২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুপার ডাইকের আদলে সুরক্ষিত হচ্ছে সন্দ্বীপ

উপকূল সুরক্ষায় পাউবোর ৩৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

-

সুপার ডাইকের আদলে সুরক্ষিত হচ্ছে পুরো সন্দ্বীপ, সেই সাথে তিন হাজার ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা বাঁশখালী খাগড়াছড়ি উপকূল সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গৃহীত নতুন প্রকল্প প্রোফাইল (ডিপিপি) নিয়ে এখন পরিকল্পনা কমিশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদর দফতরে যাচাই বাছাই চলছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত দক্ষিণ চট্টগ্রামে ১১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন প্রকল্পসহ দুই হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান টেকসই ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ ও ডিভিশন-২ এর অধীনে আরো ৩৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূল সুরক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধ, ড্রেজিং অবকাঠামো নির্মাণ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের জন্য নতুনভাবে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে যা এখন পরিকল্পনা কমিশনে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদর দফতরে রয়েছে এবং যাচাই বাছাই চলছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র। জানা গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গৃহীত নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুপার ডাইকের আদলে সন্দ্বীপসহ সুরক্ষিত হবে চট্টগ্রামের অরক্ষিত উপকূল।
জানা গেছে, আনোয়ারার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক এলাকার সংসদ সদস্য মো: নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর প্রচেষ্টা ও চাহিদার প্রেক্ষিতে সাগর নদী ও খালের ভাঙন প্রতিরোধে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রণয়নকৃত প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৫টি প্যাকেজের চলমান কাজের সর্বশেষ সময় দেয়া হয়েছিল গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু করোনায় থমকে যায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দেশ সুরক্ষায় গৃহীত হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। এ কারণে জুনের মধ্যে চলমান কাজ কোনোভাবেই সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বিবেচনায় এনে কাজের সময় সীমা আরো বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অপর দিকে ১১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্পটি চলতি বছর প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে অনুমোদন পায়। গৃহীত ওই প্রকল্পে প্রায় ৪২টি প্যাকেজের মধ্যে চলতি মাসে কয়েকটি প্যাকেজের দরপত্র সম্পাদন হয়েছে।
উল্লিখিত কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ জেলার সাগর ও নদীর ভাঙন ঠেকাতে নতুন নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে পটিয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন ও সেচব্যবস্থা উন্নীতকরণসহ আনোয়ারার পার্কি সমুদ্রসৈকতসহ ২১০০ মিটার টেকসই প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং জেলার সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড ও খাগড়াছড়ির ভাঙন প্রতিরোধ, নদীখনন, অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চলমান কাজের মধ্যে আনোয়ারা উপকূল থেকে নগরীর পতেঙ্গা পর্যন্ত সুরক্ষায় ৩২০ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকার ৩৮ প্যাকেজের কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প ব্যয় বর্ধিত করে ৫৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা পার্কি সমুদ্রসৈকত ও রায়পুর ইউনিয়ন সুরক্ষার কাজ চলছে।
একইভাবে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা সুরক্ষায় এবং শঙ্খ নদী খননসহ ৩৩৩ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার টাকায় ১৫ প্যাকেজের কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় নদী ও খালের ভাঙন প্রতিরোধে ১৫৪ কোটি টাকায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। এর আগে এই দুই উপজেলায় ১৫০ কোটি ৫৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকায় ১৬ প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়।
বাঁশখালীতে চলমান বঙ্গোপসাগর ও নদীর উপকূলীয় বাঁশখালী উপজেলা সুরক্ষায় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় ৩৬ প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে।
ওই কাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নদী ও সাগর তীরবর্তী অভ্যন্তরীণ খাল ও নদীভাঙন ঠেকাতে ১৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে (আনোয়ারার রায়পুর ও জুইদণ্ডির অংশসহ) নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
একই ভাবে ১১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপার ডাইকের আদলে সমগ্র সন্দ্বীপকে সুরক্ষিত করার প্রকল্প নেয়া হয়। একই ডিভিশনের অধীনে ৬৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে খাগড়াছড়ি সুরক্ষায় প্রণয়ন করা হয়েছে প্রায় ৩৫টি প্যাকেজের মধ্যে চেঙ্গী ও মাইনী নদী খননকাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান খান জানান, বাঁশখালী আনোয়ারার অংশবিশেষ এবং খাগড়াছড়ি ও সন্দ্বীপ সুরক্ষায় তিন হাজার ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে ১১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সন্দ্বীপ এবং ৬৪০৯ কোটি টাকায় খাগড়াছড়ি সুরক্ষায় গৃহীত নতুন ডিপিপি পানি উন্নয়ন বোর্ড হয়ে বর্তমানে প্ল্যানিং কমিশনে রয়েছে। অপর দিকে ১৭৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁশখালী ও আনোয়ারা সুরক্ষায় গৃহীত ডিপিপি এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদর দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুপার ডাইকের আদলে সন্দ্বীপসহ সুরক্ষিত হবে চট্টগ্রামের অরক্ষিত উপকূল।

 


আরো সংবাদ



premium cement