বগুড়া সদর থানায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে বর্বর কায়দায় নির্যাতনের ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত করা হয়েছে। গুরুতর আহত ব্যবসায়ী সোহান বাবু ওরফে আদর (৩২) বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জ পাড়ার উটের মোড়ের সাইদুর রহমানের পুত্র।
পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর আহত বাবুর পিতা অভিযোগ করে বলেন, শহরের গোয়ালগাড়ি এলাকায় আল ফালাহ বহুমুখী নামে একটি সমিতি রয়েছে। সোহান বাবু আদর, সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া তিনজন মিলে ওই সমিতি পরিচালনা করেন।
সমিতির অপর দুই পরিচালক সাথী বেগম ও তার স্বামী বাপ্পির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় সদর থানার কনস্টেবল (মুন্সি) এনামুল হক বাবুকে মোবাইল ফোনে থানায় ডেকে নেন। বাবু থানায় আসলে সদর থানায় এসআই আব্দুল জোব্বার, এএসআই এরশাদ ও মুন্সি এনামুল পাশের একটি নতুন কক্ষে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে পাশে একটি পিলারের সাথে বেঁধে রেখে ১১ লাখ টাকা সাথীর পাওনা ফেরত চায়। টাকা দিতে অস্বীকার করায় গভীর রাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করে।
সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের সময় থানায় সাধারণ লোকজন না থাকার সুযোগে একই দাবীতে পুনরায় বাবুর হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বেদম প্রহার করা হয়। পুলিশের নির্যাতনে বাবুর কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত রক্তাক্ত জখম হয়।
থানা হাজতে বাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার রাত ১২ টায় এস আই আব্দুল জোব্বার বাবুর পিতা সাইদুর রহমানকে ডেকে বলে, ‘তোর ছেলে সুস্থ্য আছে ভাল আছে এই মর্মে মুচলেকা লিখে ২০ হাজার টাকা দিয়ে তোর ছেলেকে নিয়ে যা’। পরে বাবুর পিতা মুচলেকা ও ২০ হাজার টাকা দিয়ে তার ছেলেকে থানা থেকে ছেড়ে নিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। বর্তমানে বাবুর শারিরীক অবস্থা আশংকাজনক।
পুলিশ জানায়, অভিযোগকারী সাথী বানু ও তার স্বামী বাপ্পি মিয়া শহরের কাটনারপাড়া আলোরমেলা স্কুল এলাকার বাসিন্দা।
এ ব্যাপারে এস আই আব্দুল জোব্বার ও এএসআই এরশাদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কনষ্টেবল এনামুল হক বলেন, আমি সামান্য চড় থাপ্পড় মেরেছি।
এ ব্যাপারে বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সোহান বাবু আদরকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে বাদী ও বিবাদীর মধ্যে আপোষ মিমাংসা হলে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ওসি বলেন, বাবুকে নির্যাতনের কথা আমার জানা নেই।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তী জানান, জরুরী কাজে বগুড়া পুলিশ সুপার রাজশাহী ছিলেন। তিনি সেখান থেকে দায়িত্বরত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডলকে শাস্তির নির্দেশ দিলে চার পুলিশ সদস্য এসআই আব্দুল জব্বার, এএসআই নিয়ামত উল্লাহ ও এরশাদ হোসেন এবং কনষ্টেবল এনামুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে তুচ্ছ ঘটনায় সদর থানার এসআই জিল্লুর রহমান বগুড়া অ্যাডভোকেটস বার সমিতির সদস্য সোহেল রানা সজিবকে শহরের জলেশ্বরীতলার বাড়ির সামনে থেকে ধরে থানায় আনেন। তাকে দু’দফা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের পর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এ ব্যাপারে সজিব জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন।
অ্যাডভোকেট সোহেল রানা সজিব দাবি করেন, তিনি সিনিয়র আইনজীবী ও উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপের মুখে মিমাংসা করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা