আতাউস সামাদকে ভোলার নয়
- শওকত মাহমুদ
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:০৯
সাংবাদিকতা করা বা করানো অথবা পড়ানোর বিষয় এলেই আতাউস সামাদকে মনে করতে হয়। এখনো। ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের নিচতলায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার অনার্স ব্যাচের প্রথমবর্ষে ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসে পরিচিত হয়েছিলাম স্যারের সঙ্গে। সাংবাদিকতার ছাত্র হয়েই মগজে একটা মাস্তানি অনুভূতি ছিল, বড় সাংবাদিক হয়ে গেছি। তিনি আবার কোন্ সাংবাদিক? কিন্তু অভিজ্ঞতা দিয়ে বিদ্যাকে বুননের সম্মোহনী বক্তৃতা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এ তো দেখি মহাপুরুষ। রিপোর্টিংয়ের মরকতমণি। আজ ২৬ সেপ্টেম্বর তার নবম মৃত্যুবার্ষিকী।
শুধু রিপোর্টিং কেন; সব বিষয়ে শিশুর মতো ক্লান্তিহীন কৌতূহলী, তর্কপ্রিয়, তথ্যের ন্যায্যতা নিয়ে আপসহীন এবং আত্মসম্মানবোধে টনটনে ছিলেন আতাউস সামাদ। আমার জন্মেরও আগে তার সাংবাদিকতা শুরু। তখন এ অঞ্চলের সাংবাদিকতায় ‘ফাইভ ডব্লিউস’ আসেনি। কিন্তু টেলিগ্রামের মোদ্দা কথা অর্থাৎ ‘মাদার সিক কাম শার্প’ গোছের সংবাদের চল ছিল। আর এর আগে সাংবাদিকতার লেখালেখি সাহিত্যকে সঙ্গে নিয়েই ছিল; পণ্ডিতেরা যাকে বলেনÑ ওহবীধপঃ ংপরবহপব ড়ভ ঃৎঁঃয ঃবষষরহম. জানা-অজানার ‘গোধূলি’ অঞ্চলকে স্পষ্ট করা। ওই জমানার প্রায় সব সাংবাদিকই সাহিত্যকে বুনিয়াদ ধরে মানুষকে তথ্য দিতেন। কিন্তু অদ্ভুত কথা, আতাউস সামাদ বিদ্যাগত রিপোর্টিংকে অধ্যাত্মধর্ম বানিয়ে ফেললেন। আতাউস সামাদ পারিবারিকভাবে, শিক্ষাগতভাবে, চিন্তাচেতনার ক্ষেত্রে সৎ আলোকিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি ছিলেন। ধর্মপ্রাণ কিন্তু ধর্মান্ধ নন যারা তদানীন্তন পূর্ববাংলার সাহিত্য ও সাংবাদিকতার স্বকীয়তা ধরে পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতার সংগ্রামকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। ১৯৭০-এ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বাধীনতা বাংলাদেশের সেøাগান দেয়া, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং যখনই সরকার স্বৈরাচার হয়েছে, সাংবাদিকতা এবং দায়িত্ববোধ দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন। এরশাদের আমলে জেল খেটেছেন। তিনি এবং বিবিসি একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন।
ঝঃুষব রং ঃযব সধহ – এই চমকপ্রদ সত্যটা অনেক আগের। স্টাইল একজন লেখক সাংবাদিকের নির্বাচিত প্রণালী, তার প্রক্ষেপণ পদ্ধতির মনোনীত স্বর। আতাউস সামাদ অমন ভিন্নতা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। প্রচলিত ধারণায় একজন সাংবাদিক মানে, দুঃসাহসী। আতাউস সামাদ তা দেখিয়ে গেছেন বিবিসির রিপোর্টিংয়ে। স্বৈরাচারী এরশাদ যেদিন মতিঝিলে বিসিসিআই ভবন পরিদর্শনে গেলেন, সে দিন ওই সংস্থার কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে সেøাগান দিয়েছিলেন। আতাউস সামাদ জাতিকে সে খবর জানিয়ে জেলে গেলেন। নামী সাংবাদিক মানে যদি হয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর সাক্ষী থেকে রিপোর্ট করার সক্ষমতা, তাহলে বুঝতে হবে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দিল্লি থেকে শেখ মুজিবের দেশে ফেরার ফ্লাইটে তিনি একমাত্র সাংবাদিক সহযাত্রী ছিলেন। জবাবধষরহম ৎবঢ়ড়ৎঃ যদি হয় একজন প্রশংসিত সাংবাদিকের মাপকাঠি, তাহলে ভুলতে পারি না ১৯৯১ তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার খবরটি আতাউস সামাদই প্রথম দিতে পেরেছিলেন।
আতাউস সামাদ আগাগোড়াই তার মনস্তত্ত্বে গুরুতরভাবে বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। একটা স্বাধীন, স্বয়ম্ভর, আত্মমর্যাদাশীল জাতি হোক; আপন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হোক। গণতন্ত্রে উদ্দীপ্ত থাকুক। তিনি এ স্বপ্নটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইতেন। ঈড়ষষবপঃরাব ফৎবধসরহম ধং ংড়পরধষ ঢ়ৎধপঃরপব কিন্তু সে স্বপ্নটার রূপায়ণ তিনি দেখে যেতে পারেননি। তাই তার দীর্ঘশ্বাসÑ ‘জীবনের এতটা পথ হাঁটলাম, কিন্তু আলোর দেখা পেলাম না।’ কবে দেখব দেশকে উদ্ভাসিত আলোয়? সময় তো নিষ্ঠুর, কাউকে রেয়াত করে না। আমরাও থাকব না, কিন্তু আতাউস সামাদের মতো লড়াইটা জারি রাখতে অসুবিধা কোথায়? হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা