৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মুমূর্ষু সব নদীর কথা

-

তুরাগ নদের দূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। কিভাবে আমরা নদ-নদী ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে নিজেরাই নিজেদের খুন করছি সে বিষয়ে কেউ কি কিছু ভাবছি? অথচ দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার অন্যতম অনুষঙ্গ নদ-নদী। সেই নদীগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী, হালদা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ আর শীতলক্ষ্যা আজ দখলে দূষণে মুমূর্ষু। নিকট অতীতে এসব নদ-নদী দখল-দূষণমুক্ত করতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নদী আজো দখল-দূষণমুক্ত হয়নি। ফিরে পায়নি আগের অবয়ব। এই পাঁচটি নদ-নদী দখল-দূষণমুক্ত করার কাজ ঢাকঢোল পিটিয়ে, গণমাধ্যমে বিপুল প্রচারণা চালিয়ে শুরুর পর দিন কয়েক খুব সক্রিয় থাকে। তারপর ধীরে ধীরে সে উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে একসময় বন্ধ হয়ে যায়।
এসব নদীর দখল হয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধার এবং দূষণমুক্ত করার সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা কেন বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে সে এক রহস্য। নদীর দুই পাড়ের সীমানা নির্ধারণ এখনো শেষ হয়নি। যেসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে নদ-নদীর পানি এবং সংলগ্ন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকের তালিকা তৈরির মতো সহজ কাজও শেষ হতে আর কত বছর লাগবে কে জানে। প্রাকৃতিকভাবে মৎস্য প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে প্রকৃতির এক অনন্য দান হালদা নদীর গুরুত্ব অনুধাবনে আমরা এখনো অক্ষম। তাই তো হালদা এখনো দখলে দূষণে ধুঁকছে। আমরা ব্যর্থ কর্ণফুলী, শীতলক্ষ্যা আর তুরাগের দখল করা ভূমি উদ্ধারে। আর এসব নদীর দূষণে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। আমরা এখনো পারিনি বুড়িগঙ্গার হারানো রূপ ফিরিয়ে দিতে। ভূমিদস্যুদের গিলে খাওয়া ভূমি উদ্ধারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এই ব্যর্থতার দায়ভার যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তায়, তাদের জবাবদিহি প্রয়োজন। নদী দখল-দূষণমুক্ত করার অভিযানের মাঝপথে চুপসে যাওয়ার পেছনে কী এমন কারণ তা জানার হক দেশবাসীর আছে।
যে বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা নদ-নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল, সেই জনগোষ্ঠীর কথা স্মরণে রেখে যেকোনো মূল্যে এসব নদী বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশের জন্য স্রষ্টার অপার করুণা নদ-নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং হারানো অবয়ব ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালনে যেকোনো বাধা কঠোর হস্তে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। এসব নদী দখল-দূষণমুক্ত করতে হবে এবং নাব্যতা হারানো সব নদ-নদী ও খাল খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে পরিবেশের যে বিপর্যয় ঘটবে; তার ফলে এসব নদী-অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহে এবং জীবনাচারে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে।
অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, নদী দখল-দূষণমুক্ত করার কাজ শুরু হওয়ার অল্প দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। এ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ দূরে করে দখল-দূষণমুক্ত করার কাজ এগিয়ে নিতে হবে। এ কাজে অবহেলা ও সময় ক্ষেপণ হয়েছে। এখন আর সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। শুধু কর্ণফুলী, হালদা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ বা শীতলক্ষ্যা নয়, বাংলাদেশের সর্বত্র সব নদ-নদী ও খালের দখল ও দূষণমুক্ত করার কাজ দৃঢ়তার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতাবান কেউ নন। যত বড় বাধাই আসুক না কেন, তা চূর্ণ করার সক্ষমতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের রয়েছে। এ কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে প্রয়োজন পরিবেশ, ভূমি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় ও সমন্বিত উদ্যোগ। এই উদ্যোগ ঝড়ো গতিতে শুরু এবং শেষ করতে হবে। এর সাথে আর যা প্রয়োজন; তা হলো সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম। হ
লেখক : সমাজকর্মী


আরো সংবাদ



premium cement