নৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ছাড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করার আর কোনো পথ নেই। সংখ্যা যাই হোক না কেন সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু-মুসলিম থাকবে না, থাকবে সত্য কথা ও নৈতিকতা। সম্মিলিতভাবে রাজনীতিকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে একটি নৈতিক সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতকাল বেলা ১১টায় কুমিল্লায় কুরআন অবমাননা ও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নৈতিক সমাজ’-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
নৈতিক সমাজের সভাপতি সাবেক মেজর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূত আমসা আমিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক কাজ করেছি তবু আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারকে রক্ষা করতে পারিনি। এখানে বেশি মানুষ উপস্থিত নেই। কিন্তু যখন রাসূল সা: ধর্ম প্রচার শুরু করেছেন তখন তিনি লোক গুনে করেননি। সাহস নিয়ে মক্কা বিজয় করেছেন কিন্তু সেখানে প্রবেশ করেন নাই; সেখানেই ছিল রাসূল সা:-এর বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আজকে আমাদের সমাজে নৈতিকতার প্রচলন করা অনেক বেশি প্রয়োজন। আমাদের এমন একটা সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি নৈতিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সাম্প্রদায়িক হামলায় প্রশাসনের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে সম্পূর্ণ প্রশাসনের ও সরকারের ব্যর্থতা। এ ঘটনাগুলো ঘটেছে কেন? কারণ আমরা নৈতিক পন্থা অনুসরণ করিনি। পুলিশ প্রশাসন তা করতে পারেনি।
সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে ছাগল কাহিনী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জাফরুল্লাহ বলেন, আপনাকে পীরগঞ্জের সাধারণ মানুষ ‘মা’ হিসেবে মানে। আপনি যদি তাদের জন্য মাঠে না নামেন তাহলে হামলা বন্ধ হবে না। তাই আমার অনুরোধ, আপনি বায়তুল মোকাররমে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ও অন্যন্য সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করুন। সবার সাথে আলাপ করে জানিয়ে দেন যে, হিন্দু-মুসলিম নয়, আমরা পরস্পর ভাই।
এ সময় ভারতের ষড়যন্ত্র নিয়ে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি বলেন, ভারত থেকে সাবধান! ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে যা দিয়েছে তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু তারা যা দিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি আমরা তাদের দিয়েছি। আজকে তারা যে ধরনের প্রোপাগান্ডা করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তা আমাদের জন্য লজ্জার।
মানববন্ধনে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলা দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। আমাদের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে। আমাদের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এ চেতনাকে ধারণ করেই আমরা সংবিধান প্রণয়ন করেছি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক করে গণতান্ত্রিক দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। এবং সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সম্ভব এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন।
আমসা আমিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, সাবেক মেজর মুজিবুল হক, বাংলা বিপ্লবের অ্যাম্বাসেডর সাকিব আলীসহ নৈতিক সমাজ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।