২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ

হাজার মানুষের জন্য ১টি শয্যাও নেই হাসপাতালে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ সাড়ে ৩টি বেড হাজার জনে; চারটি বেডের জন্য গড়ে একজন সেবিকা বিদ্যমান
-

স্বাস্থ্য খাতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। অথচ হাসপাতালগুলোতে চলছে শয্যাসঙ্কট। দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শয্যা বা বেডের সংখ্যা গড় ০.৬৪টি। অর্থাৎ একটিরও কম। একটি বেডের জন্য হাজার মানুষ যুদ্ধ করছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য হাসপাতালে গড়ে সাড়ে তিনটি বেড থাকতে হবে। অন্য দিকে হাসপাতালগুলোতে গড়ে চারটি বেডে একজন সেবিকা কাজ করছে। এ ছাড়া বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ২৭.৮২ শতাংশে কোনো ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন নেই। এসব তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তারা বলছে, পর্যাপ্ত বেড না থাকায় সঠিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটরিয়ামে গতকাল সোমবার বিবিএসের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘সার্ভিস অ্যান্ড স্টাডিজ রিলেটিং টু জিডিপি রিবেইজিং ২০১৫-১৬’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০১৯-এর ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। অতিথি ছিলেন বিবিএসের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ মেসবাহুল আলম ও শশাঙ্ক শেখর ভৌমিক। জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল খালেক।
বিবিএস বলছে, গত ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা হলো এক লাখ পাঁচ হাজার ১৮৩টি। আর সরকারি হাসপাতালগুলোয় বিদ্যমান শয্যা সংখ্যা বিবেচনায় প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা প্রায় শূন্য দশমিক ৩২টি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় বিদ্যমান শয্যা সংখ্যা বিবেচনায় প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা প্রায় শূন্য দশমিক ৬৪টি। ফলে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল একত্রে বিবেচনা করলে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য শয্যা সংখ্যা মাত্র শূন্য দশমিক ৯৬টি, যা একটিরও কম। ডব্লিউএইচও’র সুপারিশ অনুযায়ী, সাড়ে তিনটির ধারে কাছেও নয়।
জরিপে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০১৮ পর্যন্ত বেসরকারি খাতে নিবন্ধিত স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৯৭৯ টি। এর মধ্যে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ১০ হাজার ২৯১টি বা ৬০.৬১ শতাংশ। হাসপাতাল হলো চার হাজার ৪৫২টি বা মোট নিবন্ধনের ২৬.২২ শতাংশ এবং মেডিক্যাল ক্লিনিক হলো এক হাজার ৩৯৭টি বা ৮.২৩ শতাংশ। অন্য দিকে ডেন্টাল ক্লিনিকের সংখ্যা ৮৩৯টি বা ৪.৯৯ শতাংশ।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসব হাসপাতালে রাজস্ব এসেছে ১০ হাজার ৫৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পরের বছর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই আয় ১৫.৬৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২ হাজার ২২৫ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই আয়ের মধ্যে ৭৫.১২ শতাংশ চিকিৎসাসেবা থেকে, প্রায় ১৬ শতাংশ রোগ নির্ণয় থেকে, ফার্মেসি থেকে ৮.১১ শতাংশ এবং ক্যান্টিন থেকে প্রায় ১ শতাংশ।
বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৬৮ হাজার ৫৮০ জন কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। এদের মধ্যে তিন লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন বা ৮৫.৭২ শতাংশ পূর্ণকালীন এবং ৫২ হাজার ৬৩৯ জন বা ১৪.২৮ শতাংশ খণ্ডকালীন। নিয়োজিত জনবলের মধ্যে হাসপাতালে ৫৬.৩২ শতাংশ, রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে ৩৬.৭৯ শতাংশ এবং ক্লিনিকে ৫.৭ শতাংশ। আর ডেন্টাল ক্লিনিকে নিয়োজিত জনবল ১.১৯ শতাংশ বলে জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, প্রতি একজন চিকিৎসকের (ডেন্টাল সার্জন বাদ দিয়ে) বিপরীতে মাত্র ০.৮৫ জন সেবিকা রয়েছে। ডেন্টাল সার্জনদের অন্তর্ভুক্ত করলে, প্রতি একজন চিকিৎসকের বিপরীতে সেবিকার সংখ্যা শূন্য দশমিক ৮৩ জন। শয্যা ও সেবিকার অনুপাত, প্রতি ৩.৪৭টি বা প্রায় চারটি শয্যার জন্য একজন সেবিকা দায়িত্ব পালন করছেন।
বিবিএস বলছে, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭২.১৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। ২৭.৮২ শতাংশ হাসপাতালে এই ধরনের কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। আর ২৩.৩৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা-বর্জ্য শোধনের সুযোগ-সুবিধা নেই। হাসপাতালে প্রতিদিন শয্যাপ্রতি চিকিৎসা-বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ ১.১৪ কেজি। আর বছরে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মোট উৎপাদিত চিকিৎসা-বর্জ্যরে পরিমাণ ৬৭ হাজার ১৯৮ দশমিক ৩ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৬৫ দশমিক ১৭ শতাংশ উৎপাদিত হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। প্রায় ৩৫.৭১ শতাংশ হাসপাতাল কোনো ধরনের পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই খোলা জায়গায় কঠিন বর্জ্য ফেলছে। অন্য দিকে ১৫.৯৫ শতাংশ হাসপাতাল তরল বর্জ্য মাটিতে ফেলছে এবং ৩৫.৫১ শতাংশ হাসপাতাল তরল বর্জ্য শোধন করে এবং ৪২.৫৯ শতাংশ হাসপাতাল শোধন না করে নদী, নালা ও খালে ফেলছে।
তথ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিসংখ্যান সচিব বলেন, আমাদের বেসরকারি খাতে এখন অনেক হাসপাতাল হয়েছে। তবে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিতর্ক আছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement