হক, শ্বশুর বাদল। এদের দায়ী করে গত ১২ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের নিজতাজ গ্রামের তৈয়ব আলীর একমাত্র ইমরোজ হোসেন রনি (৩০) ফেসবুক লাইভে এসে বিষপান করেছিলেন। পরে হাসাপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা হলে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। একমাস ছয় দিনের মাথায় তাদের র‌্যাবের সহযোগিতায় ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ এবং পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের নিজতাজ গ্রামের তৈয়ব আলীর একমাত্র ইমরোজ হোসেন রনি (৩০) সাথে বছর চারেক আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের পশ্চিম হাগুরিয়া হাসিম গ্রামের দিনমজুর বাদল মিয়ার কন্যা শামীমা ইয়াসমিন সাথীর সাথে। চার বছরের সংসার জীবনে তাদের আবু শাকিব রিশাদ নামে দুই বছরের একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান আছে এরই মধ্যে স্ত্রীর সাথে রনির কাছে দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকা এবং তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দাবি করে বসে। এতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় স্বামী রনি। খুবই নিরব থেকে স্বামী স্ত্রীকে বোঝাতে থাকেন। কিন্তু গত ৯ ফেব্রুয়ারি রনি কিংবা রনির বাবা-মা অথবা পরিবারের কারো সাথে কথা না বলে সকলের অগোচরে সাথী পার্শ্ববর্তী রতনপুর গ্রামে চাচা মুকুল মিয়ার বাড়িতে চলে যান।

পুলিশ এবং উভয় পরিবার সূত্র বলছে, ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে রনি চাচা শ্বশুরের বাড়িতে যান স্ত্রী সাথীকে আনতে। কিন্তু সেখানেও সাথী একই দাবিতে অনড় থাকেন। রাগ ক্ষোভ অভিমানে বিষন্ন হয়ে যান রনি। এরপর শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন।

ফেসবুক লাইভে রনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী আমাকে না বলে তিন দিন আগে তার চাচা মুকুল মিয়ার বাড়িতে চলে যায়। আমি আনতে গেলে তারা আমার নিকট দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকা এবং তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ দেয়ারও দাবি করে। আমি এখন ফেসবুক লাইভে এসে বিষপানে আত্মহত্যা করবো। আমার মৃত্যুর জন্য আমার স্ত্রী, শ্বশুর, চাচা শ্বশুর ও ভায়রা এমদাদুল হক দায়ী।‘ এ বলে একটি সাদা বোতলের মুখ খুলে বিষপান করেন রনি। এসময় তার সাথে এক কিশোরকে দেখা যায়। কিন্তু তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় রনিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রনি।

এ বিষয়ে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, ওই যুবক ফেসবুক লাইভে এসে বলেন বাড়িতে না থাকার সুযোগে শ্বশুরের প্ররোচনায় আমার স্ত্রীকে চাচা শ্বশুরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর আনা এবং শ্বশুর-শাশুড়ির ভরণপোষণ দাবি করে। বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারছি না। এজন্য আত্মহত্যা করছি। আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য তিনি শ্বশুর, চাচা শ্বশুর, স্ত্রী এবং ভায়রাকে দায়ী করে ওই লাইভে বিষপান করেন। মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে তিনি মারা যান। পরে তার বাবা আত্মহত্যার মামলা করে।


আরো সংবাদ



premium cement