০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চা-আচারের আড়ালে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস

চা-আচারের আড়ালে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস - ছবি : সংগৃহীত

  • এক গ্রাম আইস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ হাজারে
  • জব্দ হলে টাকা নেয় না মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা
  • প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা আইস জব্দ করেছে র‌্যাব

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে চা ও আচারের আড়ালে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস। নাফ নদী দিয়ে নৌপথে মাদক কারবারীরা দেশে আনছে এ মাদকদ্রব্য। নিরাপদে মাদকের চালান খালাস করতে ব্যবহার করা হয় লাইট সিগনাল। এরপর সুবিধাজনক সময়ে বোট ভিড়িয়ে খালাস করে টেকনাফের বিভিন্ন নিরাপদ বাসায় মজুদ করে মাদক কারবারীরা। পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপ্লাই দেয়া হয় মাদক। অভিজাত শ্রেণীর কাছে আকাশচুম্বী চাহিদা থাকায় মাদক কারবারীরা আইসে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

তারা হলেন- হোছেন ওরফে খোকন (৩৩) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রফিককে (৩২)।

র‌্যাব জানায়, খোকন আইস সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। এসময় তাদের কাছ থেকে ৫ কেজি ৫০ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এছাড়া তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দুটি মোবাইল, তিনটি দেশী-বিদেশী সিমকার্ড ও মাদক কারবারে ব্যবহৃত ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র‌্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৫-এর একটি অভিযানিক দল শুক্রবার দিবাগত ভোরে তাদের গ্রেফতার করে।

শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মলনে সংস্থটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতার হোছেন ওরফে খোকন টেকনাফ কেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম। তিনি কাপড় ব্যবসা, বার্মিজ আচার ও চায়ের ব্যবসার কথা বলে অবৈধভাবে মিয়ানমারে যাতায়াত করে। এর আড়ালে মূলত তিনি ইয়াবা নিয়ে আসেন। গত পাঁচ বছর ধরে খোকন ইয়াবা কারবারে জড়িত। তবে বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি আইসের চালান আনতে শুরু করেন। ইতোমধ্যে তার সাথে মিয়ানমারের মাদক কারবারিদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। হোছেনের সিন্ডিকেটে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন। টেকনাফে তার পরিচিতি হোছেন নামেই। তার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ অন্তত সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া রফিক পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। এর আড়ালে তিনি মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। মিয়ানমার থেকে নৌপথে টেকনাফে আনার পর ইয়াবা ও আইসের চালান রফিকের অটোরিকশায় পৌঁছে যায় নিরাপদ স্থানে। টেকনাফে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মজুদ রাখে ও সুযোগ বুঝে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পৌঁছে দেয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যবর্তী সমুদ্রপথ এলাকায় মালবাহী বোটে করে আসছে ইয়াবা ও আইসের চালান। নিরাপদে মাদকের চালান খালাস করতে ব্যবহার করা হয় লাইট সিগনাল। পরবর্তীতে তারা সুবিধাজনক সময়ে বোট ভিড়িয়ে খালাস করে ও টেকনাফের বিভিন্ন নিরাপদ বাসায় মজুদ করে। এরপর আচারের প্যাকেট, বিভিন্ন চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেট ও বার্মিজ কাপড়ের প্যাকেটে ঢাকায় আনা হচ্ছে আইস ও ইয়াবার চালান।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, চট্টগ্রামে ও ঢাকার অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে আকাশচুম্বী চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আইসের চালান আসছে। চট্টগ্রাম হয়ে বিভিন্ন যানবাহন ছাড়াও নিজস্ব যানবাহন ব্যবহার করে উত্তরা, বনানী, গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের সিন্ডিকেট সদস্য ও ডিলারদের কাছে পৌঁছে দেয় আইস ও ইয়াবার চালান।

খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হোছেন ও রফিক জানিয়েছে, ইয়াবার সাথে বাংলাদেশে আইসের কারবার ছড়িয়ে দিতে কম মূল্যে বিক্রি করছে আইস। এক গ্রাম আইসের দাম মিয়ানমার কারবারিরা রাখছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। যা বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই লাভজনক হওয়ায় আইসে ঝুঁকছে মাদক কারবারিরা। গড়ে তুলছে সুসম্পর্ক। দুই দেশের মাদক কারবারিদের মধ্যে এতটাই সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে যে, কোনোভাবে আইসের কোনো চালান যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক জব্দও হয় তবে সেজন্য কোনো ধরণের পেমেন্ট নেয় না মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা।

র‌্যাব জানায়, ইয়াবা ও আইসের চালানের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি অবৈধভাবে নিয়মিত মিয়ানমারে যাতায়াত করতেন গ্রেফতার হোছেন। মাদকের চালান খালাসের সময় মিয়ানমারের সিম ব্যবহার করতেন তিনি।

আইসর ক্ষতিকর দিক
র‌্যাব জানায়, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। আইসে ইয়াবার মূল উপাদান এমফিটামিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। মানবদেহে ইয়াবার চেয়েও বহুগুণ ক্ষতি করে আইস। এটি সেবনের ফলে অনিদ্রা, অতি উত্তেজনা, স্মৃতিভ্রম, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভার জটিলতা এবং মানসিক অবসাদ ও বিষন্নতার ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক ও মানসিক উভয়ক্ষেত্রে এটির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। এ মাদকের প্রচলনের ফলে তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও অস্বাভাবিক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। এ মাদকে আসক্ত হয়ে তরুণ-যুবকরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
রাফায় ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে : রাশিয়া মিরসরাইয়ে জাল ভোট, ৩ নির্বাচনী কর্মকর্তা আটক উপজেলা নির্বাচনের কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে : মেজর হাফিজ হজযাত্রীদের জীবন আল্লাহর রাস্তায় উজাড় করে দিতে হবে : জামায়াত আমির ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক চুয়াডাঙ্গায় নির্বাচনে আটক ৩, প্যানেল চেয়ারম্যানের কারাদণ্ড নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপে খেলবে স্কটল্যান্ড মারাদোনোর চুরি যাওয়া গোল্ডেন বল নিলামে উঠছে প্রথম ধাপের উপজেলা ভোট শেষ, চলছে গণনা যুদ্ধবিরতির কাজ এগিয়ে নেয়ার সময় গাজায় নতুন করে হামলা ইসরাইলের গাজায় সাহায্য সরবরাহে কেরাম শালোম সীমান্ত খুলে দিয়েছে ইসরাইল

সকল