২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উত্তাপহীন রাজশাহী ও সিলেট নির্বাচন

উভয় সিটির প্রায় কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ
উত্তাপহীন রাজশাহী ও সিলেট নির্বাচন। - ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি পরীক্ষা অবতীর্ন হচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ভোটগ্রহণ হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। থাকছে প্রতিটি ভোটকক্ষেই সিসিটিভির নজরদারি। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে চলবে এই ভোটগ্রহণ। ঢাকাতে বসে সিইসি ও কমিশনাররাসহ ইসির কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণ করবেন। গাজীপুরে সরকারি দলের প্রার্থীর পরাজয়ের পর বরিশাল ও খুলনায় চরমোনাই পীরের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে সিইসির আপত্তিকর বক্তব্যে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। তার সেই বক্তব্যে ইসির অনেককেই বিব্রত বোধ করেছেন। দুই সিটির সিংহভাগ কেন্দ্রেই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশ্রঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ দিয়ে সতর্ক রাখা হয়েছে বলেও জানান ইসির নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এই দুই সিটিতে অংশ না নেয়ায় মেয়র নির্বাচন হচ্ছে উত্তাপহীন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দুই সিটির ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে যতটা তাপ ও চাপ সৃষ্টি হবে তা কাউন্সিলরদের কারণে।

ইসি সূত্র বলছে, বরিশালে ভোটের মাঠে মেয়রের ওপর হামলা ঘটনা অনেকটা ভাবিয়ে তুলছে ইসিকে। পাশাপাশি সেখানে ভোটের পরও পরিস্থিতিতে অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যে কারণে সিলেট-রাজশাহীতেও কোনোভাবে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটতে পারে, সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। সেই সাথে ভোটের আগে-পরে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য মাঠে ২৪ জন ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা মোট পাঁচদিন মাঠে থাকবেন।

রাজশাহী
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ১৫৫ কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। আর ৭টি কেন্দ্রকে অতিঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কেন্দ্রের বুথগুলোতেও থাকছে ক্যামেরা বলে ইসি থেকে জানা গেছে। রাজশাহী সিটিতে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোট দিবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন। ১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ১৫৩টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে চারজন মেয়র প্রার্থী ও ২৯টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১১ জন এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সতর্কতা থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের সাথে আনসার সদস্যরা থাকবেন। নির্বাচনের দিন নগরীতে টহল থাকবে ৩০০ জন র‌্যাব ও বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য। নির্বাচনের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন ৩ হাজার ৫১৪ জন পুলিশ, ১ হাজার ৯৩৫ আনসার সদস্য। এছাড়া ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ৩ হাজার ৬১৪ জন কর্মকর্তা। ভোট কেন্দ্রগুলোতে লাগানো হয়েছে ১ হাজার ৫৬০টি সিসি ক্যামেরা। সকালেই প্রতিটি কেন্দ্রে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিং (ইভিএম) পাঠানো হচ্ছে। মিনি ট্রাকে করে পুলিশি পাহাড়ায় এগুলো পৌঁছে হয়েছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর তালিকা করা হয়েছে। এতে ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি কেন্দ্রকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ করতে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকেই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা সরাসরি ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবেন। কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে তাৎক্ষণিক ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হবে।

সিলেট
এ সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৬ জন। সিসিক নির্বাচনে ১৯০টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সিলেটে সোমবার রাত ১২টার পর থেকে সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ৪২টি টিম মাঠে থাকছে। এর বাইরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ১০টি টিম থাকবে। প্রতিটি টিমের সাথে ১ প্লাটুন বিজিবি থাকবে।

দুই সিটির ভোটের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আহসান হাবিব খান বলেন, প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের কাছে সমান চ্যালেঞ্জের। প্রতিটি নির্বাচন থেকে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি, সবার প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সিলেট, রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও শতভাগ নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠুভাবে করতে সক্ষম হব। আমাদের মেয়াদের সবগুলো নির্বাচনই ভালোভাবে করেছি, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।

তিনি জানান, ভোটের আগে, ভোটের দিন এবং পরে অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। আচরণবিধি প্রতিপালনে স্থানীয়ভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান, সব দলও সমান। ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর।


আরো সংবাদ



premium cement