২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা

কবি ফররুখের বাড়ির ওপরে রেললাইন নির্মাণ না করার দাবি

-

কবি ফররুখ আহমদের স্মৃতিবিজড়িত মাগুরার শ্রীপুরের মাঝাইলে পৈতৃক বাড়ি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। কবির ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল থেকে এ দাবি জানানো হয়। সভায় বলা হয়, সম্প্রতি ফরিদপুর থেকে মধুখালী-কামারখালী হয়ে মধুমতি নদীর ওপর দিয়ে মাগুরা পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ রেললাইন কবির স্মৃতিবিজড়িত মাগুরার বাড়ির ওপর দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এজন্য বাড়ির ওপর লাল নিশান টানানো হয়েছে। মাঝে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেললাইন কবির বাড়ির ওপর দিয়ে নয়, পাশ দিয়ে নেয়া হবে বলে আশস্ত করা হয়। এছাড়া বাড়ির ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে বলেও জানান হয়। তবে গত কয়েক দিন আগে আবারো ওই বাড়ির ওপরে লাল নিশান টানানো হয়েছে বলে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনে জাতিসঙ্ঘের ইউনেস্কোতে চিঠি দিতে হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীকেও স্মারকলিপি দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ফররুখ আহমদের লেখায় ইসলামের সাম্য ও মানবতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি এগুলো ধার্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, কবির দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে কবি, সাংবাদিক ও গবেষক আবদুল হাই শিকদার বলেন, কবি ফররুখ আহমদের বাড়ির পাশ দিয়ে রেললাইন গেলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার স্মৃতি যেন নষ্ট করা না হয়। কারণ তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ ছয়জন মৌলিক কবির অন্যতম। কবি ফররুখ আহমদকে প্রকৃতির উপহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকৃতির নিজের প্রয়োজনেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তার লেখাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফখরুখ আহমদ ছিলেন ইসলামিক সোস্যালিস্ট। তিনি ছিলেন মূলধারার কবি। তাকে শুধুমাত্র ইসলামী রেনেসাঁর কবি বলা মানে মহাসড়ককে গলিতে নামিয়ে আনা। তিনি কবির নামে ঢাকার একটি সড়কের নামকরণের দাবি জানান।
সাংবাদিক, কবি ও ছড়াকার আবু সালেহ বলেন, কবি ফররুখ আহমদকে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের দর্শনে বিশ্বাসী বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু এটা সঠিক নয়। তিনি প্রথমে প্রগতিশীল ছিলেন। তার বাবাকে কমিউনিস্টরা মেরে ফেললে তার চিন্তার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। পরে তিনি ইসলামিক ভাবধারায় লেখালেখি করেন। তিনি আরো বলেন, কবি ফররুখ আহমদ ১৯৭৪ সালে মারা গেলে তার গ্রামের বাড়িতে কবর দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে কবর দিতে দেয়া হয়নি। পরে ঢাকায় কবর দেয়া হয়। এখন আমরা তার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি নিয়ে শঙ্কিত। তার বাড়িতে লাল নিশান টানিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখান দিয়ে রেললাইন যাচ্ছে। আবু সালেহ বলেন, রেললাইন দেয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু কবির স্মৃতিচিহ্ন উচ্ছেদ করবেন না। এটা শুধু তার নয় পুরো জাতির অমূল্য সম্পদ।
সভায় কবির ছেলে এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বাচ্চু বলেন, আমার আব্বার স্মৃতিচিহ্নগুলো মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। আব্বা ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পাকিস্তান আমলেও তার কাজকর্ম মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। তিনি বলেন, রেললাইন হলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তার বাড়ির ওপর দিয়ে যেন না যায়। এ সময় তিনি কবির নামে ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ এবং তার রচনাবলির প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড পুনঃপ্রকাশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড প্রকাশের জন্য বাংলা একাডেমির প্রতি আহ্বান জানান।
কবি ফররুখ আহমদ স্মৃতি পাঠাগার আয়োজিত সভায় আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ রিপন আহমেদের সভাপতিত্বে ও কবি আবিদ আজমের সঞ্চালনায় আরো বক্তৃতা করেন লেখক ও গবেষক শাহ আব্দুল হালিম, কবি জাকির আবু জাফর, কবি হাসান আলিম, কবি ও সাংবাদিক আহমদ মতিউর রহমান, ইতিহাসবিদ ও গবেষক মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, লেখক ড. ফজলুল হক তুহিন, অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খোন্দকার আব্দুল মান্নান বাবু, লেখক ও আবৃত্তি শিল্পী শিমুল পারভীন, সঙ্গীত শিল্পী তাওহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement