এবার ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের অর্থ-সহযোগিতা বন্ধ করে দিলো যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে ইউএনআরডব্লিউএ’র তহবিলে তারা আর অর্থ দেবে না। যেটি অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরেকটি খড়গ। ইসরাইলের ইচ্ছাতেই হোয়াইট হাউজ এ তহবিল বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম। আবার মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্প তার দলের জনসমর্থন বাড়াতে চাইছেন কি না সেটিও একটি বিষয়। ফিলিস্তিনি স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা অঙ্গীকার তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ছিল।
সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয় তারা আর ইউএনআরডব্লিউএ সংস্থাটিকে অর্থ-সহায়তা দেবে না। সংস্থাটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে এই ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউজ। অবশ্য এ বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে অর্থ সহায়তা কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে, তবে এত দ্রুত এবং এক বারেই পুরো সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে সেটি কারো দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য যা প্রকৃতপক্ষেই বড় একটি আঘাত।
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা দিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় ‘ইউএনআরডব্লিউএ’। জাতিসঙ্ঘের একটি অঙ্গ সংস্থা এটি। সংস্থাটি বর্তমানে ফিলিস্তিন সঙ্কটের কারণে উদ্বাস্তু হওয়া ৫০ লাখ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। গাজা উপত্যকা, ইসরাইলের দখলকৃত পশ্চিম তীর ছাড়াও জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়া আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তু সহায়তায় কাজ করে সংস্থাটি।
বিভিন্ন দেশের আর্থিক অনুদানই সংস্থাটির তহবিলের মূল উৎস। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বড় অঙ্কের অর্থ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতি বছর সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানের পরিমাণ ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা ইউএনআরডব্লিউএ’র মোট ব্যায়ের এক-চতুর্থাংশ প্রায়। তাই এই পরিমাণ অর্থ আসা বন্ধ হয়ে গেলে সংস্থাটি নিশ্চিতভাবেই তহবিল সঙ্কটে পড়বে। সহযোগিতা কমে যাবে ইসরাইলি আগ্রসনে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করা অসহায় মানুষগুলোর।
ইসরাইল দুই দফা যুদ্ধে এবং পরবর্তীতে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে তাদের ঘর-বাড়ির দখল নিয়েছে। এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদ করেছে বসতভিটা থেকে। তাদের উদ্বাস্তু হওয়ার পেছনে দায় আছে যুক্তরাষ্ট্রেরও, কারণ তারাই ইসরাইলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। তথাপি যুক্তরাষ্ট্র এবার এই অসহায় মানুষগুলোর বেঁচে থাকার ‘অক্সিজেন’ কমিয়ে দিলো।
ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনা শুরু হয়েছে। অবশ্য ফিলিস্তিন ইস্যুতে অনেক আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান নেতিবাচক। শুরু থেকেই ইসরাইল-ঘেঁষা ট্রাম্পের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল দখলকৃত জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। গত বছর সেই অঙ্গীকার তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। সারা বিশ্বের মতামতকে উপেক্ষা করে মুসলিমদের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসার শহর জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিনিদের জন্য গত কয়েক দশকে এটি ছিল সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক আঘাত। আর এবার ট্রাম্প বন্ধ করে দিলেন ইসরাইলি আগ্রসনে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষের মানবিক সহায়তা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাজিওস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার দুই সপ্তাহ আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ করেন ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে। তিনি এক গোপন মেসেজে হোয়াইট হাউজকে জানান যে, ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের বিষয়ে ইসরাইলি মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে। ইসরাইল এই সংস্থায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ হোক সেটা চায়।
ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা না করেই নেতানিয়াহু এ বার্তা পাঠিয়েছেন ওয়াশিংটনে। সেখানে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে হোয়াইট হাউজ ও সিনেট কমিটির কাছে পাঠানো হয় এই বার্তা।
অ্যাজিওস আরো লিখেছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই ইসরাইলের মনের ভাবকে প্রাধান্য দেয়। দুই সপ্তাহ আগেও ইসরাইলের নীতি ছিল ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য মার্কিন সহায়তা বন্ধের বিষয়টি ধীরে ধীরে কার্যকর করা হবে, এবং গাজায় কোনো অর্থ-সহায়তা বাতিল করা হবে না। মানবিক বিপর্যয় ও উদ্বাস্তুদের ক্ষোভ উসকে না দিতে এ কৌশল নিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে এ নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন নেতানিয়াহু।
এই তথ্য থেকে আরো একবার স্পষ্ট হলো, ফিলিস্তিন সঙ্কট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক নয়। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একটি সঙ্কটের সমাধান করার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি যখন একটি পক্ষের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে, সেটাও মানবিক সাহায্য বন্ধের মতো অমানবিক কাজ- তখন তাদের দ্বারা এই সঙ্কটের সমাধান আশা করা কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্ন ওঠে। ফলে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ লাঘবের সহসাই যে, কোনো সম্ভাবনা নেই সেটি আরো একবার স্পষ্ট হলো।
ইসরাইলের ইচ্ছের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ভোটারদেরও মন জয় করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না সেই প্রশ্ন অমূলক নয়। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ৩৪টি আসনের নির্বাচন। এর মধ্যে আটটি আসন বর্তমানে রিপাবলিকানদের। এখান থেকে কয়েকটি আসন ছুটে গেলেই সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে রিপাবলিকান পার্টি। তাই ট্রাম্প ভোটের আগে তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতোই কিছু কৌশল অবলম্বন করতেই পারেন। মনে রাখতে হবে, ইসলাম-বিদ্বেষ আর বর্ণবাদী বক্তব্য সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে হোয়াইট হাউজে পাঠিয়েছে মার্কিনিরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা