০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


চিকিৎসাকেন্দ্র ৫ গুণ বাড়লেও বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপনা নেই

-

দুই দশকে রাজধানীতে চিকিৎসাকেন্দ্র অর্থ্যাৎ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পাঁচ গুণ বাড়লেও বর্জ্য ডিস্পোজালে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নেই। ফলে প্রতিদিন উৎপাদিত হাসপাতালের প্রায় ২০৬ টন অনিয়ন্ত্রিত মেডিক্যাল বর্জ্যরে নানা উপাদান পানি ও মাটিতে মিশে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল বর্জ্য রাজধানীর চার পাশের নদীসহ হাসপাতালগুলোর সামনের খোলা ডাস্টবিন কিংবা নর্দমায় ফেলা হচ্ছে। এগুলো মাটির সাথে মিশে ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের সাথে পানির পাইপের সংমিশ্রণেও সংক্রামক রোগ বিস্তারের আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ এসব বর্জ্যরে বেশির ভাগই সংক্রামক। ফলে এগুলোর মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। টাইফয়েড, কলেরা, যক্ষ্মা, আমাশয়, ডায়রিয়া, এইচআইভি, বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, জণ্ডিস, নিউমোনিয়া ও এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার জনিত জটিলতায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়াও হাসপাতাল থেকে নির্গত পানির মাধ্যমে সালমোনেলা এবং শিগেলা প্রজাতির জীবাণুু ছড়িয়ে চর্মরোগসহ মারাত্মক ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকায় গত দুই দশকে চিকিৎসাকেন্দ্র প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। এর মধ্যে হাসপাতাল বেড়েছে চারগুণ, ক্লিনিক সাড়ে তিনগুণ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রায় ছয়গুণ।
বর্তমানে মোট ১৬ হাজার ৯৭৯টি চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল চার হাজার ৪৫২টি, ক্লিনিক দুই হাজার ২৩৬টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এক হাজার ২৯১। যা গত বছরে ছিল বেসরকারি হাসপাতাল এক হাজার ১২৫টি, ক্লিনিক ৬৩৩টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার এক হাজার ৭৭৮টিসহ মোট তিন হাজার ৫৩৬টি।
অপরদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরের সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৪৫টি এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৯৪টি। এগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০৬ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়।
প্রিজম নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বলছে তারা ঢাকায় এক হাজার ২০০ হাসপাতালের সাথে চুক্তিবদ্ধ। করোনার আগে এ সংস্থা প্রতিদিন ১৪ টন বর্জ্য সংগ্রহ করত। গড়ে প্রতিটি হাসপাতাল থেকে ১১ দশমিক ৭ কেজি। বর্তমানে প্রতিদিন সাত-আট টন বর্জ্য সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে দ্য ল্যানসেট তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঢাকায় দৈনিক কমপক্ষে ২০৬ টন মেডিক্যাল বর্জ্য উৎপাদিত হয়। যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ নিয়ে গতকাল রাজধানীতে মানববন্ধন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাসফসহ ১৩টি সংগঠন। জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘নামসর্বস্ব মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়, মেডিক্যাল বর্জ্যরে কার্যকর ব্যবস্থাপনা চাই’ দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে বিপর্যয় রোধে একটি কার্যকর মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দাবি জানান পরিবেশবাদীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজধানীর মেডিক্যাল বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মেডিক্যাল বর্জ্য, ব্যবহৃত সূঁচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিউমার, ওষুধের শিশি, রক্তের ব্যাগ, স্যালাইনের ব্যাগ, মেয়াদোর্ত্তীণ ওষুধ, ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রভৃতি দ্রব্যাদি রাজধানীর চারপাশের নদীসহ হাসপাতালগুলোর সামনের খোলা ডাস্টবিন কিংবা নর্দমায় ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের সাথে পানির পাইপের সংমিশ্রণেও রোগের সংক্রমণ আফঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল ডিজাইনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে মেডিক্যাল বর্জ্যরে নিরাপদ নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে হাসপাতাল ডিজাইনের ক্ষেত্রে যা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তার মতে পরিবেশ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, গাফিলতি ও তদারকির অভাব এর অন্যতম কারণ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবে উৎসে বর্জ্য পৃথকীকরণ হচ্ছে না। যদিও মেডিক্যাল বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী পৃথকীকরণ বাধ্যতামূলক।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাসফ-এর সাধারণ সম্পাদক মো: তৈয়ব আলী, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম সিদ্দিক আলী, সহসভাপতি অলিভা পারভীন, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি এর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, বিডিক্লিকের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সদস্য সচিব মেনন চৌধুরী, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র মো: ইমরান হোসাইন, আলোকিত বন্ধু সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো: রনি, হিলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জেবুন নেসা, সুবন্ধনের সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান, মৃত্তিকার খাদিজা খাতুন, গ্রিনফোর্সর আহসান হাবিব, ক্যামেলিয়া চৌধুরী, শাকিল রেহমান, কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement