২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা মোকাবেলায় করণীয়

-

আল্লাহ তায়ালা রোগ দেন, আবার সুস্থতা দান করেন। যখন রোগাক্রান্ত হই, তখনই আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেন। (সূরা আশশোয়ারা, আয়াত ৮০) হাদিসে ওষুধ ব্যবহার ও চিকিৎসার প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে। কেউ কেউ মহানবী সা:কে প্রশ্ন করেছিলেন : আমরা কি ওষুধ ব্যবহার করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রোগের চিকিৎসা করবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা যত রোগ সৃষ্টি করেছেন, তার ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। তবে একটি রোগের চিকিৎসা নেই। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন : সেটি কোন রোগ? তিনি বললেন, বার্ধক্য। (আবু দাউদ, কুরতুবি)
হজরত আইয়ুব আ: পার্থিব ধন-দৌলত ও সহায় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে এমন এক শারীরিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন যে, কেউ তাঁর কাছে আসতে সাহস করত না। তাঁর দেহ দুর্গন্ধময় ঘায়ের দরুন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তখন সব চাকর-চাকরাণী ও দাস-দাসী তাঁকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। তিনি লোকালয়ের বাইরে পুঁতিগন্ধপূর্ণ আবর্জনাময় স্থানে দীর্ঘ সাত বছরেরও বেশি সময় পড়ে থাকেন। তাঁর স্ত্রী বিবি রহিমা তাঁর সেবা করতেন। পরিশেষে আল্লাহ পাক এই নবীর দোয়া কবুল করে তাঁকে সুস্থতা দান করেন। তাঁর ধন-দৌলত এবং সন্তানসন্ততিও ফিরিয়ে দেন। সন্তানদের সমসংখ্যক বাড়তি সন্তানও দান করলেন পরম করুণাময়।
হজরত মুসা আ: পরম আরোগ্যদাতা আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! রোগ কী কারণে এবং আরোগ্যইবা কী কারণে ঘটে? উত্তর এসেছিল, উভয়ই আমার আদেশে ঘটে থাকে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, চিকিৎসক তবে কোন কাজের জন্য তৈরি হয়েছে? উত্তর এলো, কতগুলো লোক চিকিৎসাকার্যে ওষুধের উপলক্ষে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পাবে এবং আমার বান্দাদের প্রফুল্ল রাখবে। এ উদ্দেশ্যে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের উচিত, নিছক ওষুধের ওপর ভরসা না করে, যিনি ওষুধ সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি ভরসা করা; কেননা বহু লোক ওষুধ সেবন করেও মারা যায়।’
চিকিৎসক বা ডাক্তার রোগীকে ওষুধ দিতে পারেন, কাটা সেলাই করে দিতে পারেন, ভাঙা হাড় সোজা করে বেঁধে দিতে পারেন, কোনো অঙ্গ কেটে ফেলতে পারেন, অন্য কারো অঙ্গ এনে সেলাই করে দিতে পারেন অথবা কৃত্রিম অঙ্গ বসাতে পারেন, কিন্তু তা জোড়া লাগা না লাগা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হওয়া না হওয়া কিংবা সুষ্ঠুভাবে দেহ তাকে গ্রহণ করা না করার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ তায়ালার সরাসরি কুদরতে দেহে কাজ করে। এতে অন্য কারো কোনো ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ নেই।
পবিত্র আল কুরআনে বলা হয়েছেÑ পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজে গ্রহণ করেছেন। (সূরা হুদ, আয়াত-৬) অপর দিকে বলা হয়েছে, নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা জমিনের ওপর চলাফেরা করো এবং আল্লাহর প্রদত্ত জীবিকা অন্বেষণ করো। (সূরা জুমআ, আয়াত-১০) এই দুই আয়াতের মর্মার্থ হলো, হাত গুটিয়ে বসে থাকলে রিজিক আপনাআপনি কারো কাছে চলে আসবে না। এ জন্য যথাযথ চেষ্টা করতে হবে। রিজিক অর্জনের জন্য নানা পেশার সৃষ্টি হয়েছে দুনিয়াতে। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘কোনো জাতি নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না ঘটানো পর্যন্ত আল্লাহ পাক তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটান না।’ অর্থাৎ উপায় উপকরণ ও নিয়ম অবলম্বনের মাধ্যমেই আল্লাহ পাকের নিয়ামত লাভ করে মানুষ। যখন মানুষ নিজেদের অবস্থা অবাধ্যতা ও নাফরমানিতে পর্যবসিত করে ফেলে, তখন আল্লাহও স্বীয় কর্মপন্থা পরিবর্তন করে নেন। যখন আল্লাহ কাউকে আজাব বা শাস্তি দিতে চান, তখন কেউ তা রদ করতে পারে না। মানুষের হেফাজতের জন্য ফেরেশতাদের পাহারা নিয়োজিত থাকে। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করে কুকর্ম, দুশ্চরিত্র ও অবাধ্যতার পক্ষ বেছে নেয়, তখন আল্লাহ তায়ালাও রক্ষামূলক পাহারা উঠিয়ে নেন মানুষের ওপর থেকে। এরপর আল্লাহর গজব ও আজাব তাদের ওপর নেমে আসে। অতএব, নিজেদের দুর্দশার জন্য ‘ভাগ্য’কে নয়, নিজেদের কর্মফল দায়ী বলেই মনে করতে হবে।
আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট সব জীবের জন্য রিজিক নিশ্চিত করলেও খাদ্য উৎপাদন, বণ্টন, ব্যবহার ও বিপণনে অব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় তৎপরতার ঘাটতির কারণে খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। অনেক সময় কৃত্রিমভাবেও সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়, যা মানুষই করে থাকে। রিজিকদাতা আল্লাহর আইন এই যে , তিনি একজনকে দান করেন অন্যজনকে দেয়ার মাধ্যমে এবং এই মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অন্যদের দিয়ে থাকেন। তিনি নিজে সবাইকে প্রত্যক্ষভাবে দিতেও সক্ষম । জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ, পশু-পাখিকে তিনি এমনিভাবে রিজিক দান করে থাকেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার প্রাণ সঞ্চার করার জন্য রিজিকের ব্যাপারে একজনকে অপরজনের মাধ্যমে করা হয়েছে, যাতে দাতা সওয়াব পায় এবং গ্রহীতা আল্লাহর অনুগ্রহ স্বীকার করে নেয়। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ওপরই সমগ্র বিশ্বব্যবস্থার ভিত্তি রচিত।
এক বেদুইন মহানবী সা:কে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি আগে উটকে বাঁধব ও পরে তাওয়াক্কুল বা ভরসা করব, নাকি তাকে ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? মহানবী সা: বললেন, আগে উটকে বাঁধো; তারপর তাওয়াক্কুল করো। সারা বছর লেখাপড়া না করে শুধু পরীক্ষার আগে পরীক্ষায় পাস করার জন্য কিছু লেখাপড়া করলে পরীক্ষায় ভালো পাস করা যাবে না। দোয়া ও দাওয়া উভয়ের সংমিশ্রণেই আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। আল্লাহ পাক সে উদ্যোগের ফলদাতা (সফলতা বা বিফলতা)।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: যুদ্ধের ময়দানে যেতেন। ওহুদের যুদ্ধে মহানবী সা:-এর সামনের উপর ও নিচের সারির চারটি দাঁতের মধ্য থেকে নিচের পাটির ডান দিকের একটি দাঁত শহীদ এবং তাঁর মুখমণ্ডল আহত হয়েছিল। মহানবী সা: এই যুদ্ধে লৌহবর্ম পরিধান করেছিলেন। তিনি যুদ্ধের ময়দানে না গিয়ে বিজয়ী হতে মসজিদে বসে বসে দোয়া করেননি।
মহামারী করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে কয়েক লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বে এ পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক বা চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। সেই সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং শরিয়াহর আলোকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের পাপ ও অন্যায় থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে আন্তরিকভাবে। ঘরে বসে দোয়া ইস্তেগফার ও নফল ইবাদত করতে হবে।
সবাই ব্যক্তিগতভাবে তিলাওয়াত জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে রহমত ও বিপদমুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ তায়ালা যেন অবিলম্বে আমাদের এ মহামারী থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ এবং নিরাপদে জীবনযাপন করার তাওফিক দেন। মোট কথা, দোয়া ও দাওয়া উভয়ের প্রয়োজন। হ


আরো সংবাদ



premium cement