২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টিসিবির লোকসান বেড়েছে ৫২৩ ভাগ

২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ১১৫৮.০৯ কোটি টাকা
-

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি) এর লোকসান অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির লোকসান বেড়েছে ৫২৩ ভাগ বা ৬ গুণেরও বেশি। জনসাধারণের মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রি করাই এই প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ। মূলত বাজার দর অনুযায়ী পণ্য কিনে তা স্বল্পমূল্যে বিক্রি করার কারণে টিসিবি অনেক সময় লোকসান দিয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে লোকসানের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। বিশেষ করে গত বছরের লোকসান ছিল টিসিবির ইতিহাসে একটি রেকর্ড। অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য টিসিবির কাছে পত্র পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে টিসিবির লোকসান ছিল ১৮৬ কোটি ২ লাখ টাকা। পরের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে লোকসান বেড়ে হয়েছে ৩০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের লোকসানের পরিমাণ প্রায় চার গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা। তাও ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৩ মে পর্যন্ত এই লোকসানের পরিমাণ দেয়া হয়েছে। দেখা যায় এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান বেড়েছে ৯৭২ কোটি ৭ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিসিবি মূলত জনসাধারণের মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয়কারী সরকারি প্রতিষ্ঠান। টেন্ডারের মাধ্যমে টিসিবি বাজার দরে তেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ আরো কিছু পণ্য ক্রয় করে থাকে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পণ্যগুলোই আবার কম দামে জনসাধারণের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এই জন্য টিসিবিকে লোকসান গুনতে হয়। গত বছর টিসিবির আওতা বাড়িয়ে অনেক মানুষকে স্বল্পমূল্যে পণ্য দেয়া হয়। বিশেষ করে এক কোটি পরিবারকে এর আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কেনা হয়েছে। এর কারণে প্রতিষ্ঠানটি গত বছর অনেক লোকসান দিয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
টিসিবির লোকসানের অর্থ পুনর্ভরণ করে অর্থমন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টিসিবি সব সময় যে লোকসান করে তা নয়, অনেক বছর তারা মুনাফাও করেছে বলে আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু গত বছর তাদের লোকসানের পরিমাণ কেন এক বেড়ে গেল সে বিষয়ে তাদের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হবে। এর আগেও তাদের লোকসানের বিষয়ে আমরা প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। তাদের কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে তাদের ব্যাখ্যা যৌক্তিক মনে হয়েছে। আবার কখনো তাদের ব্যাখ্যার আমরা পুনঃ ব্যাখ্যা চেয়েছি। কারণ সরকারি অর্থের সব সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
এদিকে, পরিসংখ্যানে দেখা যায়, টিসিবি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লোকসান করেছে। কিন্তু তার পরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানটি আবার মুনাফা দেখিয়েছে ৪০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পরের দুই অর্থবছরেও টিসিবি মুনাফা করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মুনাফা ছিল ৫৬ কোটি এবং পরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা হয়েছে ২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর পরের ২১৭-১৮ অর্থবছরে লোকসান ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছে ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement