২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর রাজধানীতে ফলন বিপর্যয়

চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত
বৈরী আবহাওয়ায় লিচুর রাজধানীতে ফলন বিপর্যয় -

লিচুর রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার লিচু আবাদে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। শুরুতে মাত্র ২০ ভাগ গাছে মুকুলের দেখা মিলেছিল। সে ২০ ভাগ গাছের লিচুও বৈরী আবহাওয়া এবং প্রচণ্ড তাপদাহে, ঝরে ১০ ভাগে নেমে এসেছে। এমন বিপর্যয়ের মুখে এ অঞ্চলের লিচুচাষিদের কখনো পড়তে হয়নি। ফলে এবার লিচুর বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবার গাছে মুকুল আসেনি। সামান্য কিছু গাছে মুকুল এলেও প্রচণ্ড তাপদাহে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈশ্বরদী পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তিন হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে লিচুগাছ রয়েছে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৫০০টি। বিঘাপ্রতি ২০টি থেকে ১৫টি গাছ অর্থাৎ এক একর জমিতে ৪২টি, এক হেক্টর জমিতে ৯০টি গাছ হয়। এসব এলাকায় লিচু আবাদ করা কৃষকের সংখ্যা ৯ হাজার ৬২০ জন। বাণিজ্যিক আকারে বাগান দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়িতে আবাদ রয়েছে ৫৫০ হেক্টর। ফলন্ত আবাদি জমির পরিমাণ দুই হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমি। লিচু উৎপাদন জমির পরিমাণ দুই হাজার ৮৩৫ হেক্টর। অফলন গাছ রয়েছে ৫৫ হাজার ৫৫০টি। ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর, মানিকনগর, জয়নগর, মিরকামারি, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাধা, সদর উপজেলার চকউগ্রগড়, জোয়ারদহ, হামিদপুর, জয়কৃষ্ণপুর, উগ্রগড়, মৌগ্রাম, আটঘরিয়া উপজেলার গোপালপুর, ত্রিমোহন, পরানপুর, হিদাশকোল, চাচকিয়া, ষাটগাছা, ডেঙ্গারগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে সারিসারি এমন লিচুর বাগান। সারা দেশের লিচুর চাহিদার একটি বড় জোগান আসে এসব গ্রাম থেকে।
সাধারণত বছরে পাঁচ থেকে ৬০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয় এই উপজেলা থেকে। প্রতি বছর লিচুর বাম্পার ফলন হলেও এবার দেখা দিয়েছে বিপরীত চিত্র। এবার ১০ ভাগের এক ভাগ লিচুও উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে এই এলাকার লিচু চাষি এবং ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার লিচুর ভরা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি অতিক্রম করে, দুপুর নাগাদ ৩৬ থেকে ৩৮-৪০ ডিগ্রির মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। এই আবহাওয়া লিচুর জন্য প্রতিকূল বলে বিবেচিত। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কাক্সিক্ষত মুকুল আসেনি। যাও বা এসেছে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাও ঝরে পড়েছে।
আওতাপাড়া লিচুচাষি আব্দুল গফুর জানান, তার ২০ বিঘার ওপরে একটি লিচু বাগান আছে। প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এ বছর তার বিঘা দুই জমিতে লিচু এসেছে। তাও প্রচণ্ড খরায় ঝরে পড়েছে। এ বছর তিনি সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন। ফলে এ মৌসুমে তার বাগান পরিচর্যার টাকাও উঠবে না।
ঈশ্বরদীর ছলিমপুরের লিচুচাষি শামসুল বলেন, তার ৫০ বিঘার ওপর লিচু বাগান। অথচ এবার তার আত্মীয়স্বজনকে দেয়ার মতো লিচুও গাছে আসেনি।
ঢাকার পাইকারি লিচু ব্যবসায়ী মহিরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর মে মাসের মাঝামাঝিতে ট্রাক ট্রাক লিচু তিনি ক্রয় করতেন। কিন্তু এ বছর তার ব্যবসায় চরম মন্দা। বাগানে লিচু নেই। হাটেও লিচুর দেখা মিলছে না। যা মিলছে তাও অনেক দামে।
এ ব্যাপারে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে বোম্বাই লিচু গাছে মুকুল আসে। কিন্তু এবারে মধ্য জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ কমে যাওয়ায় মুকুল কম অঙ্কুরিত এবং বেশি পরিমাণ পাতা গজিয়েছে। ফলে লিচুগাছে কম ধরেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কাক্সিক্ষত মুকুল আসেনি। এটি প্রাকৃতিক কারণ। এখানে কৃষক বা কৃষি বিভাগের কিছু করার নেই। এ বছর ঈশ্বরদীতে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। কিন্তু ফলন হয়েছে সে তুলনায় অনেক কম।


আরো সংবাদ



premium cement