৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কিশোরগঞ্জের হাওরে দীর্ঘ আলপনায় বর্ণিল বর্ষবরণ

কিশোরগঞ্জের অলওয়েদার সড়কে সর্ববৃহৎ আলপনা : নয়া দিগন্ত -

রংতুলি হাতে একদল শিল্পীর ছোটাছুটি। তাদের কেউ একমনে তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তুলছে সড়ক, কেউবা দিচ্ছে নির্দেশনা, কেউ এনে দিচ্ছে রঙের কৌটা। দেখতে দেখতে সড়কটি ঢেকে যায় বর্ণিল আলপনায়। আর তা দেখতে ভিড় জমায় হাওরের মানুষ। এবারের বর্ষবরণে দেশজুড়ে বৈশাখের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিতে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে অষ্টগ্রাম পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়কে বাঙালি ঐতিহ্যের এ আলপনা আঁকা হয়েছিল।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর আলপনা আঁকার কাজ উদ্বোধন করেন। দেশের ৬৫০ জন চারুকলা শিক্ষার্থী এ আলপনা আঁকেন। গত শনিবার দিন-রাতে সেই আলপনার কাজ শেষ করা হয়। গত রোববার পয়লা বৈশাখে সকাল সাড়ে ৮টায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আলপনা আঁকা সড়কটি জনগণের জন্য খুলে দেন।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, আলপনাটি ছিল বর্ষবরণ উৎসবে বিশ্বের দীর্ঘতম আলপনা।

‘উৎসবের রঙে হোক বাংলামি’ এই স্লোগানে ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’ নামে এটির যৌথ আয়োজন করে এশিয়াটিক এক্সপেরিয়েনশিয়াল মার্কেটিং লিমিটেড, বাংলালিংক কমিউনিকেশনস লিমিটেড ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড।
আলপনা আয়োজন সম্পর্কে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটির চেয়ারম্যান নাট্য ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর নয়া দিগন্তকে বলেন, এ আয়োজনটি তাদের অষ্টম সংস্করণ। কোভিড ১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে গত কয়েক বছর আলপনা উৎসব বন্ধ ছিল। এবার কিশোরগঞ্জসহ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও খুলনার শিববাড়ি মোড়ে একযোগে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে কিশোরগঞ্জের আলপনাটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘতম। এটি আঁকা হয় মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত। আলপনাটি গিনেসবুকে স্থান পাবে এই আশা তাদের।
রোববার পয়লা বৈশাখের দিন সকাল থেকেই দীর্ঘই আলপনা দেখার জন্য মানুষ ভিড় করেন।
দেড়টার দিকে মিঠামইনের অলওয়েদার সড়কে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও শত শত মানুষ আলপনা আঁকা সড়কে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।

তাদের মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব।
আলপনা আঁকা দেখতে এসেছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম। দুপুরের রোদে ঘেমে একাকার হয়ে গেলেও সে দিকে খেয়াল নেই তার। আলপনার ওপর নানা ভঙ্গিতে সেলফি তুলতেই তিনি ব্যস্ত। মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, হাওর এমনিতেই সুন্দর। হাওরের অলওয়েদার সড়ক আরো সুন্দর। এই সড়কের আলপনা হাওরের রূপকে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
দূরে মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আলপনা আঁকা দেখতে আসে মিঠামইনের অফিসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসফিয়া জান্নাত (৭)। একঝটকায় মায়ের হাত ছাড়িয়ে সে রোদের মধ্যে বসে পড়ে আলপনা আঁকা সড়কে। রংতুলি দিয়ে আঁকা সড়ক দেখে চিৎকার করে সে বলে, ‘মা, দেখো কী সুন্দর করে রং করা হয়েছে আমাদের সড়ক!’
কটিয়াদী থেকে কলেজছাত্র আরিফুল ইসলাম বন্ধুদের নিয়ে আলপনা দেখতে এসেছেন। দীর্ঘ আলপনা দেখে তারা উচ্ছ্বসিত। আরিফ বলেন, হাওরের সবুজের মাঝে বর্ণিল এবং দীর্ঘ আলপনায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটি স্বচক্ষে না দেখলে বর্ণনা করা কঠিন।
আয়োজকরা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক পুরো আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন।
মিঠামইনের অলওয়েদার সড়কে পয়লা বৈশাখে আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১ অনুষ্ঠানে তিনি ছাড়াও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখসহ গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement