৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নাশকতা রুখে দিলো ইরান, বিপুল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার

নাশকতা রুখে দিলো ইরান, বিপুল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার - সংগৃহীত

নিজদেশে বড়সড় নাশকতা রুখে দিলো ইরান। তেহরানের নিরাপত্তা বাহিনী আরো ২৭ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে। দেশের ভেতরে বড়সড় নাশকতা চালানোর আগেই হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

ইরানের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা দেশের ভেতরে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি ও রাজধানী তেহরানে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল। সন্ত্রাসীরা কুদস দিবসের মিছিলেও হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গোয়েন্দাদের দেওয়া এক বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সন্ত্রাসীরা বেশকিছু লোকের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। এবং তাদেরকে হত্যা ও প্রতিশোধের হুমকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ধারাবাহিক অভিযানে তাদের সবাইকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।

সন্ত্রাসী দমন অভিযানে জঙ্গিদের কাছ থেকে কালাশনিকভ রাইফেল, গ্রেনেড, বোমা, পিস্তল এবং বিস্ফোরক দ্রব্যসহ বিপুল পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

দেশজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে ইরান

ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কমান্ডার ফারযাদ ইসমাইলি বলেছেন, পুরো দেশজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রয়েছে। এর ফলে শত্রুরা ইরানের আকাশে প্রবেশের সুযোগ পাবে না।

তেহরানে এক অনুষ্ঠানে ফারযাদ ইসমাইলি বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির আওতায় রয়েছে ইরানের তিন হাজার ৭০০টি পয়েন্ট। এর ফলে শত্রুর কোনো কিছুই ইরানের আকাশসীমা ভেদ করে আঘাত হানতে পারবে না।

তিনি বলেন, কোনো আলোচনার মাধ্যমে ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দুর্বল করা যাবে না। শত্রুদের আঙুল ট্রিগারের দিকে এগিয়ে গেলেই এমন জবাব পাবে যে, পরবর্তীতে এই কাজের জন্য অনুশোচনা করবে।

ফারযাদ ইসমাইলি বলেন, পরমাণু সমঝোতা সই হওয়ার পর থেকেই আমেরিকা তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করে আসছিল। এ কারণে এখন আমেরিকা ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর তা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে মানুষের দৃঢ়তা ও মনোবল আরো বাড়বে। 

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের দেশের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কারো নেই। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।

জেনারেল হাতামি শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের দেজফুল শহরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরো বলেন, সব ধরনের সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণে ইরান স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তার দেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের জনগণ ইরানি জনগণের পাশে রয়েছে। আমেরিকা, ইসরাইল ও তাদের মিত্ররা ছাড়া ইরানের আর কোনো শত্রু নেই।

প্রতিরক্ষা শক্তির ওপর ভর করে ইরান বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন জেনারেল হাতামি। তিনি বলেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনায় শত্রুর যেকোনো আগ্রাসন প্রতিহত করতে প্রস্তুত রয়েছে।

ইরান এখন ইসরাইলের চোখে নিরাপত্তার জন্য নিকটতম বিপদে পরিণত হয়েছে। ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং এই ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির অন্যতম প্রতিরক্ষা বুহ্য। ইরান প্রতিরক্ষা শিল্পে আত্মনির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

সামরিক বিবেচনায় ইরান হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের একক বৃহৎ শক্তি। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যন্ত দ্রুতগতির যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে। এসব যুদ্ধজাহাজ ঘণ্টায় ৮০ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে বলে জানিয়েছে দেশটির নৌবাহিনী।

ইরান বর্তমানে তাদের আকাশ পথে অত্যাধুনিক কিছু যুদ্ধবিমানের সংযোগ ঘটিয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানের দু’টি সামরিক বাহিনী রয়েছে। এর একটি নিয়মিত বাহিনী অপরটি বিশেষ বিপ্লবী গার্ড সেনা, যার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি।

ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড বাহিনী বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। এই গার্ড সেনারা বেশি শক্তিশালী এবং সুসজ্জিত। এই বাহিনীকে সময়ের চাহিদায় আধুনিক করে গড়ে তোলা হয়েছে। ইরানের রয়েছে বিশেষ কুর্দি বাহিনী ও নেভাল বাহিনী, যারা গেরিলা যুদ্ধ করতে সক্ষম।

ইরানের আছে দূরপাল্লার যুদ্ধবিমান, যুদ্ধাস্ত্র, সাবমেরিন, নৌ বাহিনীর ছোট যুদ্ধবিমান এবং শক্তিশালী সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। স্থল যুদ্ধ ও পরিবহনের জন্য ইরানি বাহিনীতে আছে আধুনিক যুদ্ধ হেলিকপ্টার। ইরান ড্রোন বিমান তৈরি করেছে, নতুন নতুন যুদ্ধ জাহাজের প্রবেশ ঘটিয়েছে।

ইরানের রয়েছে নতুন যোগাযোগব্যবস্থা, ভিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা, শক্তিশালী রাডার ব্যবস্থা, নতুন স্যাটেলাইট ব্যবস্থা, মনুষ্যহীন আকাশ যান বা ড্রোন। সমর বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের কাছে রয়েছে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ও সবচেয়ে বড় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সংগ্রহ।

 


আরো সংবাদ



premium cement