লঞ্চের হুইসেলের অপেক্ষায় রিপন
- শামিম হাওলাদার
- ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
লঞ্চের হুইসেলের অপেক্ষায় আছেন রিপন। গত ১৪ বছর ধরে কত আপন এই হুইসেল। এই হুইসেলের সাথেই জড়িয়ে আছে জীবন-জীবিকা। লকডাউনের কারণে লঞ্চের হুইসেলও বন্ধ। আর বন্ধ জীবিকাও। করোনায় লকডাউনের কারণে খেয়ে-না-খেয়ে কাটছে রিপন ও তার পরিবারের জীবন।
রিপন পেশায় একজন কুলি। বয়স ২৭। পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে রিপন সেই শিশুকালেই এতিম। বাবা-মা দু’জনকে হারানোর পর ধুলিয়া নদীতে ভেসে গেছে ঘরবাড়িও। সেই ছোট বয়স থেকে শুরু হয়েছে জীবন সংগ্রাম। সাত বছর বয়স থেকে পরের বাড়িতে কাজ করেই তার পেট চলছে। তিনবেলা খেয়ে ১০ টাকা পেত কাজের মজুরি। এভাবেই তার গ্রামে কাটে ছয়-সাত বছর। ১৩ বছর বয়সে প্রতিবেশী একজনের হাত ধরে ঢাকায় আসেন রিপন। শুরু হয় ঢাকার সদরঘাটে কুলিগিরি। সেই থেকে এই পেশার সাথেই আছেন রিপন। এর মধ্যে ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। দু’টি সন্তান রয়েছে। ছেলে তরিকুল। বয়স আট। মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস। পাঁচ বছর। বর্তমানে কেরানীগঞ্জ পারগেন্ডারিয়া আবুল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
রিপন জানান, গত ১৪ বছর ধরে টার্মিনালে নিয়মিত কুলির কাজ করছেন তিনি; কিন্তু এতটা দুর্দিন কখনো যায়নি। কুলিগিরি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। করোনার কারণে কাজ কমে যায়। আর এখন তো লঞ্চ চলাচলই বন্ধ। তাই উপার্জনও বন্ধ। রিপন বলেন, ঘাট যত সচল থাকে তাদের উপার্জনও তত বেশি হয়। ঘাট নীরব হয়ে পড়লে তাদের উপার্জনও কমে যায়।
রিপন বলেন, লকডাউনের কারণে এখন প্রায়ই লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হয়। এই সময়ে দু’মুঠো ভাত খেয়ে থাকারও কোনো উপায় থাকে না। কারো কাছ থেকে ধার নেবেন তারও সুযোগ নেই। একজন কুলিকে কে ধার দেবে, বললেন রিপন। রিপন বলেন, সকালে ছেলেমেয়েরা পিঠা খেতে চেয়েছে; কিন্তু কিনে দিতে পারেননি।
তিনি আরো জানান, তিন দিন আগে হঠাৎ লঞ্চের হুইসেল বেজে ওঠে। হুইসেলের শব্দ শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে সদরঘাটে আসেন। পরে জানতে পারেন পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত লঞ্চ চলবে। আবারো স্বপ্ন দেখেন রিপন। অন্তত দু’দিন তো পেট ভরে খেতে পারবেন! ওই দিন সদরঘাটে আসার পর ৭০ টাকা আয় করেন।
রিপন তার ফটো তুলতে প্রথমে রাজি হননি। কারণ ছবি পত্রিকায় এলে সদরঘাট থেকে তাকে তাড়িয়ে দিতে পারে। পরে ঘাটের এক পুলিশ সদস্য বললে ছবি তুলতে রাজি হন তিনি। রিপন জানান, সদরঘাটে নানাজনের লাথি-ঘুষি খেতে হয়। যাত্রীর তো হুমকি-ধমকি নিয়মিত শুনতে হয়। আবার যাত্রীর সাথে তর্ক করলে কিংবা দুই-এক শ’ টাকা চাইলে অফিসে বলে দিলে সরদার মারধর করে।
রিপন বলেন, কেউ কোনো সাহায্য দেয় না। সরকারি-বেসরকারি কোনো সাহায্যই পাননি এই করোনাকালে। রিপনের বক্তব্য, হয়তো তাদের কাছ থেকে তা পৌঁছায় না। রিপন বলেন, ওগুলোর দরকারও নেই। শুধু অপেক্ষায় আছেন কবে সচল হবে সদরঘাট। সবগুলো লঞ্চে একযোগে হুইসেল বেজে উঠবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা