২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি

অভিভাবকদের ওপর চাপ

-

দুই টাকার ফটোকপি এখন পাঁচ টাকা। প্রতি রিম দিস্তা কাগজের দামও বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। মোটা মলাটের ২০ টাকার খাতার দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫-৩০ টাকা। সাধারণ বলপয়েন্ট কলমও পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। শিক্ষা উপকরণের প্রতিটি পণ্যের দামের ক্ষেত্রে এই একই অবস্থা। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শুধু বাবা মা একা নন, ঊর্ধ্বদামে এখন সরাসরি নাকাল হচ্ছে খুদে শিক্ষার্থীরাও। অনেক পরিবারে একাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও তো তাদের অবস্থা আরো সঙ্কটে। অভিভাবকদের অনেকের পক্ষেই তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে শিক্ষা উপকরণেরও মূল্য বৃদ্ধিতে বাড়তি চাপে পড়েছেন সব অভিভাবক।
বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আকাশচুম্বী। সেই সাথে এখন আবার সমানতালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা উপকরণের দামও। ফলে একটি পরিবারে যদি দুই বা তিন সন্তান শিক্ষার্থী (লেখাপড়া অবস্থায়) থাকে তাহলেও তো ওই পরিবারের এখন পথে বসার উপক্রম। সাধারণ বাজার খরচের সাথে শিক্ষা উপকরণের বর্ধিত দামের কারণে অনেক পরিবারেই নাভিশ্বাস উঠেছে।
মিরপুরের বাসিন্দা আজিজুর রহমান জানান, আমার এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়ে কলেজে পড়াশোনা করে আর দুই ছেলে স্কুলের শিক্ষার্থী। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করে মোটামুটি ভালো বেতনে অর্থ উপার্জন করলেও দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে টিকে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে আরো বলেন, দৈনন্দিন বাজার খরচে অনিচ্ছা সত্যেও ব্যবহার এবং খরচ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু শিক্ষা উপকরেণর দাম বৃদ্ধি পেলেও এ ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ খরচ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। কোনো অভিভাবকই চাইবেন না খরচের কৃচ্ছ্রতা সাধন করে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়–ক। তাই অনেক পরিবার এখন হিমশিম খাচ্ছে।
অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত কম উপার্জনের কোনো পরিবারে যদি একাধিক সন্তান শিক্ষার্থী থাকেন তাহলে তো পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ই থাকবে না। সাধারণ একটি হিসাবে দেখা যায়, স্কুলের বেতন, টিউশন ফি, কোচিং বা প্রাইভেট টিউটরের বেতন দেয়ার পর একটি বড় অঙ্কের টাকা প্রতি মাসেই প্রত্যেক পরিবারকেই সন্তানদের নিত্যপ্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের জন্য ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে এই ব্যয় বাড়ছে তাতে অনেক পরিবারের পক্ষেই সেই ব্যয় বহন করার মতো সামর্থ্য নেই।
এদিকে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের তৈরি খাতার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। সেই সঙ্গে বেড়েছে চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশল শিক্ষা ও আইনের বইয়ের দামও। বিভিন্ন বিদেশী লেখকের মূল বই বাজারে আর পাওয়াই যাচ্ছে না। ফটোকপি বইয়ের দাম বেড়েছে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ।


রাজধানীর বাংলাবাজার আর নীলক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার সেøট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।
ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের পাঠ্যবই ছাড়াও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচও বেড়েছে অনেক বেশি। কেননা পাঠ গ্রহণের প্রয়োজনে তাদের বিভিন্ন রেফারেন্স বুক ও নোট ফটোকপি করতে হয়। গত এক মাসে ফটোকপি ব্যয় বেড়ে গেছে। ফটোকপির দোকানদাররা বলেন, কালি ও কাগজের দাম বাড়ায় তাদেরও দাম বাড়াতে বাধ্য হতে হয়েছে।
বাংলাবাজারের কয়েকজন পুস্তক প্রকাশকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, দেড় মাস আগে প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট কাগজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। এখন তা ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে সময়ে সাদা কাগজের মূল্য ছিল প্রতি টন ৭০ থেকে ৭১ হাজার টাকা। এখন তা লাখ টাকার উপরে কিনতে হচ্ছে। এই দামের প্রভাব বই এবং খাতার ওপরেও পড়ছে। নগরীর নীলক্ষেত মোড়ের শিক্ষা উপকরণের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, ব্যবহারিক খাতা ৪০ টাকারটা এখন ৫০ টাকা, ৬০ টাকারটা ৭০ টাকা। কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। মার্কার পেন প্রতি পিস ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। সাধারণ ক্যালকুলেটর ৮০ টাকারটা ১২০ টাকা, ৯৯১ এক্স ১৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা, ৯৯১ এক্স প্লাস ১৩৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, ৯৯১ এমএস ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। জ্যামিতি বক্স ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। ৩০০ পেজের খাতা ৫০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, ১২০ পেজের খাতা ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, কালার পেপার রিম ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। মিনি ফাইল প্রতিটি ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। জিপার ফাইল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। রেজিস্টার খাতা ৩০০ পেজ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, ৫০০ পেজ ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। প্লাস্টিক ও স্টিলের স্কেল ডজনপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। রাবার ডজনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
শিক্ষা উপকরণের বাড়তি দামের বিষয়ে মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতনভাতা বা টিউশন ফি বাড়ানো হলে সেটি আমরা তদারকি বা মনিটরিং করতে পারি। আর আমাদের অনুমতি ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোনো খরচের বোঝা চাপিয়েও দিতে পারবেন না। সেই দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু যেহেতু শিক্ষা উপকরণগুলো বর্তমান বাজারদর এবং পরিবহন খরচ কিংবা আমদানিকৃত পণ্যের দামের বৃদ্ধির কারণেও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সরকারের উচিত হবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা। যাতে অযৌক্তিক বা অন্যায্যভাবে শিক্ষা উপকরণের পণ্যের মূল্য না বাড়ানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement