৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঠেকাতে জেরুসালেমে নতুন ইহুদি বসতি গড়ছে ইসরাইল

গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী রিপোর্ট
ইসরাইলের বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে খান ইউনুসের অধিকাংশ আবাসিক ভবন : ইন্টারনেট -


ইসরাইল সরকার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড পশ্চিমতীরে বসতি নির্মাণের গতি ব্যাপক বাড়িয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে দেশটি ফিলিস্তিনের অপর ভূখণ্ড গাজায় আগ্রাসন শুরুর পাশাপাশি পশ্চিমতীর, বিশেষ করে জেরুসালেমে বসতি নির্মাণ প্রকল্প দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, মূলত জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাধাগ্রস্ত করতেই এই পরিকল্পনা ইসরাইলের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বসতি নির্মাণ যদিও অবৈধ, তবু দেশটি সেটিকে থোড়াই কেয়ার করছে। জেরুসালেমের আশপাশে ও পশ্চিমতীরে অন্তত তিন বসতি স্থাপন প্রকল্প ইসরাইল বিগত ছয় মাসের মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে।

ইসরাইলের এ ধরনের অমানবিক আচরণের বিষয়টি উঠে এসেছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা বিমকমের সারি ক্রনিশের কথায়। তিনি বলেছেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিচালিত এসব প্রকল্প বিগত ছয় মাসে নজিরবিহীন গতি পেয়েছে।’
ক্রনিশ বলেন, ‘গত বছরের ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে পশ্চিমতীরে যেখানে অধিকাংশ ইসরাইলি সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে সেখানে ইসরাইলি পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ সব বাধা উপেক্ষা করে নজিরবিহীন গতিতে এই বসতি স্থাপনের বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
ইসরাইল ১৯৮০ সালে জর্দানের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়। পরে ১৯৮০ সালে অঞ্চলটিকে ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত করে নেয়। এর পর থেকেই সেখানে ধীরে ধীরে ইহুদিদের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয় দেশটি।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের পর থেকেই জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নের কথা জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে কথা বলছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বেশ কয়েকজন অবৈধ বসতি স্থাপনকারীর ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরাইল সেটিকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যেই এমনটা করছে। বিগত ছয় মাসে; গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর ইসরাইলি পরিকল্পনা বিভাগ সব মিলিয়ে তিনটি বসতির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে দু’টি পূর্ব জেরুসালেমে, যা বিগত এক দশকের বেশি সময়ের প্রথম প্রথম বসতি স্থাপনের উদ্যোগ।

এই দু’টি বসতি মূলত ইসরাইলের উচ্চ নিরাপত্তার কিদমাত জায়নের বর্ধিত অংশ এবং জেরুসালেমের পূর্ব দিকে অবস্থিত ফিলিস্তিনি এলাকা রাস আল-আমুদের খুবই কাছে অবস্থিত। গার্ডিয়ানের কাছে আসা নথি থেকে দেখা গেছে, ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলে হামলার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ কিদমাত জায়ন প্রকল্প বাড়ানোর অনুমতি দেয়। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি অঞ্চল বাইত সাফাফার পাশে পূর্ব জেরুসালেমে গিভাত হামাতোস ও গিভাত শাকেদ নামে দু’টি আবাসন প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে ইসরাইল। আন্তর্জাতিক বিরোধিতার কারণে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় গিভাত হামাতোস প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর মাস খানিক আগে তা আবারো ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে। অবশ্যই ২০২০ সালে থেকেই এই প্রকল্পের কাজ নতুন করে শুরু হয়েছিল। তবে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি এই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। বাইত সাফাফার যে অংশে এই প্রকল্প চলমান সেখানে কোনো ফিলিস্তিনির সুউচ্চ দালান তৈরির অনুমোদন নেই। কিন্তু ইসরাইল ঠিকই ৭০০ সুউচ্চ দালান নির্মাণ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ দিলেও কানে তুলছে না জেরুসালেম পৌর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বাইত সাফাফার বাসিন্দা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতা আহমদ সালমান (৭১) বলেন, ‘আমাদের পরিবার এখানে আড়াই শ’ বছর ধরে আছে কিন্তু এখন আমি দেখতে পাচ্ছি না, কিভাবে আমার সন্তান ও নাতি-নাতনিরা এখানে জীবন কাটাবে।’ আহমদ সালমান আরো বলেন, ‘এক সময় পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা নষ্ট হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরুর পর তারা আমাদের সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে প্রকল্পের অনুমতি দিয়েছে। আমরা আবারো আবেদন করেছি, কোনো আশা নেই আর।’
এদিকে বাইত সাফাফার কাছে লোয়ার অ্যাকুইডাক্ট নামে আরো একটি আবাসন প্রকল্প চালু করেছে ইসরাইল। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর এই লোয়ার অ্যাকুইডাক্ট প্রকল্পের অনুমতি দেয়া হয়। এসব প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জেরুসালেমে অবস্থিত ইসরাইলি মানবাধিকার এনজিও ‘ইর আমিমের’ কর্মী অ্যামি কোহেন বলেন, ‘অনেক বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা কৌশলগতভাবে পূর্ব জেরুজালেমের দক্ষিণের এলাকাগুলো ঘিরে করা হয়েছে। এখানে বসতি নির্মিত হলে তা ফিলিস্তিনিদের অবস্থানকে আরো সঙ্কুচিত করবে। অ্যামি কোহেন আরো বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলো বেথলেহাম ও দক্ষিণ পশ্চিম তীর থেকে পূর্ব জেরুজালেমের (ফিলিস্তিনিদের) সরাসরি প্রবেশ বন্ধ করে দেবে। এ ধরনের পদক্ষেপগুলো পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি কার্যকর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলোকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
উল্লেখ্য, জেরুসালেমের জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, যার ৪০ শতাংশই ফিলিস্তিনি। তবে ইসরাইল সরকারের পরিকল্পনা হলো, জেরুসালেমে ইসরাইলি ইহুদিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা। এর আগে, ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরাইল জর্দানের কাছ থেকে পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়। পরে ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত করে নেয়। কিন্তু বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃত নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বগুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিক নিহত পাঁচবিবিতে গাছের ডাল পড়ে পথচারীর মৃত্যু ঈশ্বরদীতে লোডশেডিংয়ে নাকাল জনজীবন গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪,৫৩৫ জনে পাঁচবিবিতে অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত উদ্ধার, আটক ৩ নারায়ণগঞ্জে তাপদাহে বিপর্যস্ত পশুপাখির পাশে টিম খোরশেদ দাগনভুঞায় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি ৩ তারকা ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে ভারতের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা ইসরাইলিদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি না করার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দোনেশিয়ার মাউন্ট রুয়াং আবার অগ্ন্যুৎপাত, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ উল্লাপাড়ায় ধান কাটতে গিয়ে হিট স্ট্রোকে কৃষকের মৃত্যু

সকল