২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে দুষলেন আশরাফ গনি

কান্দাহার-হেরাত নিয়ে তীব্র লড়াই তালেবানদের

-

নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতির জন্য ওয়াশিংটনকেই দায়ী করলেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। তিনি বলেন, ‘আফগান থেকে ন্যাটো ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলেই আজকের এই পরিস্থিতি।
তবে তালেবানের বিপজ্জনক উত্থান ঠেকাতে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আশরাফ গনি। তিনি বলেছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে থাকার ও পূর্ণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে’। তবে কৌশলগত কারণে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি। তালেবানের বিরুদ্ধে আশরাফ গনির নতুন কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটির উচ্চ এবং নিম্নকক্ষের আইনপ্রণেতারা। এ ছাড়া সব সময় আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর পাশে আছেন বলেও বিবৃতিতে জানান তারা। আলজাজিরা, রয়টার্স ও বিবিসি
দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার পার্লামেন্টের সামনে সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নের জবাব দেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। সঙ্কটের জন্য ওয়াশিংটনকেই দায়ী করেন।
তিনি বলেন, ‘আফগান থেকে ন্যাটো ও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলেই আজকের এই পরিস্থিতি। তিনি বলেন, তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার ও দেশের সার্বিক নিরাপত্তাকে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গত দু’দশকে তালেবান অতীতের চেয়ে অনেক বেশি নিষ্ঠুর ও নিপীড়ক হয়ে থউঠেছে। আফগানিস্তানে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ব্যাপারে তাদের কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ নেই। আমরা চাই শান্তি, আর তারা চায় আফগানিস্তানের সরকার ও সাধারণ জনগণ যেন তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।’ ‘সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকা তারা দখল করছে এবং সাধারণ মানুষদের অবরুদ্ধ করছে। দখলকৃত সেসব এলাকায় সরকারি বাহিনীর সদস্যদের সাথে তালেবানের যুদ্ধ চলছে এবং এখন পর্যন্ত যতখানি বোঝা যাচ্ছে, যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্বল হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের সাথে কোনো অর্থপূর্ণ ও কার্যকর আলোচনায় তারা আসবে না।’ ‘আমরা তালেবানগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছি এবং দেশের জনগণ আমাদের সাথে আছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বদলে যাবে, ইনশা আল্লাহ।’
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার জেরে ওই বছর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে মার্কিন ও পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। অভিযানে পতন হয় তালেবান সরকারের। অভিযানের প্রায় ২০ বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরো এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।
বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান আবার নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু করে তালেবান। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের তথ্যানুযায়ী, তাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী, আফগানিস্তানের ৪১৯টি জেলার অর্ধেকেরও বেশির দখল নিয়েছে তালেবান।
অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ও পরিকল্পিতভাবে তালেবানের সাম্প্রতিক এই অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়ে দিশেহারা হয়ে পিছু হটছিলেন আফগান সামরিক বাহিনীর আফগানিস্তান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স (এএনডিএসএফ) সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্যদের সহযোগিতা শুরুর পর থেকে আফগান সামরিক বাহিনীও তালেবানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা শুরু করেছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, আফগানিস্তানের তিন গুরুত্বপূর্ণ শহর কান্দাহার, লস্কর গাহ ও হেরাতে গত প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে তীব্র লড়াই চলছে এএনডিএসএফ সদস্য ও তালেবানের মধ্যে।
তালেবান ঘাঁটিতে আফগান বাহিনীর বিমান হামলা
ডয়চে ভেলে জানায়, তালেবানের বিরুদ্ধে বড় আকারের সাফল্য দাবি করেছে আফগান সেনাবাহিনী। রোববার দুটি টুইট করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কান্দাহারে বিমান হামলা চালিয়ে তালেবান ঘাঁটি ধ্বংস করা হচ্ছে। আফগান সেনার দাবি, অন্যত্রও তালেবান ঘাঁটির ওপর বিমান হামলা চালানো হয়েছে। কয়েক শ’ তালেবানের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে আফগান সেনার বিমান হামলা বন্ধ করতে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে তালেবান। কান্দাহার বিমানবন্দরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
রোববার পর পর দুটি টুইট করে আফগান প্রশাসন। তার মধ্যে প্রথম টুইটে তারা একটি ভিডিও শেয়ার করে। যেখানে দেখা যাচ্ছে কান্দাহারের নির্দিষ্ট এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে। আফগান সেনার দাবি, ওই হামলায় দশেরও বেশি তালেবানে উগ্রবাদীর মৃত্যু হয়েছে। উগ্রবাদী শব্দটিই তারা টুইটে ব্যবহার করেছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, যে ভিডিও আফগান সেনা শেয়ার করেছে, তা থেকে স্পষ্ট, কেবল তালেবান নয়, বিমান হামলায় সাধারণ মানুষও প্রাণ হারিয়েছে। তবে আফগান প্রশাসন অভিযোগ মানতে চায়নি।
ওই দিনই আরো একটি টুইট করে আফগান প্রশাসন। সেখানে দাবি করা হয়, গোটা দেশে একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়েছে। সব জায়গাতেই তালেবান ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমাল হামলা চালানো হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ২৫৪ জন তালেবানের মৃত্যু হয়েছে। গজনি, কান্দাহার, হিরাট, হেলমন্দ, কাবুলসহ একাধিক জায়গায় বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে টুইটে।
পাল্টা আক্রমণ করেছে তালেবানও। কান্দাহার বিমানবন্দর লক্ষ্য করে অন্তত তিনটি রকেট ছোড়া হয়েছে। একমাত্র বিমানবন্দর ব্যবহার করেই আফগান সেনা এখন কান্দাহারে ঢুকতে পারছে। বাকি সমস্ত সীমানা তালেবানের হাতে। তালেবান চাইছে বিমানবন্দর ধ্বংস করে আফগান সেনার যাতায়াতের পথ বন্ধ করতে। আমেরিকাসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ দাবি করছে, আফগানিস্তানের অর্ধেকরও বেশি অঞ্চল এখন তালেবানের হাতে। আগে তারা রাজধানীগুলো ঘিরে ফেলেছিল। এবার তারা একের পর এক রাজধানী শহরে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আফগান প্রশাসন এখনো সে কথা মানতে রাজি নয়। তালেবান এতগুলো জায়গা দখল করে ফেলেছে বলে তারা স্বীকার করছে না।


আরো সংবাদ



premium cement