বাস্তবায়নে ধীরগতি, নতুন অঙ্গযুক্ত, প্রকল্পের মেয়াদ শেষপ্রান্তে এসে ক্রয়পদ্ধতি পুনর্নির্ধারণের কারণে খরচ ৪৮.১৭ শতাংশ বাড়ছে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সার) প্রকল্পে। ১০ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা থেকে ব্যয় এক লাফে পাঁচ হাজার ৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা বৃদ্ধিতে মোট খরচ এখন দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৫ শ’ কোটি ২১ লাখ টাকা। ১১ খাতে নতুন করে ব্যয় বাড়ছে। সময় বাড়ছে আরো দুই বছর। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে অনুমোদিত মেয়াদ। নির্ধারিত সময়ে বাস্তব অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। আর খরচ হয়েছে আট হাজার ৪২৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন ব্যয়ে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্প থেকে সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো দুই বছর। বিসিআইসি বলছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত কারণে ঋণচুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় বাণিজ্যিক চুক্তির ইফেক্টটিভ কন্টাক্ট বিলম্বে কার্যকর হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড ও পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড সার কারখানা আছে। বিদ্যমান দুটি ইউরিয়া সার কারখানার কম্পাউন্ডে দৈনিক দুই হাজার ৮ শ’ মেট্রিক টন ও বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব একটি গ্র্যানুয়াল ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানো এবং কৃষকদের সুলভে সার প্রদান নিশ্চিত করার জন্য একটি প্রকল্প নেয়া হয়, যা ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকা খরচে অনুমোদন দেয়া হয়। এতে বিডার্স অর্থায়ন হলো ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
জানা গেছে, প্রকল্পটির যেসব খাতে ব্যয় বাড়ছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- রেললাইন স্থাপনে ২৬১ কোটি টাকা, গ্যাসলাইন স্থাপনে ৭০ কোটি টাকা এবং আয়কর (জেনারেল কন্ট্রাকটরদের) এক হাজার ৯১৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ ছাড়া আমদানি ভ্যাট হিসেবে ৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, গ্যাস বিল ১৬২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, মেশিনারি তেল ১৯ কোটি টাকা এবং কেমিক্যাল খাতে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এ ছাড়াও বেড়েছে অনাবাসিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণে ২০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা, কারখানার ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতির জন্য ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রাস্তা তৈরিতে দুই কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং অফিস সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এ দিকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পক্ষ থেকে প্রকল্প সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়াগত কারণে ঋণচুক্তি বিলম্বিত হওয়ায় বাণিজ্যিক চুক্তির ইফেক্টটিভ কন্টাক্ট বিলম্বে কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া সিডি ভ্যাট, রেললাইন স্থাপন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন, লোন ব্যবস্থাপনা ফি, ইন্স্যুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন ফি, কেমিক্যাল পণ্য, মেশিনারিজের জন্য লুব্রিকেন্ট ও ট্রায়াল রানের জন্য গ্যাস ক্রয় এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সেইসাথে নতুন অঙ্গ হিসেবে জেনারেল কন্ট্রাকটরদের আয়কর (চুক্তি অনুসারে), সরকারি বিভিন্ন লাইসেন্স ফি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অডিট ফি ও অনুষ্ঠান খাত সংযোজন, অর্থ বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে ইকোনমিক কোড বা সাব কোড হালনাগাদকরণ এবং করোনা মহামারীর কারণে কারখানা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানিতে দেরি হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু খাতে ব্যয় কমেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-সিভিল কাজের ট্যাক্স কমেছে ৫০ কোটি টাকা। আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন সংস্কার খাতে কমেছে ৬৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং দেশী ও বিদেশী পরামর্শক খাতে কমেছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন ও জাপানের নামকরা কোম্পানি কাজ করছে। বিডার্স ফাইন্যান্স হিসেবে জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন, ব্যাংক অব টোকিও মিৎসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড এবং এইচএসবিসি হংকং অর্থায়ন করছে। টাইম লাইন অনুযায়ী বাস্তবায়নের কাজ চলছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়। সেই সাথে রেললাইনসহ নতুন কিছু আইটেম যোগ করতে হয়েছে। সবকিছু মিলে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। তবে আশা করছি বর্ধিত মেয়াদের আগেই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি উপকারী বিবেচনায় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা