২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আম রফতানি দ্বিগুণের টার্গেট

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ২৩ মে
আম রফতানি দ্বিগুণের টার্গেট -

দেশে বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও রফতানি উপযোগী আম খুবই কম চাষ হয়। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৫ হাজার টন আম রফতানির চাহিদা রয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। গত বছর ১৮২০ টন আম রফতানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর দ্বিগুণেরও বেশি তথা প্রায় ৪ হাজার টন টার্গেট রয়েছে। চাহিদা মতো ভালো মানের (রফতানি উপযোগী) আম পাওয়া সাপেক্ষে এবং কৃষি সম্প্রসারণসহ সংশ্লিষ্ট উইংগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করা গেলে টার্গেট অনুযায়ী আম রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। সর্বশেষ গত বছর (২০২১-২২ অর্থবছর) আম রফতানি হয়েছে ১৮২০ টন। তার আগের বছর রফতানি হয়েছে ১৭৫৭ টন। এর আগে আম রফতানির হার খুবই কম ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৯১ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৭৯ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩০৮ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩১ টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৯ টন আম রফতানি হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মূলত রফতানি উপযোগী না হওয়ায় বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা এ ফল কিনতে আগ্রহ কম দেখায়। চলতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে ছয় জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ২০টি গুচ্ছ এলাকায় (ক্লাস্টার) রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে এর বেশির ভাগই রফতানি করা যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের অধীনে ২০টি গুচ্ছ এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর, যশোরের শার্শা, রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এবং নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় একটি করে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এসব উপজেলার বাগানে আম উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে মনিটরিং করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। পাশাপাশি বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও মনিটরিং করা হয়। এর বাইরে বাকি ১১টি গুচ্ছ এলাকা অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে মনিটরিং করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর বাঘায় চারটি, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুটি, যশোরের শার্শায় একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দুটি ও নওগাঁর সাপাহারে দুটি রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনের গুচ্ছ গ্রাম। মূলত এসব বাগানের আকার বড় এবং দাগমুক্ত আম রফতানির জন্য রফতানিকারকরা কৃষকদের থেকে কেনেন।

ডিএইসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য মতে, ২০টি গুচ্ছ এলাকায় ৩০৪ কৃষকের আমবাগান রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ২ হাজার ১৩৩ একর। বাগানগুলোয় এ বছর ১২ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ডিএইর কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর সারা দেশে আড়াই লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টন আম উৎপাদন হতে পারে। গত অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ টন। আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) উৎপাদন হয় ২৪ লাখ ৬৮ হাজার টন। তবে এর মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে রফতানি হয়।

ডিএই সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৮টি দেশে ১ হাজার ৭৫৭ টন আম রফতানি হয়। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৬৪২ টন, সৌদি আরবে ২২৬, কাতারে ১৬১, ইতালিতে ১৭৩ ও কুয়েতে ১৪৯ টন রফতানি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৮৮ টন আম রফতানি হয়েছিল। আগের বছর রফতানির পরিমাণ ছিল ২৮৩ টন। ডিএই বলছে, দেশের আম রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাজ্য। মোট রফতানির প্রায় ৪০ শতাংশই এ দেশে রফতানি হয়। আরো কয়েকটি দেশে অল্প পরিমাণে রফতানি হলেও বড় পরিসরে ২৩ মে শুরু হবে আম রফতানি। এ দিন রফতানিকারকরা যুক্তরাজ্যের বাজারে আম রফতানি শুরু করবেন। তবে বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা ও সরকারিভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই রফতানি বাড়ানো যাবে বলে মনে করছেন রফতানিকারকরা। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পেলে এবার চার হাজার টন আম রফতানি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা।

ডিএইর রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় আমাদের এবার দ্বিগুণ আম রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে। সে জন্য ক্লাস্টার করে কৃষকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। পাশাপাশি মনিটরিং করেছি যেন উত্তম কৃষিচর্চা মেনে আম উৎপাদন হয়। সে ক্ষেত্রে বিদেশে বাংলাদেশের আমের বাজার প্রসারিত হবে। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ভালো পরিমাণ আম রফতানি করা সম্ভব হবে। একেবারে পরিপক্বতা না এলে আমরা রফতানি করতে নিষেধ করছি। কারণ একবার বাজার নষ্ট হয়ে গেলে পরে সেটি ধরা যাবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০টি দেশে আম রফতানি হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় যুক্তরাজ্যে। ইউরোপভুক্ত দেশে আমসহ যেকোনো ফল ও সবজি রফতানি হয় রাজধানীর শ্যামপুরস্থ কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে আম রফতানি শুরু হলেও আগামী ২৩ মে যুক্তরাজ্যে বড় পরিসরে আম রফতানির উদ্বোধনীর মাধ্যমে ইউরোপে রফতানি কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ দিন আম রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।

বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো: মনজুরুল ইসলাম বলেন, দেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৫ হাজার টন আম রফতানির চাহিদা রয়েছে। আমাদের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার অভাবে আমরা আম পাঠাতে পারি না। কার্গো স্পেস পাওয়া যায় না। রফতানির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ আলাদাভাবে কার্গো সুবিধা দেয়। এ কারণে তারা বেশি পরিমাণ রফতানি করতে পারে। ভারতের চেয়ে আমাদের দাম ১৬-২০ টাকা কেজিতে বেড়ে যায় শুধু বাড়তি পরিবহন খরচের কারণে। আবার কার্গোয় কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা পাওয়া যায় না। রফতানি বাড়াতে হলে এসব সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের বিমান ভাড়া বা কার্গো ভাড়া বেশি। রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিও একটি বাধা।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement