রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের চতুর্থ দিনের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন মার্কিন নির্মাতা স্পাইক লি এবং অস্ট্রেলিয়ান নির্মাতা অ্যান্ড্রু ডমিনিকের কথোপকথন অনুষ্ঠান। জেদ্দার রেড সি মলের ভক্স সিনেমার ৬ নম্বর হলে বিকেল ৪টায় স্পাইক লি এবং ৫টায় কথা বলেছেন অ্যান্ড্রু ডমিনিক। আলাদাভাবে দু’জন ব্যক্তির বায়োপিক নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন তারা। স্পাইক লির সিনেমার নাম ‘ম্যালকম এক্স’ আর ডমিনিকের সিনেমা ‘ব্লডেন’।
ম্যালকম এক্স ছিলেন একজন আমেরিকান মুসলিম মন্ত্রী এবং মানবাধিকার কর্মী। যিনি ১৯৬৪ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি ইসলামের প্রচারক হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের মাঝে ইসলামের প্রতি আনুগত্য বাড়াতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে ১৯৯২ সালে সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নেন স্পাইক লি। সিনেমার প্রয়োজনে একটি দৃশ্যের শুটিং করার কথা ছিল পবিত্র কাবা শরিফে। কিন্তু কাবা শরিফে সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ক্যামেরা নেয়াটা ছিল চ্যালেঞ্জের। এ দিকে সৌদি আরবে সিনেমায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাজটি আরো কঠিন হয়ে পরে। তাই ১৯৯২ সালে শুরু করা শুটিং শেষ হয়েছে ২০১৭ সালে। আর এবারের রেড সি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় আয়োজনে প্রথমবারের মতো সিনেমাটি দেখেছেন আরব দর্শকরা।
এ বিষয়ে কথা বলতে স্পাইক লি যখন তার চির চেনা লুক মোটা ফ্রেমের চশমা পরে হল রুমে প্রবেশ করেন তখন সবাই দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি প্রথমেই উপস্থাপককে বলেছেন, আমি খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারি না। তাই প্রশ্ন করতে হবে অল্প কথায়। উপস্থাপক প্রথমেই ‘ম্যালকম এক্স’ সিনেমার অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্পাইকলি আবেগ তাড়িত হয়ে পরেন। ‘কাবা শরিফে প্রথম সিনেমার ক্যামেরা নেয়া হয়েছিল আমরা ওই ছবির জন্য। কিন্তু সিনেমাটি শেষ করতে আমার প্রায় ৩০ বছর সময় লেগেছে।’ অন্যভাবেও তো কাবা শরীফের দৃশ্য দেখানো যেত। এর জন্য ওখানেই কেন ক্যামেরা নিতো হলো? প্রশ্নের জবাবে স্পাইক লি বলেন, আসলে ম্যালকম এক্স ইসলাম ধর্মের প্রতি কতটা নিবেদিত ছিলেন তা আমরা সর্বোচ্চ বাস্তব সম্মতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। প্রথমে ওখানে শুটিংয়ের অনুমতি চাইলে আমাকে যেতে দেয়া হয়নি। আমি তখন দ্বিতীয়বার আবেদন করিনি; কারণ আমি চাইনি আমার জন্য ইসলামের পবিত্রতায় আঘাত আসুক। এ জন্যই আমি ওই দৃশ্য ধারণের জন্য প্র্যাকটিসিং মুসলিম সিনেমাটোগ্রাফার নিয়োগ দিয়েছিলাম। তবে দীর্ঘ দিন পর হলেও আমি সৌদি আরব আসার অনুমতি পেয়েছি এবং এখানকার তরুণ প্রজন্মের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য খুবই আনন্দদায়ক ঘটনা।
স্পাইক লি বলেন, ম্যালকম এক্স ইসলাম গ্রহণের পরপরই হজ পালন করতে মক্কা এসেছিলেন এবং এর মাধ্যমেই সবাই জানতে পেরেছিলেন যে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ আদালতের অনুমতি ক্রমে আমরা সিনেমার মাধ্যমে সে দিকটা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছিলাম ‘ম্যালকম এক্স’ মহাকাব্যিক একটি চলচ্চিত্র হোক। যেমন ডেভিড লিনের ‘ডক্টর ঝিভাগো’ বা ‘লরেন্স অব আরাবিয়া’।
তিনি বলেন, পবিত্র হজ পালনের সময় কাবা শরিফে যে পরিমাণ মানুষ আসেন তা অন্য কোনোভাবে আয়োজন করে বাস্তব সম্মতভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব ছিল না। শুটিংয়ের সময় এই দিকটি নিয়েও আমরা অনেকবার চিন্তা করেছি। কারণ হজের অনুভূতি অন্য কোনোভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।
ম্যালকম এক্স তার আত্মজীবনীতে মুসলিম সহকর্মীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের চোখ ছিল নিলের চেয়ে নীল’। তখনই তিনি বুঝতে পেলেছিলেন যে ইসলাম সম্পর্কে তার আগের কিছু ধারণা ছিল মিথ্যা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্পাইকলি তার বর্তমান ব্যস্ততা নিয়েও কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন আমি ইএসপিএন সিরিজের ‘দা সাগা অফ কলিন কেপার্নিক’ নিয়ে কাজ করছি। আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড় কলিন কেপার্নিককে নিয়ে এই সিরিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। কালো মানুষদের হত্যার প্রতিবাদে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে খেলার মাঠে হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ করায় তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা