বাণিজ্যমেলায় অবৈধ পার্কিং : যানজটে ক্রেতা দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের ভেতরে স্থায়ী ও নির্ধারিত পার্কিংয়ের স্থান থাকা সত্ত্বেও চারদিক ঘিরে পুরো এলাকাজুড়েই যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে নিয়মিত পরিবহন যাত্রী ও পথচারীসহ মেলার ক্রেতা দর্শনার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। পুলিশের নামে পার্কিংয়ে আদায় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা। এ নিয়ে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ দিকে গতকাল শনিবার ছুটির দিনে ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা জমে উঠে। দুপুরের পর থেকে মেলাপ্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে। ক্রেতা বিক্রেতারা কেনা কাটায় ব্যস্ত সময় পার করে। শুক্রবার ছুটির দিনে এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ টিকিট কেটে মেলায় প্রবেশ করে। মেলায় মূল্যছাড়, ডিসকাউন্ট আর বিভিন্ন অফারে পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রচুর। সাপ্তাহিক ছুটির শেষ দিনে গতকাল ক্রেতা বিক্রেতারা কেনাবেচায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

জানা গেছে, বাণিজ্যমেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের মতো গাড়ি পার্কিংয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ২০ লাখ টাকায় বাণিজ্য মেলার নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারা পায়। সে ইজারার টাকা আদায় করতে পুলিশের নিয়োজিত যুবকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৯ জানুয়ারি মেলার পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণখালী গ্রামের হামিদুল হক (৩৮) নামে এক যুবক নিজের মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়ার সময় পুলিশের নিয়োজিত লোকজন তার কাছে পার্কিংয়ের টাকা দাবি করে। সে টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে উদ্ধার করে হামিদুল হককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের ঘটনায় দড়িগুতিয়াবো গ্রামের জয়নাল আবেদিন (৪৫) ও তার ছেলে রোবেল আহমেদকে (২২) গত ২৭ জানুয়ারি পুলিশ আটক করে। পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থানের পার্শ্ববর্তী সড়কে পরিবহন চলাচলকারীদের কাছ থেকেও জোরপূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ দিকে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত ঢাকা বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের আশপাশে যত্রতত্র বাস, ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা, অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিংয়ের পাশাপাশি যাত্রী উঠানো নামানো হচ্ছে। তাতে প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী, পথচারী ও মেলার ক্রেতা দর্শনার্থীরা। বাণিজ্যমেলাকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী এ অবস্থা চলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ দিকে পাঁচটি বিষয়সহ যানজটকে দায়ী করে মেলার ব্যবসায়ীরা বিনাভাড়ায় সাতদিন সময় বাড়ানোর জন্য সংবাদ সম্মেলন করে দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, যানজটের কারণে ক্রেতা দর্শনার্থীরা আশানুরূপ মেলায় আসেনি। কেউ কেউ আসলেও যানজটের ভোগান্তিতে পড়ে দ্বিতীয়বার ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় আসেনি। যেসব ক্রেতা দর্শনার্থী মেলায় একাধিকবার আসেন যানজটের কারণে এবার তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বারবার প্রশাসনকে তাগিদ দেয়া হলেও যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেনি পুলিশ।

যানবাহন পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত স্থান থাকা সত্ত্বেও গাড়িচালক ও মালিকরা নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং করছে না। তারা আশপাশের জমিতে, বাড়িতে, খেলার মাঠে, পতিত জমিতে, ঢাকা বাইপাস সড়কের দুইপাশসহ আশপাশের এলাকায় পার্কিং করছে। মেলার প্যাভিলিয়নের চারপাশে লালমাটি, হঠাৎমার্কেট, মাঝিপাড়া, শিমুলিয়া, শাহ্-সাহেবের বাড়িসহ আশপাশের এলাকায় পার্কিং করা হচ্ছে। সুযোগ পেয়ে পুলিশের নিয়োজিত লোকজনসহ কিছু মাস্তান, সন্ত্রাসীরা সকল যানবাহন থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্কিংয়ের নামে আদায়কৃত টাকার রশিদ দেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, সিএনজি ও প্রাইভেটকার থেকে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ভারী যানবাহন থেকে আলোচনা সাপেক্ষে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। টাকা আদায়কারীদের গায়ে পুলিশ লেখা কটি থাকায় প্রতিবাদ করার কেউ সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করলেই মারধর করা হয়। হত্যা মামলায় আসামি করার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিমুলিয়া গরুর হাট, জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের মাঠ, বিআরটিসির বাসস্ট্যান্ডের চারপাশ দখল করে পার্কিং করা হচ্ছে। আর টাকা আদায় করছে পাঁচ-ছয়জন যুবক। মেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের ফুটপাথের খোলা খাবার, সিরামিক, কাপড়, খেলনা, সোপিস, ঝালমুড়ি, ফুলের দোকান, শীতবস্ত্র, শালসহ দোকানসহ দুই শতাধিক দোকান থেকেও চাঁদার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

মেলার পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, এসব অবৈধ পার্কিং যেকোনো সময় পুলিশ উচ্ছেদ করতে পারে। গ্রেফতার করতে পারে চাঁদা আদায়কারীদের। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
মেলার ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়া বলেন, অবৈধ পার্কিং ও টাকা আদায়ের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। ক্রেতা দর্শনার্থীদের সুষ্ঠু যাতায়াতের জন্য করা যত্রতত্র পার্কিং তুলে নিতে হবে। পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পার্কিংয়ে চালকদের অব্যবস্থাপনা আর স্থান সঙ্কটে ঢাকা বাইপাস সড়কের দুইপাশসহ যত্রতত্র পার্কিং করা হচ্ছে। তবে তা নিরসনে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, বাণিজ্যমেলার নির্ধারিত স্থানেই গাড়ি পার্কিং করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ ২০ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছে।
সেই ইজারার টাকা পুলিশের নিয়োজিত লোকজন রসিদের মাধ্যমে আদায় করছে। পার্কিংয়ে টাকা আদায়ে অনিয়মকারী চার-পাঁচজনকে ইতোমধ্যে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে ভুলত্রুটি থাকতে পারে। পার্কিং ছাড়া চলমান কোনো গাড়ি থেকে কেউ টাকা আদায় করলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, গাড়িচালকদের অদক্ষতা ও অবহেলাই যানজটের প্রধান কারণ। এ ছাড়া মেলার সীমানা প্রাচীরের বাইরের কোনো বিষয় আমার দায়িত্বে পড়ে না।