২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রাজিলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিলেন কাসিমিরো

৬ গোলের উপভোগ্য ম্যাচের পরও টেনশনে
-

নেইমারের অভাবটা যে কতটা প্রভাব ফেলে তা কাল ফের প্রমাণিত হলো ব্রাজিল দলে। কোচ তিতে ফরোয়ার্ড লাইনে একে একে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনে। কিন্তু কেউই গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত নেইমারবিহীন দলের জয়ের ধারায় থাকা। আর তা সম্ভব হয়েছে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসিমিরোর কল্যাণে। ৮৩ মিনিটে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা এই ফুটবলারের করা গোলেই কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হলো ৫ বারের চ্যাম্পিয়নদের। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০তে জিতে তারা ব্রাজিল নামের পাশে জমা করেছে ৬ পয়েন্ট। কাসিমিরোর এই গোলটা কতটা ভারমুক্ত করেছে দলকে, তা বুঝা গেছে কোচ তিতে এবং ভিআইপি গ্যালারিতে বসা দুই সাবেক রবার্তো কার্লোস এবং রোনালদো নাজারিওয়ের অভিব্যক্তি দেখে। জি-গ্রুপে গতকাল ছিল ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ডের খেলা। ব্রাজিলের পরের ম্যাচ এখন ২ ডিসেম্বর ক্যামেরুনের বিপক্ষে। পরের রাউন্ডে যেতে সুইজারল্যান্ডকে একই দিন জিততে হবে সার্বিয়ার বিপক্ষে।
বক্সের মধ্যে ভিনিসিয়স এবং রদিরিগোর কম্বিনেশনে বল পান কাসিমিরো। এরপর তার নেয়া ডান পায়ের শট সুইজারল্যান্ডের ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকানজির পিঠে লেগে দিক পাল্টে বোকা বানায় বিপক্ষ কিপার ইয়ান সোমারকে। এরপর গ্যালারিতে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস ব্রাজিলিয়ানদের। এরপর থিয়াগো সিলভার দল আর ব্যবধান বাড়াতে পারেনি। সুইসরাও পারেনি সমতা আনতে।
প্রথমার্ধেই এগিয়ে যেতে পারত ব্রাজিল। ম্যাচের বয়স তখন ২২। দারুণ এক সুযোগ ব্রাজিলের সামনে। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে একেবারেই গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান রাফিনহা। একটু দুরূহ ছিল কোণ। তবে একটু বুদ্ধি খাটালে এই পজিশন থেকেও গোল করা যায়। কিন্তু এই ফুটবলার তখন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের উল্লাসে ভাসাতে পারেননি। তার শট চলে যায় গোলরক্ষক সোজা। পুরো প্রথমার্ধে এই একটিই ছিল পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নদের পাওয়া সেরা সুযোগ। সুইজারল্যান্ড নিজেদের শক্তিমত্তা জেনেই কাউন্টার অ্যাটাকে খেলতে থাকে। তাদের পক্ষেও কোনো চান্স তৈরি করা হয়নি প্রথম ৪৫ মিনিটে।
নেইমারের সাথে ইনজুরিতে দানিলো। তাই তাদের বদলে ফ্রেড ও মিলিতাও এবং রাফিনহাকেকে নিয়ে একাদশ সাজান কোচ তিতে। জয়ের নেশায় মরিয়া সেলেসাওরা শুরু থেকেই চড়াও হয় সুইসদের ওপর। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিল না। তাই ফরোয়ার্ড লাইন শক্তিশালী করতে বিরতির পর পাকুয়েতাতে তুলে কোচ মাঠে নামান রিয়াল মাদ্রিদে খেলা তরুণ রদরিগোকে।
কনটেইনার দিয়ে বানানো থুমামা স্টেডিয়াম। কাতার বিশ্বকাপ শেষে এই একমাত্র স্টেডিয়ামটিই ভেঙে ফেলা হবে। কাল রাতে এই ফুটবল ভেন্যুটি ছেয়ে যায় হলুদ রঙে। মাঠের আশি শতাংশ দর্শকই ছিলেন ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে। বিশেষ করে দুই গোল পোস্টের পেছনটা ছিল তাদের দখলে। সারাক্ষণই তারা হাতে থাকা ব্রাজিলের পতাকা মাথার উপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আর ওলে ওলে বলে দলকে উৎসাহ দিতে থাকে।
৫৬ মিনিটে ভিনিসিয়াসের ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ রিচার্লিসন। একটু আগের ব্রাজিল কিপার এলিসন বাকেরের দৃঢ়তায় গোল পায়নি সুইজারল্যান্ড। ৫৭ ফ্রেডের বদলে ব্রুনো গুইমারেজকে নামানো হয়। ৬৬ মিনিটে ভিনিসিয়স গোল করলেও তা বাতিল হয়ে যায় ভারের সাহায্য নেয়া অফসাইডে। রিচার্লিসন অফসাইডে থাকায় গোল উৎসব করেও পরে চুপসে যায় ব্রাজিলিয়ানরা।
৭২ মিনিটে দুই ফুটবলার বদল ব্রাজিলের। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত সাইড ভলিতে গোল করা রিচার্লিসনের জায়গায় গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং রাফিনহার বদলে এন্থনীকে নামানো হয়। ৪৩৬৪৯ জন দর্শক উপস্থিতির সামনে সুইসদের শরীরের ভাষাই ছিল ড্র করা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি ব্রাজিল মিডফিল্ডার কাসিমিরোর দারুণ এক গোলে। পরিকল্পিত আক্রমণের ফসল হিসেবে কয়েক পাসের পর বক্সের ভেতর বল পান কাসিমিরো। সেখান থেকে বিপক্ষ রক্ষণপ্রাচীরে সামান্য একটু ফাঁকা জায়গা পেয়েই তাতে ডান পায়ের বাঁকানো শটে কোটি ব্রাজিলিয়ান সমর্থককে আনন্দে ভাসান কাসিমিরো। এর পরপরই রদরিগোর শট কর্নার করেন সুইস কিপার সোমার।
৯২ মিনিটে ভিনিসিয়সের ভুলে ব্যবধান বাড়েনি। তার পাস জেসুসের কাছে যাওয়ার আগেই বাধা। কিছুক্ষণ পরই তার পাসে জেসুস বল পেলেও শটে বাধা বিপক্ষ ডিফেন্ডার। এই ম্যাচে তিন সেকেন্ডের জন্য ফ্লাড লাইটের আলো কমে যায়। যা ছিল অপ্রত্যাশিত।
৬ গোলের উপভোগ্য ম্যাচের পরও টেনশনে (ক্যামেরুন ৩-৩ সার্বিয়া)
প্রতি মুহূর্তেই বদল হচ্ছিল স্কোর বোর্ডে গোলের সংখ্যা। ঠিক যেন রোলার কোস্টারের মতো। আল জানুব স্টেডিয়ামে ‘জি’ গ্রুপের এই ম্যাচ ছিল সার্বিয়া এবং ক্যামেরুন দুই দলেরই টিকে থাকার লড়াই। জিতলে নক আউটের পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। হারলে বিদায়। ড্র করলে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা। তবে ম্যাচটিতে এতটা উপভোগ্য হবে তা কারো ধারণায় ছিল না। দুই অর্ধ মিলে ৬ গোল। খেলা শেষে স্কোর লাইন ৩-৩। মানে জয় হয়নি কারো। সার্বিয়া প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে ০-২ গোলে পরাজিত হয়েছিল। আর ক্যামেরুনের ০-১ গোলে হার ছিল সুইজারল্যান্ডের কাছে। গতকাল এই ম্যাচ ড্র হওয়ার ফলে আফ্রিকান অদম্য সিংহরা এখন গ্রুপে তৃতীয়। তাদের মতোই ১ পয়েন্ট বলকান অঞ্চলের দেশ সার্বিয়ার। তবে গোল পার্থক্যে গ্রুপের তলানীতে সাবেক যুগোসøাভিয়ার অংশটি। এই ড্র দুই দলেরই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলাটা কঠিন করে দিয়েছে। পরের রাউন্ডে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখতে ২ ডিসেম্বর রাত ১টায় সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সার্বিয়াকে এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে জিততে হবে ক্যামেরুনকে। এরপর গোলের সমীকরণ।
ম্যাচের শুরুতেই একাদশ থেকে গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানাকে বাদ দেন ক্যামেরুন কোচ রিগবার্তো সং। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন তিনি। তার বিকল্প হিসেবে খেলানো হয় ডেভিস এম্পাসিকে। ম্যাচে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা দলটি নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত ১ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
ম্যাচের প্রথম গোল ক্যামেরুনেরই। এর পর তাদের ১-৩ গোলে পিছিয়ে পড়া। সেখানে থেকে ১৫১ সেকেন্ডের ( ৬৪ ও ৬৬ মি.) মধ্যে দুই গোল দিয়ে সমতা আনে রজার মিলার দেশ। ৬৪ মিনিটে ভিনসেন্ট আবু বকরের করা গোলটি ছিল গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জালে পাঠিয়ে। আর ৩-৩ করা গোল ভিনসেন্ট আবু বকরের পাস থেকে অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙে চিপো মোটেংয়ের প্লেসিং শটে। এর পর সার্বিয়া চড়াও হয়ে খেললেও পারেনি জয় তুলে নিতে। একাদশে দুই পরিবর্তন নিয়ে ১১ ও ১৭ মিনিটে সার্বিয়া গোলবঞ্চিত স্ট্রাইকার আলেকজান্ডার মির্তোভিচ দুই দফা বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হয়। এরপর ২৯ মিনিটে উল্টো গোল হজম সার্বিয়ানদের। পিয়েরে কুন্দের কর্নার থেকে আসা বলে মাথা লাগান এনকুলু । তাতে ক্যামেরুন ম্যাচে লিড নেয় জেন চার্লস কাসতেলেত্তোর গোলে। কুন্দে দুটি চান্স মিস না করলে বিরতির আগেই স্কোর ২-০ হতে পারতো।
পশ্চিম আফ্রিকান দেশটি মনে করেছিল এই স্কোর লাইনেই তারা প্রথমার্ধে শেষ করবে। কিন্তু প্রথার্ধের ইনজুরি টাইমে প্রতিপক্ষের জোড়া গোল পাল্টে দেয় চিত্র। ডুসান টাডিচের ফ্রি-কিকে হেড করে সমতা আনেন সার্বিয়ার ডিফেন্ডার স্ট্রাহিঞ্জা পাবলোভিচ। এই যোগ করা সময়েই তৃতীয় মিনিটে এগিয়ে যায় সার্বিয়া। এবার সার্গেই মিলিনকোভিচ পরাস্ত করেন ক্যামেরুনের কিপারকে। বিপক্ষ ডিফেন্ডারের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগেই তার বল জালে পাঠানোর উপলক্ষ।
প্রথমার্ধে গোল মিস করা মির্তোভিচ ৫৩ মিনিটে কার্যত ফাঁকা পোস্টেই বল জালে পাঠান। এই গোলটি হয়েছে ৬ পাসে। মাঝ মাঠে ক্যামেরুনের ফুটবলারের পা থেকে বল কেড়ে নেন টাডিস। এর পর তা মির্তোভিচ , কস্টিস, মিলিনকোভিচের পা ঘুরে জিভকোভিচের কাছে এলে তার ডেথ পাসে গোল উৎসব মির্তোভিচ এবং অন্য সার্বিয়ানদের। তবে চমৎকার পরিকল্পিত এই গোলের পর সার্বিয়ানরা ম্যাচ জিতে যাচ্ছে তাদের এই স্বপ্ন ভেঙে দেন ক্যামেরুনের ভিনসেন্ট আবু বকর এবং চিপো মোটেং।
৭৬, ৮৯ এবং ৯১ মিনিটে মির্তোভিচ আরো ৩টি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করায় জেতা হলো না সার্বদের। আর তাতে বড়েছে টেনশনও।


আরো সংবাদ



premium cement