২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সমালোচকদের কারাগারের ভয় দেখাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী

-

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুই ডজনেরও বেশি কর্নেল আসন্ন নির্বাচনের আসল যুদ্ধক্ষেত্রকে এড়িয়ে বেসামরিক আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সমালোচনা রোধে সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতে তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। আগামী বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বের সমালোচনা দমন করতে মানহানির মামলাগুলো ব্যবহার করেছেন তারা।
সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন বলেছেন, অফিসাররা সশস্ত্র বাহিনীর ‘মর্যাদা’ রক্ষা করছেন, যা তাতমাদো নামে পরিচিত। ২০১৬ সাল থেকে কর্নেল র্যাঙ্কের ২৫ জন কর্মকর্তা ৭৮ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের সাথে মানহানির মামলা দায়ের করেছেন। মূলত ফেসবুকে করা মন্তব্যে জানানো মতামতের ভিত্তিতেই তাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আথান। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং এই জাতীয় মামলাগুলো পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি গোষ্ঠী হচ্ছে আথান। মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত এই গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, কর্নেলদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দায়ের করা ২৫টি মামলার মধ্যে ১২টি মামলাই হয়েছে ১ এপ্রিলের পর থেকে এবং এই বছর সেনাবাহিনী নিয়ে আসা মানহানির অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে তিন ডজনকে কারাগারে সাজা দেয়া হয়েছে বা কারাগারে তারা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।
কারাবন্দীদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা ও মানবাধিকারকর্মী ইউ মিন হিতিন কো কো জিয়ো, সম্প্রতি লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় যার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। গুরুতর অসুস্থ হবার পরও তাকে জামিন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তিনি এখন বিচারাধীন রয়েছেন।
আথানের গবেষণা ব্যবস্থাপক কো ইয়ে ওয়াই ফিয়ো অং বলেছেন, ‘২০২০ সালের নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মামলাগুলো বাড়ছে। সেনাবাহিনী সংবিধান সংশোধন করার আহ্বানের মতো রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে।’
দুই বছর আগে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ নৃশংসভাবে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের জন্য ‘তাতমাদো’ বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়। ৭ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে-নির্যাতনে ভূমিকা রাখার কারণে গত মাসে মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ, সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইং এবং তিন শীর্ষ জেনারেলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।
তবে আপাতত সামরিক বাহিনী ভাবমর্যাদা পুনরোদ্ধার ও সুখ্যাতি বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। ২০০৮ সালে একতরফাভাবে দেশটির সংবিধান গ্রহণের সময় সেনাবাহিনী যে অসাধারণ শক্তি অর্জন করেছিল তা রক্ষা নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বাধীন সেনাবাহিনী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত তাতমাদো ১৯৬২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছে, এরপর তারা বেসামরিক নাগরিকদেরও কিছুটা ক্ষমতা দিতে শুরু করে। সংবিধানের দ্বৈত সরকারব্যবস্থার অধীনে সামরিক বাহিনী স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে এবং মিয়ানমারের বৃহত্তম সংস্থার মালিকানাধীন দু’টি গোপন সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত আয়কে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেসামরিক তদন্তকে এড়িয়ে চলে।
সংবিধান কমান্ডার ইন চিফকে পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ সদস্য নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান করে, যেকোনো সংবিধান সংশোধনকে আটকাতে এবং নির্বাচিত পার্লামেন্ট কর্তৃক দেশটির প্রেসিডেন্ট বাছাই করার ক্ষেত্রে তাকে ক্ষমতার শীর্ষস্থানে রাখে।
নোবেল শান্তি বিজয়ী অং সান সু চির নেতৃত্বে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি ২০১৫ সালের নির্বাচনে অভাবনীয় বিজয়ের মাধ্যমে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্সির নিয়ন্ত্রণ দিয়েছিল। তবে ২০২০ সালে সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা কঠিন হতে পারে। দেশকে দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচাতে ধীর গতির অগ্রগতি সু চির অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। কিছু বিশ্লেষক আশঙ্কা করেছেন যে সামরিক সরকার সামনের নির্বাচনে বেসামরিক সরকারেরও নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।
গত তিন বছরে এনএলডি নামে পরিচিত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি মানহানি অপরাধ আইন বাতিল করে দেয়াসহ নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য আইন পাস করার সুযোগগুলোকে নষ্ট করেছে। সম্ভবত এটির কারণ হচ্ছেÑ এই বছরের প্রথম দিকে এনএলডি নেতারা সু চি ও দলের সমালোচনা দমন করতে নিজেরা মানহানির আইন ব্যবহার করেছিলেন এবং তিন ডজন সমালোচককে কারাগারে প্রেরণ করেছিলেন। ইয়াঙ্গুনের মানবাধিকারকর্মী দা খিন সান্দার বলেছেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটি মৌলিক বিষয়। যদি তারা জনগণকে রক্ষা করতে না পারে তবে তারা কেন সরকারে থাকতে চায়?’
তাতমাদোর মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন বলেছেন, কর্নেলদের আইনি অভিযোগ সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য এবং এগুলো আসন্ন নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত নয়। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার কোনো সুযোগ আমাদের হাতে থাকবে না যদি তারা সামরিক বাহিনীর অবমাননা না করে। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর নিজেদের মর্যাদা রক্ষার অধিকার রয়েছে। যদি কেউ এর ক্ষতি করে তবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
কর্নেলদের বেশির ভাগ মানহানির অভিযোগগুলো এমন লোকদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যারা সংবিধানের সংশোধনীগুলো রোধ করার সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার সমালোচনা করে বা বলে যে শীর্ষ ক্ষমতাসীনরা দেশের প্রচুর সম্পদ জমা করে রেখেছিল।
এই মাসের শুরুর দিকে আদালতের শুনানি শেষে ইউ মিন হিতিন কো কো জিয়ো বলেছিলেন যে সামরিক বাহিনীর হাতের মুঠোয় থাকা ক্ষমতা হ্রাস করা জরুরি। তিনি বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংবিধান সংশোধন করা। আমার মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমিও গুরুত্বপূর্ণ নই।’


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা বিষয়ক সম্মেলনে আতিথেয়তা করবে সৌদি আরব চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড শ্রীনগরে নাতিকে মাদরাসায় দিয়ে ফেরার পথে ট্রেনের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু ইউক্রেনের ১৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে রাশিয়া গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও চলছে মেসি ঝলক, আবারো জোড়া গোল উল্লাপাড়ায় গাড়িচাপায় অটোভ্যানচালক নিহত থাইল্যান্ড সফর শেষে সোমবার দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী বিপরীত উচ্চারণের ঈদ পুনর্মিলনী ফরিদপুরে ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতদের অচিরেই গ্রেফতার করা হবে : র‌্যাব মুখোপাত্র ধর্মঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহন বন্ধ, দুর্ভোগে মানুষ

সকল