২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ছাত্রদলের কমিটির দুই বছর পূর্ণ আজ

শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ ও নতুন কমিটি চান পদপ্রত্যাশীরা

-

আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। খসড়া গঠনতন্ত্র মতে, ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ দুই বছর। তবে এখনো আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটি। জানা গেছে, নতুন কমিটি গঠনের পরপরই তৃণমূল পুনর্গঠন ও কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে তৎপরতা চালিয়েছেন নেতারা। তবে দীর্ঘ দিনেও আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। দলীয় পরিচয় না থাকায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও কোণঠাসা তারা। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব তারা একেবারে নতুন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটির জোর দাবি জানান।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জেলার পদ মর্যাদাসম্পন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ ঢাকার আটটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটি এ মাসেই ঘোষণা হতে পারে। সেই সাথে এখনো তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে আশাবাদী। তবে যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের মতোই ছাত্রদলের বর্তমান ‘নির্বাচিত’ আংশিক কমিটিরও মেয়াদ বাড়ানো হবে নাকি নির্ধারিত সময় শেষে তা ভেঙে দেয়া হবে- এ বিষয়ে এখনো দৃশ্যমান কোনো আলোচনা নেই। আর ভেঙে দেয়া হলে নতুন কমিটি ‘ইলেকশন না সিলেকশনে’ হবে- সেটিও অস্পষ্ট। এ বিষয়ে বিএনপি কিংবা ছাত্রদলের কেউ স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না।
অবশ্য ছাত্রদল নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের দুই ধরনের ভাবনা। এক. কলেবর বাড়িয়ে বর্তমান কমিটি বহাল রাখা। দুই. আগামী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগেই নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা। তবে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। বর্তমান কমিটি গঠনের সময় বিএনপিকে খুবই বেগ পোহাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাতের বেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করা হয়। সম্প্রতি গঠিত ঢাকা মহানগর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর ধারণা মিলছে যে, আহ্বায়ক কমিটিও হতে পারে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। তবে নতুন কমিটির সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রত্যাশী শতাধিক নেতাকর্মী দিকভ্রান্তের মতো ঘুরছেন। কোনো দলীয় পরিচয় না থাকায় তারা এখন নিষ্ক্রিয় হওয়ার পথে। পদপ্রত্যাশীদের অন্যতম হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ আল ফয়সাল, মুতাসিম বিল্লাহ, খায়রুল আলম সুজন, মো: ঝলক মিয়া, এম এম মুছা, রোকনুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, ইবরাহিম খলিল ফিরোজ, আনোয়ার পারভেজ, মনজুরুল আলম রিয়াদ, শফিকুল ইসলাম শফিক, ইমরান হোসেন, আবদুস সাত্তার রনি, সালেহ আদনান, মুস্তাফিজুর রহমান ফরহাদ, দিপু পাটোয়ারী ও মো: রেজোয়ান আহমেদ প্রমুখ।
পদপ্রত্যাশী নেতা মো: মুতাসিম বিল্লাহ ও খায়রুল আলম সুজন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকাবস্থায় ১/১১-এর সময় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের মুক্তির জন্য ক্যাম্পাসে লাগাতার কর্মসূচি করেছি। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছি। এখনো প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এখনো দলীয় কোনো পরিচয় পাইনি। আশা করি ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাদের বিষয়টি দ্রুত দেখবেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রদলের ষষ্ঠ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কাউন্সিলের তিন মাস পর ডিসেম্বরে সংগঠনটির ৬০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর আরো ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দেয় সংগঠনটি। কিন্তু পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে সেটি ২০১ বা ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট হতে পারে। আগের মতো বিশাল আকৃতির কমিটি নয়।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন নিজেদের অর্জন তুলে ধরে বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলার মাধ্যমে সংগঠনের অবস্থান দৃঢ় করেছি। তৃণমূলে সংগঠনকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে গত বছর জানুয়ারিতে ১০টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠনের মাধ্যমে সারা দেশের থানা পদমর্যাদার এক হাজার ৭০০টির মতো ইউনিটের (থানা-পৌর-কলেজ) মধ্যে এরই মধ্যে এক হাজার ৫০০টি শাখায় আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। দীর্ঘ দিন কমিটি না হওয়ায় খুব সমস্যা তৈরি হয়েছিল। বেশির ভাগ টিম কাজ শেষ করেছে। আমরা তৃণমূলে রেকর্ডসংখ্যক কমিটি দিয়েছি। তৃণমূল পুনর্গঠন প্রায় সম্পন্ন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ এবং ঢাকার বড় আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে কাজ করছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুলো দিতে পারব। তিনি বলেন, কমিটি গঠন-পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিকেই আমরা স্বাগত জানাই।
জানা যায়, বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনে কয়েকটি সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সে কারণে কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, কয়েকটি টিমের প্রধানদেরও পরিবর্তন করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের অভিযোগ, বেশির ভাগ জেলার প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি কমিটি গঠনে চরম অনীহা দেখিয়েছেন। মেয়াদের শেষ মুহূর্তে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে কাজ করছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটির আকার হবে ২০১ কিংবা ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট।
ছাত্রদলের সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, দীর্ঘ ২০ বছরের জঞ্জাল সরাতে সক্ষম হয়েছি আমরা। তৃণমূল পুনর্গঠন প্রায় সম্পন্ন হওয়ায় আমরা এখন কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা এবং ঢাকার বড় আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে কাজ করছি। সর্বোপরি ছাত্রদলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটিই আমাদের জন্য শিরোধার্য।


আরো সংবাদ



premium cement