২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বগুড়ার দুই উপজেলা

ছেলের মাদকাসক্ত বন্ধুর হাতে নারী খুন, শিক্ষার্থীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার

-


বগুড়ার শিবগঞ্জে সাবেক ইউপি সদস্য নারগিছ আরা বেগম (৫৫) নিজ ছেলের বন্ধুর হাতে এবং শাজাহানপুরে কলেজছাত্র শাহরিয়ার ইসলাম রিয়াজ ওরফে আশিক (১৮) দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন। পুলিশ এ দু’টি ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করেছে। নিহত নারগিছ শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের রায়নগর মধ্যপাড়ার মৃত আব্দুল কাদেরের স্ত্রী এবং আশিক বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র এবং শাজাহানপুর উপজেলার পরানবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মালয়েশিয়া প্রবাসী শফিকুল ইসলামের ছেলে। গত রোববার বিকেলে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।


গতকাল সোমবার বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ জানান, রোববার বিকেলে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে নারগিছ আরা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর পুলিশ তদন্তে নামে। নারগিছ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহর থেকে রায়নগর মধ্যপাড়ার নিজ বাড়িতে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তার পুত্র আজিজুল হকের (বর্তমানে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন) বন্ধু মুন্না মিয়া (২২) ওই বাড়িতে ঢুকে ধারালো ছুরি দিয়ে নারগিছের গলা, পিঠে ও মাথায় কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান। ওই সময় বাড়ির সামনে পাহারায় ছিলেন তার আরেক বন্ধু খালেদ হাসান (২২)। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খালেদ ও মুন্নাকে ওই বাড়ির সামনে ঘোরাফেরার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। এর সূত্র ধরে রাত ১টার দিকে খালেদকে তার বাসা থেকে আটক করা হয়। তার তথ্যে পরে মুন্নাকে রাত প্রায় ৩টার দিকে বগুড়া সদরের মাটিডালী এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। আর এ কাজে খালেদ তাকে সাহায্য করে। তাদের দেখানো তথ্যে নিহতের বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ের ঝোপ থেকে রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার হয়। গ্রেফতার আসামিরা একসাথে মাদকসেবন করত। এর মধ্যে নারগিছের ছেলে আজিজুল বর্তমানে বগুড়া শহরের একটি নিরাময়কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। আমাদের ধারণা, আজিজুলের সাথে মাদক বা অন্য কোনো দ্বন্দের কারণে নারগিছকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে বাদি হয়ে মামলা করেছেন।


অপর দিকে শাজাহানপুরে শাহরিয়ার ইসলাম রিয়াজ ওরফে আশিক (১৮) নামে কলেজপড়–য়া একছাত্র মায়ের প্রতি অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দুই দিন পর তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত রোববার বিকেলে উপজেলার রামপুর গ্রামের এক ভুট্টাক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। সে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
নিহতের প্রতিবেশীরা জানান, দুই দিন আগে রিয়াজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিহতের মা শাজাহানপুর থানায় জিডি করেছিলেন। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয় পুলিশ তা নিশ্চিত নন। অনেকের ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে বন্ধুদের মাধ্যমে তাকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ দিকে উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের লোকজন জানান, বিকেলে ওই গ্রামের জংলীপুকুর এলাকার ভুট্টাক্ষেত দেখতে যায় স্থানীয় কৃষকরা। এ সময় হাত-পায়ের রগকাটা ও গলাকাটা একটি লাশ দেখতে পেয়ে তারা পুলিশে খবর দেয়। আর সংবাদটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে নিহতের স্বজনরা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে এসে তার লাশ শনাক্ত করে। তারা ধারণা করছেন, এই হত্যাকাণ্ড অন্য কোথাও করে এখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে থানায় নেয়া হয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement