২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন রিটকারীরা

কৃষি সম্প্রসারণে ১৬৫০ কর্মকর্তা নিয়োগ
-

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) উপ-সহাকারী কর্মকর্তা পদে নিয়োগে এক হাজার ৬৫০ জন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন গত ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু নিয়োগে সুপারিশ প্রাপ্ত থেকে বঞ্চিতদের মধ্য থেকে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই নিয়োগে স্থিতিবস্থা জারি করে। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তা খারিজ অর্থাৎ নিয়োগ আদেশ বৈধ বলে ঘোষণা করেন। এদিনই ডিএই দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালকদের বরাবর চিঠি ইস্যু করে। যাতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী হতে স্ব স্ব অঞ্চলের অধীনে নির্বাচিত প্রার্থীদের আগামীকাল রোববার সকাল ৯টায় যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র জারি করাসহ ওই দিনই যোগদানের আদেশ দেন। রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুন্ডু এ বিষয়ে বলেন, আমার জানা মতে, এখনো রায়ের সার্টিফায়েড কপি বের হয়নি। ডিএই কর্তৃপক্ষের এরূপ তড়িঘড়ি করে নিয়োগ এবং যোগদানের আদেশ তাদের অসৎ উদ্দেশ্যই প্রকাশ করে। কারণ রিটকারীরা হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আবেদন দায়ের করতে ইচ্ছুক।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে ১ হাজার ৬৫০টি স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ২৮ হাজার ৫৩৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ৫১১৪ জন প্রার্থী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাদের ভাইভা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভাইভা সম্পন্ন হওয়ার দুই দিনের মাথায় ১৭ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী নির্বাচন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
রিটকারীরা বলছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৬নং শর্তাবলির কলামে জেলা কোটাসহ সরকার কর্তৃক পরিচালিত অন্যান্য সব কোটা বিধি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু টাঙ্গাইল গোপালগঞ্জ বি বাড়িয়াসহ কয়েকটি জেলায় তা অনুসরণ করা হয়নি। সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীদের একটি অংশ হাইকোট বিভাগে জেলা কোটাসহ অন্যান্য কোটা অনুসরণ না করার কারণে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে রিট পিটিশন নং- ১৭৩৫/২০২০ সহ আরো কয়েকটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। বিগত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ ওই রিট পিটিশন (নং-১৭৩৫/২০২০) রুল নিশি জারি করেন এবং ওই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থিতিবস্থা প্রদান করেন। এই স্থিতিবস্থা আদেশের বিরুদ্ধে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজে আবেদন করলে নো অর্ডার হয়। তৎপরবর্তীকালে ডিএই সুপ্রিম কোর্টের সিভিল পিটিশন কর লিভ টু আপিল (নং-৭২৬/২০২০) দায়ের করলে আপিল বিভাগ বিগত গত ১২ মার্চ শুনানি অন্তে তা ডিসমিস করেন।
তৎপরবর্তীকালে ওই রিট পিটিশনসহ (নং-১৭৩৫/২০২০) আরো কিছু রিট পিটিশনের রুল শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ গত বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে দেন। অর্থাৎ নিয়োগাদেশ বৈধ বলে ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রিট পিটিশনের রায়ের আদেশের কপি পাওয়ার পূর্বেই রায়ের দিনই (বৃহস্পতিবার) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) একটি নোটিশ সকল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের বরাবর জারি করেন। এতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ১ হাজার ৬৫০ জন প্রার্থী হতে স্ব-স্ব অঞ্চলের অধীনে নির্বাচিত প্রার্থীদের রোববার সকাল ৯টায় যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র জারি করাসহ ওই দিনই যোগদানের আদেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সুব্রত কুমার কুণ্ডু বলেন, গত বৃহস্পতিবার বেলা একটা-দেড়টার দিকে হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে রিট পিটিশনটি খারিজ করেন। এদিনই আমরা রায়ের সার্টিফাইড কপি উত্তোলনের জন্য আবেদন করি। পরে এদিনই রাত ৮টার দিকে জানতে পারলাম ডিএই ১ হাজার ৬৫০টি পদে নিয়োগপত্র জারি ও যোগদানের জন্য রোববার সকাল ৯টা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই সংক্রান্তে স্মারক নং-৩১৫৪ এর একটি কপিও আমরা পেয়েছি। তবে ওই দিনই রাত সাড়ে ৮টার সময় ডিএই ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ/বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়নি। ডিএই-এর ওই নোটিশটি যদি সত্যি জারি করা হয়ে থাকে তবে তা অনভিপ্রেত এবং তা ডিএই-এর অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করে। কারণ রিটকারীরা হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করতে ইচ্ছুক।
তিনি বলেন, রায়ের পরে টানা দু’দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন। ফলে রিটকারীরা এই দু’দিন কিছুই করতে পারবেন না। ডিএই কর্তৃপক্ষের এরূপ তড়িঘড়ি করে নিয়োগদানের বিজ্ঞপ্তি জারি ও ওইদিনই যোগদানের আদেশ তাদের অসৎ উদ্দেশ্যই প্রকাশ করে। কারণ ১ হাজার ৬৫০ জনের নিয়োগ ও যোগদান রোববার সকাল ৯টায় হলে রিটকারীরা আপিল বিভাগে গিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারবেন না। কারণ তখন ডিএই বলবে হাইকোর্টের রায় Acted upon এবং ফলে CMP Infractuous. এখানে আরো উল্লেখ্য যে, একই ধরনের অন্য আরো একটি রিট পিটিশন (নং-১৯২৮/২০২০) যা হাইকোর্ট বিভাগের অপর একটি বেঞ্চে শুনানির তালিকায় অপেক্ষমাণ রয়েছে। এমতাবস্থায়, ডিএইর এরূপ তড়িঘড়ি করে নিয়োগপত্র জারি ও যোগদানের আদেশ একজন জবধংড়হধনষব ব্যক্তির নিকট চরম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, যে রায় হয়েছে, সার্টিফাইড কপি বের হতে সময় লাগবে। তবে এ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে বাধা নেই বলে জানান তিনি। এটির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আপিলের সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে এই অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেটা যারা মামলা করেছে তারা বুঝবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ নয়া দিগন্তকে বলেন, কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই নিয়োগে কোনো বাধা নাই। কোর্ট যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেভাবেই করছি।


আরো সংবাদ



premium cement