২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার তৃতীয় ঢেউ সামাল দিতে প্রস্তুত ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতাল

-

গত বছরের ১৯ এপ্রিল চিকিৎসা শুরুর পর করোনা রোগীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় রাজধানীর মহাখালিতে স্থাপিত ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল’কে। কিন্তু করোনার বিস্তার কমে যাওয়ায় গত ডিসেম্বর মাসে এসে রোগী ভর্তি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। এ সময় হাসপাতালটির ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়। তবে জানুয়ারির শুরু থেকে দেশে ফের করোনার ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। এ জন্য করোনার তৃতীয় ঢেউ সামাল দিতে আবারো প্রস্তুতি নিয়েছে করোনা চিকিৎসায় দেশের সবচেয়ে বড় এ অস্থায়ী হাসপাতালটি। বর্তমানে সেখানে ৭৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৮ জন। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ২১২টি আইসিইউ, ২০০ শয্যার এইচডিইউ এবং সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঁচ শতাধিক সাধারণ শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া আরো বেশকিছু রিজার্ভ বেড রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সক্ষমতা বাড়াতেও উদ্যোগে নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। মানুষের চলাচল, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। কিন্তু সারাবিশ্বে চলা করোনার তৃতীয় ঢেউ সম্প্রতি বাংলাদেশেও আছড়ে পড়েছে। সাথে চোখ রাঙাচ্ছে করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন। ইতোমধ্যে কিছু মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্তও হয়েছেন। এখন প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা বেড়ে যাওয়ায় হাসাপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালও রোগীদের চিকিৎসায় এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
হাসাপাতালের মেডিক্যাল অফিসার (প্রশাসন) ডা: আনোয়ারুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে ফের করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে এর মধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত কেউ নেই। তিনি বলেন, এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা এবং চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন। যারা সবাই রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এ ছাড়া আরো সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। সারা দেশের মতো আমাদের এখানেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। এ জন্য বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আশা করছি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যাও আরো বাড়বে।
গতকাল সরেজমিন হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের আইসিইউতে ২৭ জন, এইচডিইউতে ২০ জন এবং সাধারণ শয্যায় আরো ২৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বাইরে বেশকিছু অ্যাম্বুলেন্স সারিসারি দাঁড়িয়ে রয়েছে। একজন চালক জানালেন, কোনো রোগী হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করলে তাকে বিনামূল্যে অন্য হাসপাতালে পরিবহন করা হয় এ অ্যাম্বুলেন্সে।
জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে। এটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। হাসপাতালের জমি, ভবন, বিদ্যুৎ এবং পানির ব্যবস্থা করছে ডিএনসিসি। স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, লোকবল, ওষুধসহ অন্যান্য কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। শুরুতে ২৫০ শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে ৯ শতাধিক বেড রয়েছে।
মহাখালীর যে ভবনটিতে এ হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়েছে সেটি তৈরি করা হয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজার তৈরি করার জন্য। ২০২০ সালে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করলে ছয়তলা ভবনটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করে। এরপর বাংলাদেশে কোভিড সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ওই বছরের ১৩ জুলাই আইসোলেশন সেন্টারটি স্থগিত করে বিদেশগামীদের জন্য আরটিপিসিআর টেস্ট করার সেন্টার তৈরি করা হয়। পরে গত বছরের ১৯ এপ্রিল এটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement