৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধস

-


দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে রীতিমতো ধস নেমেছে। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র তিন দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেখানে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ছয় দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গেল সপ্তাহের প্রতিবেদনে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থিরমূল্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩.৭৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.০৮ শতাংশ।
আলোচিত সময়ে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে শিল্প ও সেবা খাত। এই সময়ে এই দুই খাতেই প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। এর মূল কারণ এ সময়ে এসব খাতে জ্বালানি স্বল্পতার কারণে পুরোমাত্রায় কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কোয়াটার্লি ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস ম্যানুয়াল অনুযায়ী, কোনো কোয়ার্টার বা প্রান্তিকের জিডিপির প্রথম প্রাক্কলনের সময় হালনাগাদ সকল তথ্য-উপাত্ত বিদ্যমান থাকে না। পরবর্তীতে তা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। ফলে আগের প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করা যেতে পারে।
সরকারের গত ২৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীতে আইএএমএফের পরামর্শ মোতাবেক বিবিএস কর্তৃক ত্রৈমাসিক মোট দেশজ উৎপাদন প্রাক্কলনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।

প্রবৃদ্ধি বেড়েছে কৃষিতে, কমেছে শিল্প ও সেবা খাতে
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প ও সেবার সব খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। শুধুমাত্র কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৬৫ শতাংশ, যা প্রথম প্রান্তিকে ছিল ১.০৪ শতাংশ।
প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ৯.৬৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩.২৪ শতাংশ এবং সেবা খতে ৩.৭৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৩.০৬ শতাংশ।
এ দিকে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতেও (গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়) শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ব্যাপক কমেছে, আর কৃষিতে বেড়েছে।
বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষি খাতে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থিরমূল্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৬৫ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ৪.২২ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে তা ছিল ২.২০ শতাংশ।
শিল্প খাত : পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থিরমূল্যে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.২৪%, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ১০ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ১৪.৫০ শতাংশ।
সেবা খাত : পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে স্থিরমূল্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.০৬ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬.৬২ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল ৭.২৫ শতাংশ।

এখানে উল্লেখ্য, জিডিপি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত পণ্য ও সেবার বাজারের সামষ্টিক মূল্য। চলতি মূল্যে জিডিপির হিসাব বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট খাতটিতে যে পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হয়েছে তার বাজারমূল্যে । বিবিএস বর্তমানে প্রান্তিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব প্রকাশ করে থাকে। সে হিসাবে দেশের অভ্যন্তরে এ তিন মাসে কোন খাতে কত টাকার পণ্য বা সেবা উৎপাদিত হয়, তার তথ্য পাওয়া যায়। বিবিএস শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতের মোট ১১টি উপখাতের হিসাবের ভিত্তিতে ত্রৈমাসিক জিডিপির এ হিসাব করে থাকে। খাতগুলো হলো কৃষি, বন ও মৎস্য; খনি ও খনন শিল্প; উৎপাদন খাত; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ; নির্মাণশিল্প; পাইকারি–খুচরা ব্যবসা, মোটরগাড়ি মেরামত; পরিবহন, খাদ্য সরবারহ, তথ্য ও যোগাযোগ সেবা; আর্থিক ও বিমা কার্যক্রম; আবাসন, পেশাদার ও প্রশাসনিক সেবা খাত; লোকপ্রশাসন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত এবং শিল্প–সংস্কৃতি ও অন্যান্য সেবা।
বিবিএসের দ্বিতীয় প্রান্তিকের, ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে দেশে টাকার অঙ্কে চলতি মূল্যে প্রায় ১৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে চলতি মূল্যে টাকার অঙ্কের জিডিপির আকার ছিল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭০ কোটি। এই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে টাকার অঙ্কে জিডিপির আকার বেড়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৪২৫ কোটি।


আরো সংবাদ



premium cement