১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`

রুশদের আগমনে দুবাইয়ে বাড়ি ভাড়া বাড়ছে!

দুবাইতে বাড়ছে বাড়ি ভাড়া। - ছবি : সংগৃহীত

আরেথা প্রেটোরিয়াসের জন্য ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাস ছিল অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠায় ভরা। কারণ, তিনি ও তার স্বামী ক্রিস কয়েক সপ্তাহ ধরেই দুবাই শহরে নতুন একটি বাড়ি খুঁজছিলেন।

তারা ২০১৯ থেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি বাড়িতে থাকছিলেন, কিন্তু বাড়িওয়ালা গত বছরই তাদের নোটিশ দেয় যে তাদেরকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে, কারণ ওই বাড়িতে তিনি নিজেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সমস্যা হলো, ক্রিস ও আরেথা তিন বেডরুমের ভিলা বাড়িটির ভাড়া দিচ্ছিলেন বছরে ৩৪ হাজার ডলার। কিন্তু এখন তারা ওই একই এলাকায় নতুন বাড়ি খুঁজতে গেলে দেখেন যে সমমানের বাড়ির ভাড়া ৭৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। তারা শহরের অন্য এলাকাতেও বাড়ি খুঁজতে শুরু করলেন, কিন্তু তাদের বাজেটের মধ্যে কোনো ভিলা বাড়ি পেলেন না।

শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তারা শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে অনেক দূরে এবং বেশ ছোট একটি বাড়ি নিতে বাধ্য হলেন। কিন্তু তারও ভাড়া বছরে ৪৫ হাজার ডলার- এখনকার চাইতে ৩২ শতাংশ বেশি।

এই দম্পতি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাইতে এসেছিলেন ২০১১ সালে, আর তারপর থেকে পাঁচবার বাড়ি বদল করেছেন। তবে পছন্দমত বাড়ি খুঁজে পাওয়াটা আগে কখনো এবারের মতো কষ্টকর ছিল না, আর বাড়ি ভাড়া এতো বেশি বাড়তেও তারা কখনো দেখেননি।

একটি রিয়েল এস্টেট অ্যাজেন্সি বলেছে, গত বছরের পর থেকে দুবাইতে বাড়ি ভাড়া ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।

দুবাই ছেড়ে সপরিবারে শারজাহ
দুবাইতে গত কয়েক এক বছরে শুধু ভিলা নয়, অ্যাপার্টমেন্টসহ সবরকম বাড়ির ভাড়াই বেড়েছে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ এতই বেশি যে কিছু লোককে বাধ্য হয়ে দুবাই ছাড়তে হয়েছে। ওয়াকার আনসারি তাদেরই একজন।

তিনি সপরিবারে দক্ষিণ দুবাইয়ে এক বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। তার বার্ষিক ভাড়া ছিল নয় হাজার ৫০০ ডলার। কিন্তু গত মাসে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় বাড়িওয়ালা বললেন, তিনি ভাড়া আরো তিন হাজার ডলার বাড়াতে চান।

ওয়াকার তখন ওই একই এলাকায় অন্য একটি অ্যাপার্টমেন্টের খোঁজ করলেন। কিন্তু তিনি দেখলেন সেগুলোর ভাড়া আগের চাইতে ৪০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি ভাড়া দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু তাতেও আমি অন্য কোনো এলাকায় একটি ভালো অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে পাইনি। তখন আমার সামনে একমাত্র বিকল্প ছিল দুবাই ছেড়ে শারজাহ চলে যাওয়া।’

শারজাহ দুবাইয়ের পাশেই আরেকটি আমিরাত- যেখানে বাড়ি ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম।

বেটারহোমস নামে একটি রিয়েল এস্টেট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ওয়েইন্ড বলছেন, ‘দুবাইতে এখন অনেক বেশি লোক বসবাস করছে এবং তারা এমন সব এলাকায় থাকতে চায় যেখানে তত বেশি বাড়ি খালি নেই। বাজারে সরবরাহের অভাব আছে এবং এ কারণে ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে।’

বৃদ্ধির কারণ রাশিয়ান অর্থ?
সংযুক্ত আরব আমিরাত এমন একটি দেশ যেখানকার প্রায় এক কোটি বাসিন্দার ৯০ শতাংশই বিদেশী নাগরিক। সম্প্রতি দুবাইতে শুধু ভাড়া নয়, বাড়ি কেনার দামও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।

তবে অনেকে বলছে, এখানে বাড়ি ভাড়া ও বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়া পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রাশিয়ান অর্থ। দুবাই-ভিত্তিক সাভিল্স মিডল ইস্টের সহযোগী পরিচালক কেটি বার্নেল বলেন, ‘গত বছর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এটা ঘটছে।’

ধনী রুশদের বিশেষত অলিগার্ক, কোটিপতি ও নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ-প্রতিষ্ঠাতাদের জন্য নতুন নিরাপদ আবাসভূমি হয়ে উঠেছে দুবাই। নতুন চাকরির সুযোগের কারণে অনেক তরুণ রুশও এই বিলাসবহুল শহরটিতে চলে আসছে। বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানিও তাদের স্টাফদের রাশিয়া থেকে দুবাইতে নিয়ে এসেছে।

গত বছর দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট খাতে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ছিল রুশরা।

কেটি বার্নেল বলছেন, ‘রুশরা কোথায় বাস করতে পারে বা বাড়ি কিনতে পারে এর ওপর অনেক বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে এমন কিছুই নেই। এখানে তারা ব্যবসা ও আর্থিক কার্যক্রম চালাতে পারছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ কারণে দুবাইয়ের প্রপার্টি মার্কেটে যে দামই হাঁকা হচ্ছে, তা তারা দিতে আপত্তি করছে না।’

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর ঠিক কত লোক রাশিয়া ছেড়েছে তার কোনো সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হয় যে এ সংখ্যা কয়েক লাখ হবে।

ফর্বস রাশিয়ার এক রিপোর্ট বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট পুতিন রুশ বাহিনীতে নতুন সেনা নিয়োগের উদ্যোগ নেয়ার পর সাত লাখ রুশ নাগরিক দেশ ছেড়েছে।

তবে ক্রেমলিন অবশ্য এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ ব্যাপারে একটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে আমিরাত। তারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি বা ইউক্রেনে অভিযান চালানোর সমালোচনাও করেনি।

নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়নি এমন রুশদের ওপর পাশ্চাত্যের দেশগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদেরকে ভিসা দিচ্ছে। রাশিয়ার এমটিএস ব্যাংককে আমিরাতে কার্যক্রম শুরুর লাইসেন্সও দিয়েছে দেশটি।

কোভিড মহামারির পর থেকে ভিসার ব্যাপারে কিছু উদার নিয়মনীতি করার পর দেশটিতে বহু বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা এসেছে এবং নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

দুবাইতে বাড়ি ভাড়া অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়া বা উপযুক্ত কারণ ছাড়া ভাড়াটে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আইন আছে। কিন্তু তার পরও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভাড়াটে গণমাধ্যমকে বলছে, তারা বাড়ি ছাড়ার যে নোটিশ পেয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে বাড়িওয়ালা নিজেই এখন সেখানে থাকতে চায়। কিন্তু আসলে এটা ছিল একটা অজুহাত মাত্র। আসলে তারা চাইছে আরো বেশি ভাড়ায় অন্য কাউকে ভাড়া দিতে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement