২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের ডিজি বললেন

যেখানেই হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম

-

সব জায়গায়ই অনিয়ম রয়েছে। এমন কোনো জায়গা দেখিনি যেখানে অনিয়ম নেই। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশে আমরা যেখানেই হাত দিচ্ছি সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি। এমন মন্তব্য করলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, কোনো মিলকে যদি আমরা আইনের আওতায় আনতাম তাহলে অস্থিরতা বর্তমান সময়ের চেয়ে আরো বেশি হতো। একটা-দুটা মিল গোডাউনে শর্টসার্কিট দেখিয়ে শাটডাউন করে দিতো তাহলে আরো খারাপ অবস্থা হতো। সরকার পলিসিগত কারণে অনেক সময় রিঅ্যাক্ট করে না।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাপরিচালক এসব কথা বলেন। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী, সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও আইন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রজবী নাহার রজনী।
এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, হঠাৎ করেই ঈদের আগে সয়াবিন তেলের সঙ্কট তৈরি হলো। বাড়তি দাম পাওয়ার আশায় তেল মজুদ করে রাখা হলো। সয়াবিন তেল নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তেলের বাজার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা খুচরা থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে কারখানাÑ সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। বড় বড় রিফাইনারিতে অভিযান চালিয়েছি। অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে রিপোর্ট দিয়েছি।
সফিকুজ্জামান বলেন, তথ্য অনুযায়ী তেলের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সঙ্কট হয়েছে। কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ আদেশ ধরে রাখছেন। এক কথায় এই বাজারে এক ধরনের মনোপলি বা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এসব জেনেবুঝেও কিছু করার থাকছে না। কারণ এক বা দুটি বড় কোম্পানি কোনো অজুহাতে উৎপাদন বন্ধ রাখলে যে সঙ্কট হয়েছে, তার চেয়ে বড় ধরনের সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে। সরকার চায় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সঠিক তথ্যের অভাব। এই সংস্থার তথ্যের বৈধ উৎস নেই। ভোক্তা বা ব্যক্তিগত উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করারও সুযোগ নেই। এজন্য ভোক্তা অধিদপ্তর সব গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ভোক্তারা প্রতারিত হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে গেছেন যে, এখন অধিকার খর্ব হচ্ছে সেটাই আর বুঝতে পারেন না।
অনুষ্ঠানে সফিকুজ্জামান বলেন, চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থাকেন। তা থেকে ধারণা করা যায়, চিকিৎসকরা কোম্পানির সুপারিশে ওষুধ লিখছেন। আবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিচ্ছেন। এতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণœ হচ্ছে। ইংরেজি মাধ্যম কোনো কোনো স্কুলে ভর্তির সময়ই কয়েক মাসের বেতন আগাম নিয়ে নেয়া হচ্ছে। বই, খাতা, কলম, পোশাক স্কুল থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্রে ছবি তোলা, বাইক চালানো, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লোকেরা পর্যটকদের চারপাশে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করছেন। তিনি বলেন, পর্যটকরা নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারছেন না। আর কোনো সেবা নিলে উচ্চহারে মূল্য দিতে হচ্ছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস থেকেও মানুষ যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। পানির মান ভালো নয়। গ্যাসের চাপ কম থাকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং হচ্ছে। বিমান সময়মতো ছাড়ছে না। এক কথায় যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি। তিনি ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাসের সেবার বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ইঙ্গিত দেন।
মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, উন্নত দেশে উন্নয়ন সাবলীল করতে ভোক্তা অধিকার আইনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। অধিদফতরকে জনবলসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা দরকার। তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় অনিয়ম রয়েছে। নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রচুর অনিয়ম রয়েছে। ভোক্তা অধিদফতর ঠিকমতো কাজ করতে পারলে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জরিমানা বা শাস্তি হবে না। তিনি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা আশা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement