৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জাতীয় নেতৃত্ব ও পররাষ্ট্রনীতি

দেশ জাতি রাষ্ট্র
-

লিও টলস্টয় তার পৃথিবী বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ডধৎ ্ চবধপব’-এ মন্তব্য করেনÑ “ঞযব যরমযবৎ ধ সধহ ড়হ ঃযব ংড়পরধষ ষধফফবৎ, ঃযব সড়ৎব ঢ়বড়ঢ়ষব যব রং পড়হহবপঃবফ রিঃয ধহফ ঃযব সড়ৎব ঢ়ড়বিৎ যব যধং ড়াবৎ ড়ঃযবৎং, ঃযব সড়ৎব বারফবহঃ রং ঃযব ঢ়ৎবফবংঃরহধঃরড়হ ধহফ রহবারঃধনরষরঃু ড়ভ যরং বাবৎু ধপঃরড়হ...” এভাবে নেতৃত্ব অনিবার্য হয়ে ওঠে দেশ-জাতি-রাষ্ট্রে। বর্তমান বিশে^র আন্তর্জাতিক রাজনীতিও এর সাক্ষ্য দেয়। জাতির নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সেভাবেই জাতির নেতা পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এন্ড্রয়া কে গ্রোফ তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত গ্রন্থ ‘খবধফবৎংযরঢ় রহ ঋড়ৎবরমহ চড়ষরপু’ গ্রন্থে বলেনÑ “ডযবঃযবৎ রহ ধ ফবসড়পৎধপু ড়ৎ ধঁঃযড়ৎরঃধৎরধহ ংুংঃবস ড়ৎ রহ ধ ডবংঃবৎহ, ওংষধসরপ ড়ৎ অভৎরপধহ পঁষঃঁৎব, ষবধফবৎং ধৎব পড়হংঃধহঃষু বহমধমবফ রহ ধ মধসব ড়ৎ সধৎংযধষরহম ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ঃড় ঢ়ঁৎংঁব ঃযবরৎ ঢ়ড়ষরঃরপধষ মড়ধষং. অষষ ষবধফবৎং ভধপব ঃযব পযধষষবহমব ড়ভ ঃৎুরহম ঃড় সধঃপয ঃযবরৎ ধমবহফধ ঃড় ঃযবরৎ বহারৎড়হসবহঃ ধহফ ড়ভ মবঃঃরহম ঃযবরৎ পড়হংঃরঃঁবহপরবং ঃড় নু রহঃড় ঃযবরৎ ঢ়বৎংঢ়বপঃরাব.” এভাবে জাতীয় নেতৃত্ব সংবিধান, সংসদ, রাজনৈতিক দল, মন্ত্রিসভা, কূটনীতিবিদ এবং পরিপাশর্^কে অতিক্রম করে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে অনিবার্য ভূমিকা পালন করে।
জাতীয় নেতৃত্ব বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে স্বকীয় ভূমিকা পালন করে। সুকৌশলী জাতীয় নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের বণ্টনে এবং নিজ স্বার্থের আঁতাতে অভ্যন্তরীণ এবং বহিস্থÑ উভয় ক্ষেত্রে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তৃতীয় বিশ^ এবং প্রথম বিশ^ সর্বত্রই একই দৃশ্য। কে. গ্রোফ তার গবেষণায় প্রমাণ করেন, একক কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেই এরা ক্ষান্ত হয় না, বরং পরিবেশ পরিস্থিতিকে বা আন্তর্জাতিক সঙ্কট সমীকরণকে নিজ ক্ষমতার অনুকূলে বিন্যাস করে। এ ক্ষেত্রে চারটি রণকৌশল গ্রহণ করে। এগুলো হচ্ছেÑ সম্পর্কের পরিধি বিস্তৃতকরণ, অর্থবিত্ত দিয়ে বশীকরণ, বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি এবং ভীতি প্রদর্শন। শক্তি-সামর্থ্য, সুবিধে-অসুবিধে ভেদে ভেতরে এবং বাইরে এর চাতুর্যপূর্ণ প্রয়োগ ঘটে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ এবং বহিস্থ বিষয়গুলোর পারস্পরিক অপব্যবহারও লক্ষ করা যায়। তাহলে এটা অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ বিষয়গুলো অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িতÑ একটি থেকে অপরটি পৃথক করা কঠিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন স্বীকার করেন, “ঞযব সড়ৎব ঃরসব ও ংঢ়বহফ ড়হ ভড়ৎবরমহ ঢ়ড়ষরপু... ঃযব সড়ৎব ও নবপড়সব পড়হারহপবফ ঃযধঃ ঃযবৎব রং হড় ষড়হমবৎ ধ পষবধৎ ফরংঃরহপঃরড়হ নবঃবিবহ যিধঃ রং ভড়ৎবরমহ ধহফ ফড়সবংঃরপ.” ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে সিনিয়র বুশের অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত এবং জিম্বাবুয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ক্ষমতা না ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে নেতৃত্বের ধরন-ধারণ বোঝা যায়। এভাবে রাষ্ট্র নেতৃত্ব তার ক্ষমতাকে সংহত করার জন্য পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে। বর্তমান পৃথিবী যতই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে সন্নিহিত হচ্ছে ততই অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ সমস্যা একাকার হয়ে যাচ্ছে। গতানুগতিক ধারণা বা কাঠামোগত ক্ষমতা ক্রমশ লোপ পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যক্তি প্রাধান্য জোরালো হচ্ছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো শীর্ষ গণতান্ত্রিক দেশে ব্যক্তি সর্বস্বতার প্রকাশ ঘটছে। এটা ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে যে, জাতীয় নেতৃত্ব পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করছে এবং তা তার মতো করে বাস্তবায়ন করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এরকম উদাহরণ দেয়া যায় যেÑ প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত মনোভঙ্গি, সংস্কৃতি এবং বোঝাপড়া পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে পার্থক্য সৃষ্টি করছে। জেরাল্ড ফোর্ড ইরান পরিস্থিতিকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করতে চাননি। অপর দিকে প্রেসিডেন্ট ডব্লিউ বুশ রাসায়নিক অস্ত্র মজুদের অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করেন এবং সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করেন। পরবর্তীকালে জানা যায়, অভিযোগটির কোনো সত্যতা ছিল না। উভয় ক্ষেত্রেই মনোভঙ্গির পার্থক্য স্পষ্ট। বারাক ওবামা কূটনীতির মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক নিরোধ চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েই সেই কষ্টার্জিত আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করেন। একজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ রবার্ট ডব্লিউ মারি উল্লেখ করেন, দুটো বিষয় জাতীয় নেতৃত্বকে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে সুবিধা দেয়। প্রথমত, জনগণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতা-কূটিলতা সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখে না। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহারের অবাধ সুযোগ জাতীয় নেতৃত্ব ব্যবহার করতে পারে। জাতীয় নেতৃত্বের বদ্ধমূল ধারণা বৈদেশিক সম্পর্ককে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক উভয়ভাবে পরিচালিত করতে পারে। একসময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফস্টার ডালেস ছিলেন কমিউনিজমের প্রতি গুরুতর এলার্জিক। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সবকিছুই তার দৃষ্টিতে ছিল অগ্রহণযোগ্য।
একই পারসেপশন এবং পাকিস্তানপ্রীতির কারণে নিক্সন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা জাতীয় নেতা রাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারেন। এমনিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্যবাদী নীতি গ্রহণ করে চলেছে। সিনিয়র এবং জুনিয়র বুশ তাই সহজেই মার্কিন নীতিকে তাদের ব্যক্তিগত মনোভঙ্গির পরিপূরক হিসেবে প্রভাবিত করতে পেরেছেন। জাতীয় নেতৃত্বের ভুল বা আগ্রাসী সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অনেক জাতীয় নেতৃত্বের ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লিবিয়ার গাদ্দাফি, সিরিয়ার বাশার আল আসাদ এবং সৌদির বর্তমান যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানকে এ ধরনের ক্ষতিকর নেতৃত্ব বলে গণ্য করা যায়।
জাতির নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী সমমর্যাদা ও সমগুরুত্বের দাবিদার। কিন্তু প্রেসিডেন্টশাসিত ব্যবস্থাকে অধিকতর ক্ষমতাধর বিবেচনা করা হয়। সবসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এর উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সংসদীয় শাসনব্যবস্থা যদিও অধিকতর গণতান্ত্রিক তবুও কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ‘সংসদীয় স্বৈরাচার’-এর ধারক হয়ে দাঁড়ান। এসব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব, সম্মোহনী ক্ষমতা, দলে স্বীয় নিয়ন্ত্রণ এবং আগ্রাসী চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ জুলিয়েট কার্বো পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীদের ক্ষমতা প্রয়োগের কৌশল নিয়ে এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেশ-কাল-পাত্রভেদে পার্থক্য নির্দেশ করেন। তিনি বলেন, জন মেজর এবং মার্গারেট থ্যাচার, হেলমোট কোহল বা উইলি ব্রান্ড এবং ব্রেইন মালরনি অথবা পিয়েরে ট্রুডোÑ একই পদে একই সাংবিধানিক কাঠামোতে কাজ করলেও তাদের ব্যক্তিগত উষ্ণতায় পররাষ্ট্রনীতিও উষ্ণতা পেয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হেগান মন্তব্য করেন, “ঞযরং রং হড় ংঁৎঢ়ৎরংব ংরহপব ঃযব ংঃঁফু ড়ভ ভড়ৎবরমহ ঢ়ড়ষরপু ফবপরংরড়হ-সধশরহম যধং মবহবৎধষষু পড়হপবহঃৎধঃবফ ড়হ রহফরারফঁধষং ধহফ মৎড়ঁঢ়ং রহ ঃযব টহরঃবফ ঝঃধঃবং ড়ৎ ড়হ ঢ়ৎবফড়সরহধহঃ ষবধফবৎং রহ হড়হ ফবসড়পৎধপরবং.” জাতীয় নেতৃত্ব ছলে-বলে-কৌশলে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণকে প্রভাবিত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কোনো বিষয়ে অনুকূল বা প্রতিকূল সিদ্ধান্ত তিনি প্রভাবিত করতে পারেন, এড়িয়ে যেতে পারেন, স্থগিত করতে পারেন, সাব-কমিটি করতে পারেন এবং গণতান্ত্রিক হলে ক্যাবিনেটে উপস্থাপন করতে পারেন। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের বাইরেও একান্ত নিজস্ব পরিসরে ‘কিচেন কেবিনেট’ নামে পরিচিত বলয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে। এ ছাড়া রাষ্ট্রটি যদি কোনো জোটভুক্ত হয়ে থাকে অথবা কোনো আঞ্চলিক শক্তির তাঁবেদার হয় তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় নেতৃত্ব একক ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু জাতীয় নেতা যদি হন আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন বা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিখ্যাত, তা হলে তিনি অতিক্রম করতে পারেন জোটকে অথবা পাশর্^শক্তিকে।
একটি দেশের জাতীয় শক্তি অনেকাংশে নির্ভর করে জাতীয় নেতৃত্বের ওপর। হেরল্ড স্পরাউট এবং মার্গারেট স্পরাউট মন্তব্য করেন, “অ পড়ঁহঃৎু রং নড়ঁহফ ঃড় নব ংঃৎড়হমবৎ ধহফ সড়ৎব ঢ়ড়বিৎভঁষ রভ রঃং ষবধফবৎং যধাব ঃযব ংঃৎবহমঃয ড়ভ রিংফড়স”. জাতীয় নেতৃত্ব হচ্ছে জাতীয় শক্তির সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান। সফল নেতৃত্ব জাতীয় শক্তির সমস্ত উপাদানকে একত্রিত করে দক্ষতার স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে সক্ষম। জাতীয় নেতৃত্বকে এতটাই গুরুত্ব দেয়া হয় যে, তা জাতীয় সফলতা-ব্যর্থতার পরিব্যাপক হয়ে ওঠে। জাতীয় নেতৃত্ব বলতে সাধারণত সরকারপ্রধানকে বোঝানো হয়। জাতীয় সঙ্কটের মুহূর্তে জাতীয় নেতৃত্বের ভূমিকা আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে। জাতীয় নেতৃত্ব একটি জাতিকে সফলতা অথবা ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সাহসী সমরবিদ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার জাতিকে সফলতার দিকে নিয়ে যান। অপর দিকে হিটলারের একগুয়েমি ও দূরদৃষ্টির অভাবে জাতীয় পর্যাপ্ত শক্তি থাকা সত্ত্বেও জার্মানি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। জার্মানির পরাজয়ের পর লুডউইক ইরহাদের অর্থনৈতিক নেতৃত্বে জার্মানি ঘুরে দাঁড়ায়। শুধু এরদোগানের নেতৃত্বের গুণে তুরস্ক আন্তর্জাতিকভাবে জাতীয় শক্তি প্রদর্শনে সক্ষম হচ্ছে। জাতীয় নেতৃত্ব যদি হয় বিশ^সভায় নন্দিত তা জাতিকে যেকোনো বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ইসলামী সম্মেলনে যোগদানের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশে^র স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করেন। ইতিহাসে আরো উদাহরণ রয়েছে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধে বিপর্যয় এড়াতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরু ছুটে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির কাছে। কেনেডি নেহরু সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। মার্কিন শক্ত হুমকিতে এরপর চীনারা পিছু হটে। অবশ্য পরে নেহরু সম্পর্কে কেনেডির মোহমুক্তি ঘটে। ভারত যখন ফরাসি ও পর্তুগিজ বন্দরগুলো ক্রমেই পকেটস্থ করে, তখন কেনেডি বলেছিলেন ‘ঐব রং ধ ঢ়ৎরবংঃ রহ ঃযব ঢ়ৎড়ংঃরঃঁঃব.’ যা হোক, তৃতীয় বিশে^ নিজ নিজ নেতৃত্বের গুণে বিখ্যাত হয়েছেন নাসের, নক্রুমা, টিটো ও সুকর্ন।
অনেকে মনে করেন, প্রত্যেক দেশের একটি নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আছে এবং সেই শক্তিকে বাদ দিয়ে জাতীয় শক্তি নিরূপণ করা সম্ভব নয়। জাতীয় নেতৃত্বকেও জাতীয় শক্তির বা জাতীয় মনস্তত্ত্বের দিকে নজর দিতে হয়। একটি দেশ তার বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ ও পরিচালনায় জাতীয় শক্তিকে অস্বীকার করতে পারে না। ‘সরকারের নীতি বিশেষ করে বৈদেশিক নীতির পেছনে যদি জনসমর্থন থাকে তবে জাতীয় মনোভাব দৃঢ় হওয়া স্বাভাবিক, আর যদি সরকারের নীতি জনমতের বিরুদ্ধে যায় তবে তা দিয়ে জাতীয় মনোবল ক্ষুণœœ হতে বাধ্য।’ (গৌরিপদ ভট্টাচার্য : ১৯৯১:৮৪)।
নাগরিকের কোনো অংশ বিশেষ যদি সরকারের হাতে অবহেলিত মনে করে তবে সঙ্কটকালে সেই অংশ সরকারকে সাহায্য না করে বরং প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে, ফলে জাতীয় সংহতি অর্জিত হয় না। জাতীয় শক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করা এবং তা কার্যকরি করে তোলা সরকারের লক্ষ্য। এই দায়িত্ব সুষ্ঠুরূপে প ালন করতে কোনো দেশের সরকার যদি ব্যর্থ হয় তবে সেদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। জাতীয় শক্তির বাস্তব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত না হলে দেশটি দ্বৈধতার আবর্তে নিপতিত হতে পারে। সরকার যদি জনসাধারণের সমর্থন লাভ করতে ব্যর্থ হয় তবে সামরিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও শক্তি বৃদ্ধি পায় না। সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সহযোগিতা জাতীয় শক্তির একটি বড় ভিত্তি। সরকারের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতি যাতে জনমতের অনুকূল হয় তা নিশ্চিত করা যেকোনো জনমুখী সরকারের কর্তব্য।হ
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
গধষ৫৫লঁ@ুধযড়ড়.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement

সকল