০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দি ব স : কন্যাশিশু দিবস

-

মেয়ে সন্তান হয়েছে বলে অভিমানে স্ত্রীর মুখ দেখেননি, এমন গল্প আগে ঘরে ঘরেই শোনা যেত। ছেলে সন্তানের জন্ম যেখানে উৎসব, সেখানে মেয়ে শিশুর জন্ম মানেই ছিল শোকের পরিবেশ। তবে কন্যাশিশুর জন্য এখন সেই সময় অনেকটাই বদলে গেছে।
আগের তুলনায় বর্তমানে কন্যাশিশুর জন্য বাবা-মায়ের চাহিদা বেশ বেড়েছে। এখন আর মেয়ে সন্তান হলে খুব বেশি একটা নেতিবাচক চোখে দেখা যায় না।
তবে এই পরিবর্তনটা খুব কম সময়ে আসেনি। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, অর্থনীতি ও গ্রামীণ পরিবেশ খুব দরকারি ফ্যাক্টর। যারা দরিদ্র তাদের ভাবনা থাকে, মেয়েটা তো শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে, তাহলে মেয়েটা বাবা-মাকে কিভাবে দেখবে। ছেলে হলে আর সেই সমস্যা থাকে না।
এই জায়গায় মেয়ে নিয়ে ভাবনায় একেবারে পরিববর্তন আসেনি। তবে এখন মেয়েরা ঘর থেকে বের হয়েছে। আবার অনেক মেয়ে ঘরমুখীও হচ্ছে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে বা সন্তান হওয়ার পরে চাকরি ছেড়ে দেয়। অনেক মেয়ে আছে যারা স্বামী ‘অ্যাফোর্ড’ করতে পারলে চাকরি ছেড়ে দেয়।
পরিবর্তন আনতে হলে বেশ কিছু জায়গায় নজর দিতে হবে। বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অংশগ্রহণ নেই। ফলে এই সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। তাই সমস্যা সমাধানে পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ছেলে যেমন মেয়ের সাথে ঘরে কাজ করবে, মেয়েও ছেলেদের মতোই সব ধরনের সুবিধা পাবে। সব সন্তানকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে, সেই পরিবারের মেয়েরা অনেক ভিন্নভাবে বেড়ে উঠবে।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু এবং এদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই কন্যাশিশু। শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলেও আজো দেশের বেশির ভাগ কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরের আগেই।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০০৭-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখনো ১৮ বছরের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে এবং দুই দশক ধরে এ হারের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর ১৯ বছরের আগেই গর্ভবতী হচ্ছে ৬৬ শতাংশের এক শতাংশ। বাংলাদেশে নারীর বিয়ের গড় বয়স ১৫ বছর তিন মাস।
ইউনিসেফের তথ্যমতে, শিশু বিয়ের হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। গত ৩০ বছরে বাল্যবিয়ে আনুপাতিক হারে হ্রাস পেলেও গ্রামাঞ্চলে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমস্যাটা প্রকট।
সারা দেশে নারীর প্রতি যেসব সহিংসতা চলছে সেই কারণেও অনেকে মেয়ে সন্তান চান না। মেয়েদের আমরা অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে বড় করছি, এর সাথে বাল্যবিয়ে তো আছেই।
একটি পরিবারে মেয়েরা যে পরিমাণ ‘না’ শুনে বড় হয়, একটি ছেলে সেই পরিমাণ ‘না’ শব্দ শুনে বড় হয়নি। ছেলেকে আমরা যে পরিমাণ সমর্থন দেই, মেয়েদের সেই পরিমাণ সমর্থন দিতে পারি না। এসব বিষয়সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হলে এতটা সহিংসতা হতো না।
কন্যাশিশুর প্রতি জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য রোধে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু বিকাশের বিষয়টিকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ২০০০ সালে তৎকালীন সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে শিশু অধিকার সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনকে কন্যাশিশু দিবস হিসেবে পালনের লক্ষ্যে ৩০ সেপ্টেম্বরকে ‘জাতীয় কন্যাশিশু দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। তখন থেকেই প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।
শিশু অধিকার সপ্তাহ ও কন্যাশিশু দিবসের উদ্দেশ্য হলো, শিশুদের ব্যাপারে যেন আমরা যতœবান হই, তারা যেন কোনো বঞ্চনা বা অবহেলার শিকার না হয়, সে জন্য সবাইকে সচেতন করা। কিন্তু যে লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যে দিবসটি পালিত হয়, সেই উদ্দেশ্য কি আদৌ পূরণ হচ্ছে? আসলেই কেমন আছে আমাদের কন্যাশিশুরা? আমাদের দেশের মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। দেশের ৬৬ শতাংশ মেয়েরই বিয়ে হচ্ছে অল্প বয়সে। আমাদের দেশে যত শিশু অপুষ্টিতে ভোগে, তার বেশির ভাগই মেয়ে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এক থেকে চার বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে ছেলেশিশুদের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি মেয়েশিশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। পাঁচ বছরের কম বয়সী মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ১১ শতাংশ কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য পায়।
এই হচ্ছে আমাদের দেশের কন্যাশিশুদের অবস্থা। যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে কন্যাশিশুদের ওপর এসব নিগ্রহের বিষয়। আমাদের দেশে মনে হয় সবই সম্ভব। কেমন করে বাঁচবে এখানে শিশুরা?
সময় হয়েছে কন্যাশিশুদের ওপর এসব বর্বর আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর। সে জন্য শুধু রাষ্ট্র বা সরকার নয়, সচেতন হতে হবে গোটা সমাজকে। শুধু দিবস পালনের মধ্যে কার্যক্রম সীমিত রাখলে চলবে না, কন্যাশিশুদের কল্যাণে বাস্তবসম্মত কাজ করতে হবে। দিবসের মর্মটিকে সবার মনের গভীরে কিভাবে পৌঁছে দিতে পারি, তা নিয়ে ভাবা ও কাজ করার সময় এসেছে।
লেখক : সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ


আরো সংবাদ



premium cement
তরুণ্যেই অর্ধশতাধিক ইসলামী সঙ্গীতের রচয়িতা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে কৃষকদের যত ভোগান্তি ইসরাইলের রাফা অভিযান : জার্মানির কড়া প্রতিক্রিয়া চট্টগ্রামে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে একসাথে কাজ করবে সিএমপি ও চসিক রাফায় ইসরাইলি অভিযানে ‘আমি বিরক্ত ও ব্যথিত’ : জাতিসঙ্ঘ প্রধান ৩ দিনের সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে তুরস্ক নৌবাহিনীর জাহাজ আশুলিয়ায় ৫ টাকার উন্মুক্ত কবরস্থান উদ্বোধন গাবতলী বাস টার্মিনাল হবে মাল্টিমোডাল স্টেশন রাবিতে ছাত্রদল নেতাকে হলরুমে আটকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে খুলনার পিপির আইন পেশা পরিচালনার ওপর এক মাসের নিষেধাজ্ঞা কুলাউড়ায় যুবকের লাশ উদ্ধার

সকল