২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দৃষ্টিপাত

বাংলাদেশ পরাধীন দেশ নয়

-

বাংলাদেশ সার্বভৌম কি না- এরূপ একটি অনাকাক্সিক্ষত সন্দেহ বা প্রশ্ন ভ্রান্ত হলেও তা বেশ কিছু পুরনো এবং দেশের বাইরে বিদেশেও পরিব্যাপ্ত। সরকারের আচার, ভারতের আচরণ, কূটনৈতিক কথাবার্তা, কিছু মিডিয়ার অত্যুৎসাহী দৃষ্টিকটু বা শ্রুতিকটু ভারতপ্রেম, সেই সাথে আরো কিছু উপাত্ত এরূপ ভ্রান্তির উৎস। বাংলাদেশ সবার সাথে বন্ধুত্ব রাখতে চাইবে বা friends not master ধরনের সাহসিক দ্যোতনা পোষণ করবে- এটাই তো স্বাভাবিক ও প্রত্যাশা। কিন্তু দায়িত্বশীলদের ‘বন্ধুত্ব’ নিয়ে হ্যাংলামি, ‘স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক’, ‘রক্তের রাখির বন্ধনে আবদ্ধ’- এরূপ গদগদ, অবনত উচ্ছ্বাস কিছু ভ্রান্তির জন্ম দিলে কী করা যায়? তিস্তার মুলো ঝুলিয়ে ভারত সব কিছু আদায় করে নিচ্ছে। এমনকি ফেনী নদীর ভারতে প্রবাহিত না হলেও তার পানি নিয়ে নিচ্ছে, আরো নিচ্ছে ট্রানজিট-করিডোর। পারস্পরিক সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে এর কোনোটিই আপত্তির নয়; বরং কাম্য ও নন্দিত। কিন্তু ইলিশ পাঠালে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে বাংলাদেশের সাথে নিষ্ঠুর কাতুকুতু খেলা, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তাকে ভারতের প্রাদেশিকীকরণ, আমদানি-রফতানিতে মানহানিকর বৈষম্য, অনেক না বলা কথা বলে দেয়। দেশটা সরকারের নয়, দলের নয়, পরিবারের নয়, নয় কোনো ব্যক্তিত্বের, দেশের মালিকানা জনগণের- এ বোধটুকু রক্ষা করলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ‘আমরা আর মামুরা বুদ্ধিমান- আর সব বোকা’- বরিশালের এই প্রবচন প্রত্যাখ্যান করে, আমরাই বোকা; জনগণ ও বিশ্ববাসী বুদ্ধিমান, এটা মাথায় রাখলে অনেক ক্লেদ এড়িয়ে যাওয়া যেত।
বিএনপির সমাবেশ দিবসে সরকার যদি বেনামে হরতাল ডেকে বলে, হরতালের সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই- তবে কি দেশ ও বিশ্ববাসী হাসবে না? দাবি আদায়ের হরতালের জন্য সমাবেশ দিনকে বেছে নেয়া, সেই সাথে উপজাত হিসেবে সমাবেশে আসতে বাধা দেয়া, সমাবেশগামী মিছিলে হামলা, নৌকা, খেয়া, অটোগাড়ি, ট্রলার, ভ্যান-যাদের সাথে দাবি আদায়ের সম্পর্ক নেই-বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি অনুঘটক দিয়ে কি বুঝা যায় না- এটা সরকারি খে-ল-আ (খেলা)।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশের ভূখন্ড প্রবেশ করে খোলাখুলিই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন এবং অনুগত দলকে ক্ষমতায় বসানোর পোক্ত ব্যবস্থা করেন। এটা কি স্বাধীন দেশের জন্য মর্যাদা হানিকর নয়? তারকা মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী মহোদয় বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করলে বাংলাদেশ ভারতের পেটে ঢুকে যাবে জানলে মুক্তিযুদ্ধ করতাম না। এখন আর জামায়াতকে দোষ দেব না। জামায়াত সেটা ৪৫ বছর আগে বুঝেছে, সেটা আমাদের বুঝতে ৪৫ বছর সময় লেগেছে।’ (সূত্র : নয়া দিগন্ত ২২ জুলাই ’২০ বুধবার, পৃষ্ঠা-৭ : নিবন্ধ-বর্ডার কিলিং: উদ্ভট তথ্য-হারুন-আর রশীদ। এই নিবন্ধ বা উপ সম্পাদকীয় কি বিদেশীরা পড়েননি? যারা ভারতের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আদিখ্যেতা করেন তারা ভুলে যান এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে- কেউ দয়া করেনি। দয়া করেনি; তবে কী করেছে বন্ধু? সেটি ইতিবৃত্তের আরেক অধ্যায়। এটা কত কষ্টের, কত রক্তক্ষরণের। স্বাধীনতার একান্ন বছর পর বিদেশীদের মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, ‘বাংলাদেশ কোনো পরাধীন দেশ নয়।’ বিদেশীরা আমাদের দেশকে কেন পরাধীন ভাবছেন?
সার্বভৌম বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার জন্য আমি ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি,’ তারপরেও কূটনীতিবিদরা শিষ্টাচার বজায় রাখবেন, বাংলাদেশকে পরাধীন নয় মনে করবেন, এটা ভাবলে ‘ঘোড়ায় ভি হাছবো’। তাজ্জব ব্যাপার, মন্ত্রী মহোদয় তারপরেও স্বপদে বহাল আছেন- এটা যদি কোনো বঙ্কিম ইশারা দেয় তবে কাকে দোষ দেবো?
দীর্ঘশ্বাস, এই-বোকারা শুধু দিয়েই গেল, কিছু পেল না, ভোটের অধিকারও না। হরিদাসী সিঁদুর মুছল, অটলা সম্ভ্রম দিলো, আলপনার কপাল পুড়ল, রহিমদ্দির নাও ডুবল-তারপরেও স্বাধীনতা অধরা।
মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন
নূরীয়া লাইব্রেরি, ঝালকাঠি


আরো সংবাদ



premium cement