২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘ইসরাইল ব্যতীত’ শব্দদ্বয় কোথায়?

বিধ্বস্ত গাজার একটি দৃশ্য - ফাইল ছবি

ভয়াবহতা প্রকাশের ভাষা নেই। আমরা রমজান মাসকে কেন্দ্র করে যেখানে বাজার সদাই, নতুন জিনিসপত্র কিনতে ব্যস্ত সেখানে আমাদেরই ফিলিস্তিনি ভাইবোনরা নিজেদের জীবন নিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।

চলমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইসরাইল সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার টন বোমা গাজায় নিক্ষেপ করেছে। তাই, প্রাণে বেঁচে যাওয়া অনাহারে কাতর, বস্ত্র, বাসস্থানহারা এই ফিলিস্তিনিরা শঙ্কিত কখন তাদের ওপর গোলাবর্ষণ হয়। কেউ হারিয়েছে তার মা, কেউ বাবা, কেউ বা সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান- এদের সংখ্যা হাজারে হাজার। পঙ্গুত্ব লাভ করে শুয়ে থাকা কিংবা ন্যায্য অধিকারের জন্য ক্রন্দনরত এই মানুষগুলোর কান্না আমাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না।

নির্দোষ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসন বহুবার হয়েছে। ১৯৪৮, ১৯৬৭, ১৯৯৪, ২০০৬, ২০১৩ এভাবে ছোট-বড় অনেক হামলা হয়েছে। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলমান ‘ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে’ এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনি যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু। কী পরিমাণ ভয়াবহতা হতে পারে যার জন্য শত্রুপক্ষের এক নওজোয়ান সেনা খোদ নিজের দেহে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ করে! এই সভ্য যুগে এসেও এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী, আর আমরা কী করছি?

মুসলিম দেশগুলো কি ধরে নিয়েছে শুধু খাদ্য জোগান দেয়াটাই তাদের কর্তব্য? মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া-খ্যাত এই ইসরাইলের জবরদখল থেকে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন কূটনৈতিক তৎপরতা। প্রতিবাদ ও প্রতিকার হিসেবে মুসলিম দেশগুলোর উচিত পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র (ইসরাইলের মদদদাতা), যুক্তরাজ্যের সাথে করা বিভিন্ন চুক্তি কৌশলে শিথিল করে নেয়া। আমাদের শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। সম্প্রতি এই দেশটি ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মামলা করেছে। আর আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হয়ে কী করছি?

লক্ষ করুন, চলতি বছরের নবম-দশম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের মানচিত্রে ফিলিস্তিন নামক দেশের নাম বাদ দিয়ে সেই স্থলে দখলদার ইসরাইলের নাম দেয়া আছে! এটি কেমন প্রতারণা? শিক্ষার্থীরা কিভাবে জানবে ফিলিস্তিনকে, মাসজিদুল আকসার ইতিহাসকে? এদিকে আমরা সবাই জানি, মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ইসরাইলের বসতি স্থাপন একটি ষড়যন্ত্র যা আন্তর্জাতিক আইনেও অবৈধ। আর শুরু থেকেই এই অবৈধ ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাংলাদেশ তার পাসপোর্টে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শব্দ যুক্ত করে এসেছে। অথচ, এক রহস্যময় কারণে আমরা লক্ষ করছি পাসপোর্ট থেকে এই শব্দ বাদ দেয়া হয়েছে।

তাহলে কি বাংলাদেশ গোপনে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে? এটি কি করে হয়, যেখানে ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। উদ্দেশ্য ছিল- মিথ্যার কাছে হার না মানা আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জনগণের বৈধ আন্দোলনকে স্বীকৃতি দেয়া। তাই আশা করি- সচেতন জাতি হিসেবে আমরা সত্যের প্রতি সোচ্চার থাকব এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শব্দদ্বয় পুনরায় পাসপোর্টে সংযুক্ত করবে।


আরো সংবাদ



premium cement