২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে লুটপাটের মহৌৎসব চলছে : বিএনপি

-

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে লুটপাটের মহৌৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ভূমিহীন গরিব মানুষের জন্য নির্মিত ঘর, যা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে সেই ঘর নিয়েও সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয়করণ হয়েছে। সেসব ঘর হস্তান্তরের আগেই বা হস্তান্তরের পর দু-তিন মাস যেতে না যেতেই যেভাবে ধসে পড়তে দেখা গেল তাতেই প্রমাণিত হয় দেশে উন্নয়নের নামে হরিলুট চলছে, লুটপাটের মহৌৎসব চলছে, এ যেন সীমাহীন লুটপাটের স্বর্গরাজ্য।
প্রিন্স বলেন, এই সরকারের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ, আত্তীকরণ এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, এ প্রবাদটি বর্তমানে বাংলাদেশের বেলায় অতি প্রযোজ্য। গরিব ও ভূমিহীন মানুষের ঘর নিয়ে যারা মহাদুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করেছে তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি এবং ক্ষতিগ্রস্ত গরিব ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণ করে পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে বিএনপি।
প্রিন্স বলেন, সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহার উল্লেখ করে গৃহহীন, ভূমিহীন, গরিব ও অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তা শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ ছিল। গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দ তালিকায় নাম ওঠানো হয়েছে। জায়গা-জমি-বাড়িঘরের মালিক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নামও অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের তালিকায় তোলা হয়েছে। এমনকি আওয়ামী সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের উপজেলা-ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কোটা নির্ধারণ রেখে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি খরচে ঘর নির্মাণের প্রকল্প হলেও অনেক স্থানে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এই বরাদ্দ দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের ঘরের নির্মাণসামগ্রী ক্রয়, পরিবহন খরচ, নির্মাণ শ্রমিকদের পারিশ্রমিক, নিয়মিত খাবারের খরচ দিতেও বাধ্য করা হয়েছে। গরিব মানুষদের এই ঘর পাওয়ার আশায় উপজেলা প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা, তাদের সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী-সমর্থক, ঠিকাদারদের পর্যন্ত দফায় দফায় চাঁদা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, এই ঘর নির্মাণের ইট, বালু, সিমেন্ট, রড, কাঠ, রঙ প্রভৃতি সরকারি দলের লোকদের কাছ থেকে চড়ামূল্যে নেয়া হয়েছে। তারা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করায় আজকে প্রকল্পের এই দশা। ঘরপ্রতি ৪০ ব্যাগ সিমেন্ট বরাদ্দের স্থলে ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০-১২ ব্যাগ সিমেন্ট, বাকিটা বালু ও মাটি দিয়ে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘর নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট ধরা পড়লেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা জিরো টলারেন্সের কথা বলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ করে দিয়ে নিজেরাই যে মহাদুর্নীতি করছে সেটি তারা বেমালুম ভুলে যান। জনগণের ভোট ছাড়াই মহাদুর্নীতির মাধ্যমে অনুগত প্রশাসন দিয়ে দিনের ভোট রাতে করে জোর করে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে যে সরকার, তাদের দিয়ে দুর্নীতি রোধ দূরের কথা, দেশ আজ দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
রূপগঞ্জের সেজান ফ্যাক্টরির অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ও অসংখ্য মানুষের আহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, রূপগঞ্জে যেন লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডে অঙ্গার হওয়া নিরীহ শ্রমিকদের এই করুণ পরিণতিতে সমগ্র জাতি হতবাক ও বিমূঢ় হয়ে পড়েছে। গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গতকালই শ্রমিক দলের সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজখবর ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রফিকুল ইসলাম, নাজমুল হাসান, ছাত্র দলের আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement