৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উত্তপ্ত মুসলিম দুনিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ফাঁস

উত্তপ্ত মুসলিম দুনিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ফাঁস - সংগৃহীত

সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের দ্বন্দ্ব আরো বাড়ল। এবার দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুর রহমান আলে সানি জানালেন, ইয়েমেনের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সৌদি জোট যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে আমরা তার বিরোধী। সেখানে সংঘর্ষ নয়, সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে আলোচনা। ইয়েমেনি জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা চাইছে কাতার।

কাতারের অবস্থানের চরম প্রতিক্রিয়া দিতে চলেছে সৌদি আরব ও তাদের মিত্র দেশগুলি। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ ইস্যুতে যেভাবে কাতার সরকার সরাসরি সৌদি আরবের সমালোচনা করল তাতে দুই রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব আরো বাড়তে চলেছে। আগামী ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এমনিতেই রাশিয়া থেকে যুদ্ধ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র কেনার চুক্তি ঘিরে সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজের হুমকি- সেনা অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন ছড়িয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে লেখা সেই চিঠি প্রকাশ করে দিয়েছে ফরাসি সংবাদ মাধ্যম।

তবে অবস্থানে অনড় কাতার। বিরোধিতার জেরে আগেই কাতারের সীমান্ত অবরোধ করেছে আরব জোটের বিভিন্ন দেশ। দুনিয়ার সর্বাধিক মাথাপিছু আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত কাতারে দেখা দিয়েছে খাদ্য সঙ্কট।

কাতারের উপ প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনওভাবেইে ইয়েমেনের উপর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব জোট বাহিনীর হামলা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। সেখানে লাগাতার সংঘর্ষে নিরীহদের মৃত্যু হচ্ছে। সেখানে অবিলম্বে সেনা অভিযান বন্ধ করা দরকার।

২০১৫ সালে ইয়েমেনের নির্বাচিত সরকারের প্রধান মনসুর আল হাদিকে উৎখাত করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিরা। তারপরেই আক্রমণ শুরু করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশরীয় সেনাবাহিনী। 

লাগাতার বোমা বর্ষণ করেও ইয়েমেনের রাজধানী সানা শহর দখল করতে পারেনি সেই জোট। তবে বিখ্যাত এডেন বন্দরটি হুথিদের হাত থেকে পুনরায় জোট সেনা ছিনিয়ে নিয়েছে। সেখান থেকেই সরকার পরিচালনা করেন মনসুর হাদি। আর হুথিদের সমর্থন করছে ইরান। এর জেরে মুসলিম বিশ্ব আড়াআড়ি বিভক্ত।

এই যে একদিকে সৌদি আরব-কাতার দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত মুসলিম দুনিয়া। অন্যদিকে সিরিয়ায় আইএস  সন্ত্রাসীদের রসদ সরবরাহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছে মার্কিন সেনারা। এমনই অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। একইসঙ্গে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘণের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদন সন্দেহজনক বলেও মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র কথিত জঙ্গি নির্মূলের নামে সিরিয়ায় অভিযান চালানোর কথা বলে আসলেও এবার তাদের বিরুদ্ধে আইএস সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। দেশটির এক সামরিক বিশেষজ্ঞ অভিযোগ করেছেন, ২২টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থেকে সিরিয়ার অভ্যন্তরে ১৯টি ক্যাম্পে অস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

সিরিয়ার পূর্ব গৌতায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সংগঠন যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তা সন্দেহজনক বলে মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন মস্কোতে সংবাদ সম্মেলনে এর বৈধতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি বলে দাবি করেন ল্যাভরভ।

এরমধ্যেই সিরিয়ার দেইর আল-জোর প্রদেশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় ৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর দফায় দফায় বোমা ও গোলা হামলায় কেঁপে ওঠে সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় দেরনা প্রদেশের বেশিরভাগ এলাকা। জর্ডান ও ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির সীমান্তবর্তী সুয়েদা এলাকাটি পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর আসাদ সরকার।

সরকারি বাহিনীর এ অভিযানের কারণে ওই এলাকার জনগনের জীবন আবারো হুমকির মধ্যে পড়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় গেল দু'দিনে দেরনা প্রদেশের বুসরা আল-হারিরি শহর ও এর আশপাশ থেকে ১২ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে।

একইদিন সিরিয়ার দেইর আল-জোর প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। আল-শাফা এলাকায় চালানো ওই হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। ধ্বংস হয় বেশ কিছু ভবন ও স্থাপনা। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেরনায় সরকারি বাহিনীর অভিযানের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement